শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের ৩৮৭তম সভা অনুষ্ঠিত অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে দ্রুত জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে -আমান শ্রীমঙ্গলে নারী চা শ্রমিক-কর্মজীবী নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য নিয়ে সংলাপ কালীগঞ্জে সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম : আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বগুড়ার শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত-নিহতদের স্মরণসভা দেশবিরোধী চক্রান্তকারীদের দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়া হবে-রেজাউল করিম বাদশা দুর্গাপুরে আইনজীবীদের মানববন্ধন কয়রায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণ সভা ও সাংস্কৃতিক ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মুন্সীগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধের প্রতিবাদে জলঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ দুর্গাপুরে শেষ হলো দুইদিন ব্যাপি কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ

ঢাকা ওয়াসা: এক লাফে ওয়াটার এটিএমের পানির দাম বাড়লো ৭৩ শতাংশ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১ আগস্ট, ২০২৩

কম সময়ের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ঢাকা ওয়াসার ওয়াটার এটিএম বুথ প্রকল্প। ঢাকার যেসব এলাকায় পানির মান খারাপ সেসব এলাকায় বিশুদ্ধ এ পানির চাহিদা ব্যাপক। স্বল্প খরচে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে যৌথভাবে এ প্রকল্পের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাওয়ার্ড ফর করপোরেট এক্সিল্যান্স (এসিই) পুরস্কার পেয়েছিল ড্রিংকওয়েল। এ পুরস্কারের আট মাসের মাথায় কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ওয়াটার এটিএমের পানির দাম ৭৩ শতাংশ বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন গ্রাহকরা।
গ্রাহকের অভিযোগ, ঢাকা ওয়াসা বাসাবাড়িতে যে পানি সরবরাহ করে তা বিশুদ্ধ নয়। গ্যাস পুড়িয়ে পানি ফুটিয়ে পান করতে হয়। এমন অবস্থায় ওয়াটার এটিএম বুথের বিশুদ্ধ পানি জনপ্রিয় হয়। কিন্তু এক লাফে পানির দাম ৭৩ শতাংশ বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই।
ঢাকা ওয়াসার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে’ ওয়াটার এটিএম বুথের পানির দাম বাড়ানো হয়েছে। মঙ্গলবার (১ আগস্ট) থেকে প্রতি লিটার পানির মূল্য ৭০ পয়সা ধার্য করা হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হবে ১০ পয়সা ভ্যাট। কিন্তু বৈশ্বিক অবস্থা বলতে ওয়াসা ঠিক কি বোঝাতে চেয়েছে, তা স্পষ্ট করে বলতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। সোমবার (৩১ জুলাই) পর্যন্ত এই পানি ভ্যাটসহ ৪৬ পয়সায় বিক্রি হয়েছে।
জানতে চাইলে ওয়াটার এটিএম বুথ প্রকল্পের পরিচালক ও ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী রামেশ্বর দাস মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বলেন, শুরুতে শহরের নি¤œবিত্ত শ্রেণির লোকজনকে বিশুদ্ধ পানি দেওয়ার লক্ষ্যে এটিএম বসানো হয়েছিল। এটিএমের পানির মানের কারণে এখন সব শ্রেণির লোকজনই গ্রাহক হচ্ছেন। এই পানির গুণগত মান বোতলজাত পানির মতোই। কিন্তু ঠিক কী কারণে পানির দাম ৭৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে তা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন রামেশ্বর দাস। তিনি বলেন, ওয়াটার এটিএম বুথের পানির দাম বাড়ানোর বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসীম এ খান। এই পানির দাম বাড়ানোর সঙ্গে আমার প্রকল্পের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। পরে ওয়াসার এমডি তাকসীম এ খানের মোবাইল ফোনে একাধিকার কল দিলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াসার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ওয়াটার এটিএম বুথ স্থাপন ও পরিচালনায় ব্যয় বাড়ছে। তাই পানির দাম বাড়াতে হচ্ছে। তবে এক লাফে প্রতি লিটার পানিতে ৩৪ পয়সা বাড়ানোর কোনো দরকার ছিল না। ২০২২ সালের ১৮ নভেম্বর রাজধানীবাসীকে কম খরচে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে যৌথভাবে ওয়াটার এটিএম বুথ স্থাপনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাওয়ার্ড ফর করপোরেট এক্সিল্যান্স (এসিই) পুরস্কার পেয়েছে ড্রিংকওয়েল। জলবায়ুসহিষ্ণুতা বিভাগে এ পুরস্কার পায় সংস্থাটি।
মহাখালীর আইপিএইচে ঢাকা ওয়াসার ওয়াটার এটিএম বুথ থেকে নিয়মিত পানি নেন গৃহিণী আফরোজা। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এই বুথ থেকে পানি নিয়ে ফেরার সময় কথা হয় তার সঙ্গে। এসময় তিনি পানির দাম প্রতি লিটারে ৩৪ পয়সা বাড়ার খবর জানেন না বলে জানান।
