মহান আল্লাহর অজস্র সৃষ্টির মধ্যে এক রহস্যময় সৃষ্টির নাম আকাশ। সুনিপুণ আকাশের দিকে তাকালে, একটু চিন্তা করলে মনের গহিনে নানা প্রশ্ন উঁকি দেয়, কে সেই কারিগর? যিনি এ খুঁটিহীন বিশাল আকাশকে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন? আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদের মাথার ওপর নির্মাণ করেছি কঠিন সপ্ত আকাশ এবং তন্মধ্যে স্থাপন করেছি কিরণময় প্রদীপ। আমি পানিপূর্ণ মেঘমালা থেকে প্রচুর বারিপাত করি। যাতে তা দ্বারা উৎপন্ন করি শস্য ও উদ্ভিদ এবং ঘনপল্লবিত উদ্যান।’ (সুরা : নাবা, আয়াত : ১২-১৬) আকাশের রহস্যের শেষ কোথায় তা আল্লাহই ভালো জানেন। বিজ্ঞানীরা এ সপ্তস্তর বা সাত আকাশের পুরুত্ব ও দূরত্ব নিয়ে চিকিৎসা ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁদের ধারণা, এ সপ্তাকাশের প্রথম স্তরের পুরুত্ব আনুমানিক ৬.৫ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার। দ্বিতীয় আকাশের ব্যাস ১৩০ হাজার আলোকবর্ষ, তৃতীয় স্তরের বিস্তার ২ মিলিয়ন আলোকবর্ষ। চতুর্থ স্তরের ব্যাস ১০০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ। পঞ্চম স্তরটি ১ বিলিয়ন আলোকবর্ষের দূরত্বে, ষষ্ঠ স্তরটি অবস্থিত ২০ বিলিয়ন আলোকবর্ষের, আর সপ্তম স্তরটি বিস্তৃত হয়ে আছে অসীম দূরত্ব পর্যন্ত। এগুলো স্রেফ অনুমান মাত্র। কারণ প্রকৃত বাস্তবতার সন্ধান পাওয়া মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কত সময় অযথা নষ্ট হয়, অথচ বান্দা একটু সময় নিয়ে আল্লাহর এ সুনিপুণ আকাশ নিয়ে ভাবে না । তাইতো আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আমি আকাশকে সুরক্ষিত ছাদে পরিণত করেছি। অথচ তারা সেখানকার নিদর্শন থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৩২)
ইমাম ইবনু কাসির (রহ.) বলেন, মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার অর্থ হচ্ছে, ‘আল্লাহ (আসমানসমূহে) যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, তা নিয়ে তারা চিন্তা-গবেষণা করে না।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির, ৫/৩৪১)
ইমাম শাওকানি (রহ.) বলেন, তারা আকাশ ও সৌরজগৎ নিয়ে সেভাবে চিন্তা-গবেষণা করে না, যা তাদের ঈমান আনতে বাধ্য করবে। (তাফসিরে ফাতহুল কাদির, ৩/৪৭৯)
অর্থাৎ তারা হয়তো এগুলো নিয়ে কিছু চিন্তাভাবনা করে, কিন্তু এই চিন্তাভাবনা যদি তাদের ঈমানের পথে না নিয়ে আসে, তাহলে সেই গবেষণার কোনো মূল্য নেই। যেভাবে বিশ্বের বিভিন্ন মহাকাশ সংস্থা সৌরজগৎ নিয়ে রাত-দিন গবেষণা করে চলেছেন, কিন্তু এগুলোর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর প্রতি তারা অবিশ্বাসী রয়ে গেছে। যদিও তাদের অনেকেই মহাকাশ গবেষণা করতে গিয়ে তাওহিদের আলোকিত রাজপথের পথিক হয়ে গেছেন। তাই জ্ঞানীদের উচিত, আকাশের নান্দনিকতা, সুনিপুণ-সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা এবং এর সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। যা মহান রবের পরিচয় জানতে, সৃষ্টির উদ্দেশ্য জানতে, সর্বোপরি মহান রবের অনুগত বান্দা হয়ে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে। জ্ঞানীদের পরিচয় দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘তারা আকাশ ও জমিনের সৃষ্টি বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করে এবং বলে, হে আমাদের পালনকর্তা, তুমি এগুলোকে অনর্থক সৃষ্টি করোনি। মহা পবিত্র তুমি। অতএব, তুমি আমাদের জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচাও।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত ১৯১)
আকাশ ও জমিন শুধু নিগূঢ় রহস্যের কেন্দ্রবিন্দু নয়; রবং মনোহর রূপমাধুরী, অনুপম সৌন্দর্য ও নান্দনিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এই সৃষ্টিরাজি। যার লালিত্য অবলোকন করে প্রশান্ত হয় চিত্ত। বিমুগ্ধতার আবেশে সিক্ত হয় মনোজগৎ। নিঃসীম নীলাকাশ ও দিগন্তপ্রসারী জমিন ক্ষণে ক্ষণে তার রূপ-রং বদলায়। সকালে এক রকম, তো বিকেলে আরেক রকম। দিনে এক রকম, রাতে রূপ পাল্টিয়ে আরেক রকম। এগুলোর পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে এক মহান কারিগরের অসংখ্য নিদর্শন। সে জন্য আকাশ-জমিনসহ আল্লাহর যাবতীয় সৃষ্টিরাজি নিয়ে গবেষণা ও চিন্তা করার কথা বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনে।