ঢাকায় বিশ্ববরেণ্য মুফাসসিরে কোরআন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নামাজে জানাজা করতে না দেয়া এবং বিভিন্ন জায়গায় হামলা এবং একজনকে হত্যার প্রতিবাদে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আজ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচির কথা ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৮ আগস্ট সারাদেশে বাদ জুমা দোয়া এবং ২৩ আগস্ট সারাদেশে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন এবং প্রশ্নের উত্তর দেন দলের ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
কেন্দ্রীয় প্রচার-মিডিয়া সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দের স ালনায় রাজধানীর একটি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আ. হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমির আ. রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মাহফুজুর রহমান, দেলোয়ার হোসেন, কামাল হোসেন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির, বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম নেতা, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন, ইসলামী চিন্তাবিদ, কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ১৪ আগস্ট রাত ৮:৪০টায় ইন্তেকাল করেন। বিদেশে অবস্থানরত আল্লামা সাঈদীর এক সন্তানের আসার সময়কে সামনে রেখে ঢাকায় আল্লামা সাঈদীর জানাযার সময় ১৬ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়।
তিনি বলেন, তার ইন্তেকালের সংবাদ শোনার পর হাজার হাজার মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সমবেত হতে থাকে। রাত যত বাড়তে থাকে জনতার উপস্থিতিও তত বৃদ্ধি পায়। এক পর্যায়ে হাসপাতাল চত্বর ও শাহবাগের আশেপাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। জনতার ব্যাপক ভিড় দেখে রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আল্লামা সাঈদীর লাশ সরাসরি পিরোজপুর নেয়ার উদ্যোগ নেয়। সাধারণ জনতা লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের সামনে শুয়ে পড়ে ঢাকায় জানাজা করার সুযোগ দেয়ার দাবি জানাতে থাকে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সমবেত জনতার ওপর মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেড, গুলি ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে পুলিশ হাসপাতালের অভ্যন্তরে গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে হাসপাতালের পরিবেশকে মারাত্মকভাবে কলুষিত করে এবং আতঙ্কজনক পরিস্থিতির অবতারণা করে। পৃথিবীর কোনো যুদ্ধরত দেশেও হাসপাতালের অভ্যন্তরে গুলি, টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের নজির নেই। পুলিশের আক্রমনে হাসপাতালে আগত রোগীদের আত্মীয়-স্বজন ও মসজিদের সাধারণ মুসল্লিরাও আহত হন। এ সময় পুলিশের হামলায় অর্ধ-শতাধিক মানুষ আহত হয়।
তিনি বলেন, আল্লামা সাঈদীর নামাজে জানাযা পিরোজপুরে অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় যাতে জনগণ অংশগ্রহণ করতে না পারে, সে জন্য সরকার প্রশাসনকে ব্যবহার করে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে আশপাশের জেলাগুলোর যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। লোকজনকে আসার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত জানাযা সম্পন্নের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। প্রশাসনের বাড়াবাড়ি অগ্রাহ্য করে লাখ লাখ সাঈদীভক্ত জানাযায় অংশগ্রহণ করে। প্রিয় নেতার শেষ বিদায়ে লাখো জনতা কান্নায় ভেঙে পড়ে। পৃথিবীর কোনো অমুসলিম দেশেও জানাজায় বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটেনি।
তিনি বলেন, সারা দেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আল্লামা সাঈদীর গায়েবানা জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে গায়েবানা জানাজায় অংশগ্রহণকারী মুসল্লিদের ওপর হামলা চালায়। বাংলাদেশর বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রাম মহানগরী যেখানে আল্লামা সাঈদী কয়েক যুগ ধরে কুরআনের তাফসির করে আসছেন, সেই চট্টগ্রামের ইসলাম প্রিয় জনতা ঐতিহাসিক জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদে গায়েবানা জানাজার উদ্যোগ নিলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি ছোঁড়ে। পুলিশের গুলিতে ২০ জনের বেশি লোক আহত হন। পুলিশ প্রায় ৩০ জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। কক্সবাজার জেলা সদর ও চকরিয়া উপজেলায় আল্লামা সাঈদীর গায়েবানা জানাযার আয়োজন করা হলে সেখানেও পুলিশ হামলা চালায়। পুলিশের গুলিতে চকরিয়া পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফোরকান উদ্দিন নিহত হন ও বেশ কয়েক জন আহত হন।
তিনি বলেন যে জানাজা, গায়েবানা জানাজা, নামাজ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক ও ধর্মীয় অধিকার। এতে বাধা দেয়ার অধিকার কারো নেই এবং ইসলামের বিধান বাস্তবায়নের জন্য কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়ারও কোনো প্রয়োজন নেই। পুলিশ কমিশনার গায়েবানা জানাজার অনুমতি দেয়া হবে না মর্মে যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছু নয়। পুলিশ এ বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে এবং পরোক্ষভাবে হট্টগোল তৈরি করার হুমকি দিয়েছে। অধ্যাপক মুজিবুর বলেন, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মজলুম ও নির্যাতিত। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সমগ্র বিশ্বে এক নন্দিত ব্যক্তি। সারা পৃথিবীতে তিনি মহাগ্রন্থ আল কুরআনের বাণী পৌঁছে দিয়ে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। বেশ কয়েকটি দেশ তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত ও সম্মানিত করেছে। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে নিজ এলাকা থেকে পরপর দুবার এমপি নির্বাচিত হন। তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটিসহ জাতীয় সংসদের বেশ কয়েকটি সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। জাতীয় সংসদের অধিবেশনে তিনি একাধিকবার স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের এমন কোনো জেলা নেই, যেখানে তিনি কুরআনের তাফসির করেননি। বহু উপজেলায়ও তিনি কুরআনের তাফসির করেছেন। তার তাফসির শুনে হাজার হাজার যুবক আল্লাহর পথে পরিচালত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের জীবনকে ইসলামের আলোয় আলোকিত করেছে। বহু অমুসলিম ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছে। তিনি হাজার হাজার মানুষের জানাযার ইমামতি করেছেন। অথচ মৃত্যুর পর তার জানাজায় জনগণকে শান্তিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বি ত করা হয়। পুলিশের এ ভূমিকা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।