আফরোজা বলেন, ওয়াসা বাসাবাড়িতে যে পানি সরবরাহ করে তা সরাসরি পান করা যায় না। ফুটিয়ে পান করতে গেলেও অনেক সময় পানির ওপর ফেনা ওঠে। এ পানি ফোটাতেও গ্যাসের বিল দিতে হয়। এছাড়া পানি বিশুদ্ধ করতে সময় ব্যয় হয় এবং ঝুঁকিও থাকে। তাই দুই বছর ধরে ওয়াসার ওয়াটার এটিএম বুথ থেকে বিশুদ্ধ পানি পান করছি। বোতলজাত পানির মতোই স্বাদ। তবে এখন যদি পানির দাম লাফিয়ে বাড়তে থাকে তা নিম্ন আয়ের মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যাবে। একই বুথ থেকে পাঁচ লিটার করে আলাদা দুটি বোতলে পানি নিচ্ছিলেন মিনহাজ উদ্দিন। পানির দাম বাড়ায় তিনিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মিনহাজ বলেন, ওয়াসা একটি সেবামূলক সংস্থা। প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা ভর্তুকি দেয় সরকার। এখন এক লাফে এত পরিমাণ দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই।
যেভাবে ওয়াটার এটিএমের পানি বিক্রি শুরু: ঢাকা ওয়াসার পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা পানি নিয়ে রাজধানীবাসীর অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এমন অভিযোগের মধ্যে ২০১৭ সালের মে মাসে নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে কম দামে নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে রাজধানীর মুগদায় প্রথম ওয়াটার এটিএম বুথ স্থাপন করা হয়। এ কাজের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ড্রিংকওয়েলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় ওয়াসা। পরে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী শহরের বিভিন্ন জায়গায় তারা বুথ বসানো শুরু করে। ভূগর্ভ থেকে উত্তোলিত পানি পরিশোধনের মাধ্যমে বিক্রি করা হয় এসব এটিএম বুথে।
ঢাকা ওয়াসা সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ২৯৫টি ওয়াটার এটিএম বুথ স্থাপন করেছে ঢাকা ওয়াসা ও যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ড্রিংকওয়েল। ব্যাংকের এটিএম কার্ডের মতো একটি আরএফআইডি কার্ড মেশিনের নির্দিষ্ট স্থানে রাখলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেরিয়ে আসে বিশুদ্ধ খাবার পানি। কার্ডে ১০ টাকা থেকে ৯৯৯ টাকা পর্যন্ত রিচার্জ করতে পারবেন গ্রাহক। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পানি সংগ্রহ করা যায়। এই সেবা পেতে পানির এটিএম বুথের গ্রাহকসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এখন এটিএম বুথের কার্ডের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় দুই লাখ ৯০ হাজার। প্রতিদিন গড়ে ১৪ লাখ লিটার পানি বিক্রি হচ্ছে।
২০১৯ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায় বলা হয়, ঢাকা ওয়াসা পাইপলাইনের মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহ করতে ব্যর্থ। ৯১ শতাংশ গ্রাহক খাবার পানি ফুটিয়ে পান করেন। পানি ফুটিয়ে পানের উপযোগী করতে বছরে ৩২২ কোটি টাকার গ্যাস খরচ হয়। সম্প্রতি পুরান ঢাকার ওয়ারী, নাজিরাবাজার, লালবাগ ও হাজারীবাগ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ওয়াটার এটিএম বুথগুলো মূলত ওয়াসার পানির পাম্প সংলগ্ন এলাকায় বসানো হয়েছে। গভীর নলকূপ থেকে পানি তুলে নির্ধারিত পাত্রে রাখা হয়। সেখানে পানি পরিশোধন করে তা এটিএমে আসে। পরে কার্ড ঢোকানোর পর নির্ধারিত বোতাম চাপলে পানি পড়তে শুরু করে। পানি নেওয়া শেষে কার্ডটি সরিয়ে ফেললে পানি আসাও বন্ধ হয়ে যায়। প্রতি লিটার পানি ভ্যাটসহ বিক্রি হতো ৪৬ পয়সায়। তবে শুরুতে এই পানি প্রতি লিটারের দাম ৪০ পয়সা করে ছিল। তখন গ্রাহককে কোনো ভ্যাট দিতে হতো না।
পানির দামের সঙ্গে ৬ পয়সা ভ্যাট যোগ করার বিষয়ে গত বছরের নভেম্বরে ওয়াটার এটিএম বুথ প্রকল্পের পরিচালক ও ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী রামেশ্বর দাস বলেছিলেন, তারা ৪০ পয়সা লিটারেই পানি বিক্রি করছেন। যে ৬ পয়সা বেশি নেওয়া হচ্ছে, তা সরকার ভ্যাট হিসেবে কেটে নিচ্ছে। আশাকরি ভবিষ্যতে এই পানির দাম আর বাড়বে না।
৫০০ এটিএম বসানোর পরিকল্পনা: ওয়াসা ও ড্রিংকওয়েল সংশ্লিষ্টরা জানান, যেসব এলাকায় পানির সংকট আর পানিতে গন্ধ ও দূষণ রয়েছে, সেসব এলাকায় গ্রাহক বেশি। এর মধ্যে মুগদা, কদমতলা, মিরপুর, ফকিরাপুল ও পুরান ঢাকা অন্যতম। প্রতিনিয়ত এটিএম বুথের গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে। ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০০টি এটিএম বুথ চালুর বিষয়ে ড্রিংকওয়েলের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
গ্রাহক হওয়া যাবে যেভাবে: যে কোনো একটি ওয়াটার এটিএম বুথে গিয়ে দায়িত্বরত অপারেটরকে বললেই কার্ড পাওয়া যায়। এজন্য সঙ্গে নিতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি ও ৫০ টাকা (ফি)। এটিএম কার্ডে একবারে সর্বোচ্চ ৯৯৯ টাকা আর সর্বনিম্ন ১০ টাকা রিচার্জ করে পানি নেওয়া যায়। কার্ড রিচার্জও করেন বুথ অপারেটর। তবে এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও রিচার্জের পদ্ধতি চালু হয়েছে।- জাগো নিউজ




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com