মাদারীপুরের শিবচরে পানির অভাবে পাট পঁচানোর জন্য জাগ দিতে না পেরে দুশ্চিন্তায় পড়েছে চাষিরা। খালে বিলে পানি না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। বর্ষার ভরা মৌসুমেও খাল-বিলে পানি না থাকায় জলাশয়, ডোবা, পুকুরে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। এতে পাটের গুণগত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৩ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, নদী, মাছ চাষের পুকুর, খাল, বিলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট জাগ দিতে পারছে চাষিরা। উপায় না পেয়ে পাট কেটে ক্ষেতেই ফেলে রাখছে তারা। কেউ কেউ পর্যাপ্ত পানি না পেয়ে নিচু জায়গায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে জাগ দিচ্ছে। পাটের ফলন ভালো হলেও পর্যাপ্ত পানির অভাবে পাটের আঁশ আর সোনালি না থেকে কালো রঙের ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। এতে পাটের বাজারমূল্য কমে যাওয়ার শঙ্কা তাদের।
অনেকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে নছিমন ও ভ্যানবোঝাই করে নদী বা খালে নিয়ে ফেলছে পাট। তবে কিছু কিছু জমির পাট কেটে মাথায় করে খালে, বাড়ির পুকুরে জাগ দিচ্ছে চাষিরা। জমি থেকে অনেক দূরে পাট নিয়ে জাগ দেয়ায় উৎপাদন খরচও বাড়ছে।
কাদিরপুর ইউনিয়নের সামসুল আলম নামে এক কৃষক জানান, চলতি বছর বৃষ্টির পরিমাণ কম হওয়ায় এখনো কোথাও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নেই। খালে সামান্য পানি থাকানয় সেখানে পাট জাগে ফেলতে হচ্ছে।
ইদ্রিস আলী নামের এক কৃষক জানান, পাটচাষে এখন তেমন লাভ নেই। জমি প্রস্তুত করা, বীজ বোপন, সেঁচ দেয়া, সার দেয়া, আগাছা পরিষ্কার করা, পাট কাটা, জাগ দেয়া ও পাট ধোয়া পর্যন্ত যে খরচ হয় তা হিসাব করলে কৃষকদের লোকসানই বলা যায়।
পাটচাষি মোতালেব সরদার বলেন, এবার স্বাভাবিক ফলন হয়েছে। বাজার দর ভালো আছে। কিন্তু পানি না থাকায় পাট কাটা সম্ভব হচ্ছে না। জমি থেকে বিভিন্ন পুকুরে পাট জাগ দেয়ার কারণ পুকুরের মাছ মারা যাচ্ছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পার্থ প্রতিম হীরা বলেন, ‘অন্য বছরের তুলনায় এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি নেই। তাই পাটচাষে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে কৃষকের। উপজেলা কৃষি বিভাগের নির্দেশনায় আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’
শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম জানান, খালে বিলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় কৃষকরা পাট জাগ দেয়া নিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়েছে। জমি থেকে অনেক দূরে বহন করে নিয়ে পাট জাগে ফেলতে হচ্ছে বলে তাদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। পাটের ভালো দাম না পেলে লোকসান হবে কৃষকের। তিনি বলেন, ‘চাষিদের উৎসাহিত করতে আমাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’