বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫১ অপরাহ্ন

দেশে যেন মামলা থেকে মামলা ডিম পাড়ছে : রিজভী

ইকবাল হোসেন:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৪ আগস্ট, ২০২৩

বিএনপি নেতাকর্মীদের জেলগেট থেকে আটক ও পুনরায় অন্য মামলা গ্রেফতার করা হচ্ছে এমন অভিযোগ করে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এ যেন মামলা থেকে মামলা ডিম পাড়ছে। মনে হচ্ছে মাটির নিচে থেকে মামলা উঠে আসছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় নয়া পল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার এখন মধ্যযুগীয় ‘ডাইনি শিকার’ নীতি গ্রহণ করেছে। মধ্যযুগে ইউরোপে যেমন নারীদেরকে ডাইনি হিসেবে অভিহিত করে হত্যা ও জুলুম, নির্যাতন করা হতো ঠিক তেমনি বাংলাদেশে বিএনপি এবং গণতন্ত্রকামী বিরোধী দল ও ভিন্ন মতের মানুষদের অবরুদ্ধ করে নানা কায়দায় নারকীয় নির্যাতন চালানো হচ্ছে। যতই এক দফার আন্দোলন দ্রুতগতিতে ধাবিত হচ্ছে, ততই শেখ হাসিনার আগ্নেয়গিরির অগ্নুদগমের ন্যায় ক্রোধাগ্নি জ্বলে উঠছে। তিনি বাংলাদেশকে বিরোধীদল শুণ্যপ্রান্তরে পরিণত করতে চান। এই কারণেই ‘৭৫ এর বাকশালের সুযোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে শেখ হাসিনার নব্য বাকশালী শাসনে দেশ এক সর্বগ্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এদের প্রলয়ংকারী দুঃশাসনের আঘাতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সকল বৈশিষ্ট্যকে মুছে দেয়া নিশ্চিত করতেই আবারো বিরোধী নেতাকর্মীদেরকে গায়েবি মামলায় গ্রেফতার ও কারান্তরীণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী ‘গণতন্ত্রের মা’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী এবং দেশনায়ক তারেক রহমান ও তার সহধর্মিনীকে সাজা দেয়ার পরেও নিজেরা স্বস্তি পাচ্ছে না, অজানা আতঙ্কে ভুগছে। তাদের গদি এখন নড়বড়ে অবস্থায়, যেকোনো সময় হুড়মুড় করে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় গুম, গ্রেফতার এবং জামিন না দিয়ে কারাগারে আটকিয়ে রাখার মতো অমানবিক আচরণে লিপ্ত রয়েছে। আওয়ামী লীগ কখনোই সদিচ্ছাপ্রসূত রাজনৈতিক কর্মকা- করেনি। ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় এসেই ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য নিজেদেরকে নানামূখী চক্রান্তে নিয়োজিত রাখে। ইতোমধ্যে বিএনপির কর্মসূচিতে বিপুল লোক সমাগম হওয়ায় অবৈধ সরকার বিচলিত হয়ে গভীর চক্রান্তে মেতে উঠেছে। একদিকে রাষ্ট্রশক্তি দিয়ে বিরোধী দলের কর্মসূচিকে নৃশংস পন্থায় বানচাল করা, অন্যদিকে পর্দার আড়ালে গণতন্ত্রের সর্বশেষ নাম নিশানা মুছে দিতে চলছে সর্বনাশা চক্রান্তের নানামূখী রোডম্যাপ। তাই এরা এখন গায়েবি মামলা কিংবা মামলা ছাড়াই গ্রেফতার করার নতুন তামাশা শুরু করেছে। বিভিন্ন এলাকার বিএনপির যেসব নেতৃবৃন্দ জনপ্রিয়, বারবার সকলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন এবং আগামী নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন এ ধরনের নেতৃবৃন্দকে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাতে গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলায় জড়ানো হচ্ছে। এটি বিএনপির জনপ্রিয় নেতৃবৃন্দকে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের স্বীয় উদ্দেশ্য হাসিলে অবৈধ সরকারের একটি হীন কৌশল। কিন্তু বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর পাতা ফাঁদে কেউ পা দিবে না এমনটা জানিয়ে বিএনপি মুখপাত্র বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী মানুষের অঙ্গীকার কখনোই নিস্ফল হবে না।
তিনি বলেন, এই নিষ্ঠুর সরকার ক্ষমতায় থাকলে জাতির দুর্দিন কখনোই শেষ হবে না। চরম মুদ্রাস্ফিতিতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা থাকছে না। মধ্য ও নি¤œ আয়ের মানুষরা নিজেদের আয় দিয়ে পেট ভরানোর মতো খাবার কিনতে পারছে না। সারাদেশেই এক ধরনের দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করছে। তথাকথিত উন্নয়নের ভেল্কিবাজিতেও ক্ষুধার্ত মানুষের আহাজারি আড়াল করতে পারছে না সরকার। তাই প্রতিবাদী রাজনৈতিক কর্মসূচিতে রক্ত ঝরানো হচ্ছে, করা হচ্ছে বেপরোয়া গ্রেফতার। মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীরা বাড়ি-ঘর, এলাকাছাড়া। আজ দুপুর ১টার সময় বিএনপির বানিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদসহ সাতজন নেতাকর্মী সরকারের চলমান হামলা, গ্রেফতার ও জুলুমের সর্বশেষ শিকার। তাদেরকে অন্যায়ভাবে আজ ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। গ্রেফতার, হিংসা ও হানাহানি দিয়ে অবৈধ সরকার নিজেদের অনাচারগুলো ঢাকতে চায়। শেখ হাসিনা যেহেতু অকৃত্রিম নিপীড়ক, তাই তিনি সারাক্ষণ পথের কাঁটা দুর করতেই ব্যস্ত রয়েছেন। যারা গণতন্ত্রের পক্ষে, যারা আইনের শাসনের পক্ষে, যারা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পক্ষে, যারা ন্যায় ও সত্যের পক্ষে তাদেরকেই তিনি পথের কাঁটা বলে মনে করেন। এ সময় তিনি বিএনপির বানিজ্যবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা-৪, ৫ আসন থেকে বারবার নির্বাচিত সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং তার গাড়িচালকসহ সাতজন নেতাকর্মীকে আটক ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করেন। এছাড়াও সকল মামলায় জামিন লাভের পরেও একটি মিথ্যা পেন্ডিং মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদকে পুনরায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে রাখা হয়। তিনি জেলগেট থেকে বের হওয়ার পথে চক্রান্তমূলক মামলায় নাম জড়িয়ে তাকে পুনরায় গ্রেফতার দেখানো হয়। জামিন লাভের পরও আব্দুস সালাম আজাদকে পুনরায় চক্রান্তমূলক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে আটক রাখার ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানান রিজভী।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com