আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন নিয়ে বেশ তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি দৌড়ঝাপ শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত দুই মেয়াদের বিপুল বিজয় ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। বিগত নির্বাচনে বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদির বিজয় এসেছিল অনায়াসে। যাকে বলে ‘ল্যান্ডস্লাইড ভিক্টরি’ বা ভূমিধ্বস বিজয়। বিরোধীদলগুলো তার ধারেকাছে ছিল না। এবার সেরকম অনায়াস বিজয় দলটির জন্য একটু কঠিন বলেই মনে হচ্ছে। বিজেপি’র উত্থান ছিল বিস্ময়কর। যে কংগ্রেস দীর্ঘ সময় ভারতকে শাসন করে আসছিল, সেই কংগ্রেস বিজেপি’র উত্থানে একেবারে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে। দলটি যতদিন ক্ষমতায় ছিল, ততদিন ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ নীতি মোটামুটি অক্ষুণ্ন ছিল। উগ্রপন্থা অবলম্বন কিংবা মুসলমানদের ভারতের মাটি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য বিশেষ কোনো আইন করেনি। ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার উদগ্র বাসনা কিংবা উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর আস্ফালন বিজেপি’র শাসনামলের মতো ছিল না। ২০১৪ সালে যখন উগ্র হিন্দুত্ববাদী মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে, তখন তার স্লোগান ছিল ‘শাইনিং ইন্ডিয়া’। যদিও বিজেপি ২০০৪ সালে এই স্লোগান ব্যবহার করেছিল, তবে তা ভারতের জনগণকে আশ্বস্ত করতে পারেনি। তার কারণ, তার দুই বছর আগে মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ দিয়ে যে ভয়াবহ দাঙ্গা বাঁধিয়েছেন এবং তাতে মুসলমানদের যেভাবে হত্যা, খুন, ধর্ষণ, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছিল, সেই ক্ষত তখনো ভারতের জনগণের মন থেকে মুছে যায়নি। সে সময় নির্মম ও ভয়াবহ মুসলমান নিধনযজ্ঞের কারণে মোদি আদালতে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র তার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছিল। তবে মোদি তাতে থেমে যাননি। তার শাইনিং ইন্ডিয়া স্লোগান আঁকড়ে থাকেন। দশ বছর পর কৌশল পরিবর্তন করে মুসলমানদের আস্থা অর্জনে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আশ্বস্ত করেছিল। এর কারণ ছিল, সে সময় ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের আচরণ ও শাসনের প্রতি মুসলমানরা বেশ বিরক্ত ছিল। তারা একটা পরিবর্তন চেয়েছিল মোদির ভালমানুষি আচরণকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছিল। মুসলমান অধ্যুষিত রাজ্যগুলোতে যেখানে কংগ্রেসের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল, সেসব রাজ্যে বিজেপিকে ভোট দিয়ে মুসলমানরা বিজয়ী করেছিল। সেই মোদিই ক্ষমতায় এসে তার পুরনো হিন্দুত্ববাদী চেহারা এবং মুসলমান বিদ্বেষ দেখানো শুরু করে। মুসলমানদের প্রতি তার যে আশ্বাস ছিল, তা যে স্রেফ ‘ছলনা’ বা একধরনের ‘প্রতারণা’, তা বুঝলেও কিছু করার ছিল না। ফলে মোদির বিগত
দশ বছরের শাসনামলে ভারতের মুসলমানরা জীবন দিয়ে এবং নিপীড়ন ও নির্যাতন সয়ে এমনকি দেশছাড়ার মুখোমুখি হয়ে তার মাশুল দিচ্ছে।
দুই.
গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে মোদি মুসলমানদের হত্যা, নির্যাতন ও বিতাড়ন নীতি সবসময়ই বজায় রেখেছিলেন। গুজরাটকে একটি হিন্দুপ্রধান রাজ্যে পরিণত করার মিশন চালিয়েছিলেন। তবে পুরো ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করা এবং মুসলমানদের ভারতছাড়া করার তার যে সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা, তা শাইনিং ইন্ডিয়া স্লোগানের আড়ালে রেখে কিংবা ‘আস্তিনের নিচে বিষাক্ত সাপ’ লুকিয়ে ২০১৪ সালের নির্বাচনে মুসলমানদের নানা প্রতিশ্রুতিতে ভুলিয়ে-ভালিয়ে ভোট নিয়েছিলেন। ক্ষমতায় আসার পরপরই তিনি মুসলমানদের দিকে সেই সাপ ছেড়ে দেন। উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদসহ তার দলের উগ্রপন্থী নেতারা মুসলমানদের প্রতি তাদের হিংস্রতা উগরে দেয়। খোলা জায়গায় নামাজ পড়া যাবে না, হিজাব পড়া যাবে না, গো হত্যা করা যাবে না, কোরবানি করা যাবে না, আজান দেয়া যাবেনাসহ মুসলমানদের আরও ধর্মীয় নানা আচার-আচরণে বিধিনিষেধ আরোপ করে। এমনকি সামান্য ছুঁতোয় মুসলমানদের পিটিয়ে হত্যার নজির স্থাপন করে। ফ্রিজে গরুর গোশত রাখার দায়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আসামে মুসলমানদের উপর অমানবিক নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। সেখানে এক উগ্র হিন্দু ফটো সাংবাদিকের মুসলমানের মৃত লাশের উপর লাথি মারার দৃশ্য সারাবিশ্বে নিন্দার ঝড় তুলেছিল। ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মোদির শাসন মুসলমানদের জন্য যেন ‘আযাব’ হয়ে আসে। কোনো দেশের সরকার যদি কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের উপর রাষ্ট্রীয়ভাবে বিরূপ আচরণ করে, তখন সে সম্প্রদায়ের মতো অসহায় আর কোনো সম্প্রদায় হতে পারে না। ভারতের দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা এখন এমন অসহায় অবস্থার মধ্য দিয়েই যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে মোদি যেন মুসলমানদের জন্য সাক্ষাৎ ‘যমদূত’ হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন। এমনিতেই ভারতীয় মুসলমানরা বরাবরই রাষ্ট্রের সমান সুবিধা পায় না। সরকারি চাকরিতে তাদের সুযোগ খুবই সীমিত। থাকলেও যত যোগ্যতাই থাক না কেন উচ্চ পদে তাদের সুযোগ হয় না বললেই চলে। মুসলমানদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে মনে করা হয়। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর মুসলমানদের চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো প্রদেশে অলিখিতভাবে মুসলমানদের চাকরির আবেদনের সুযোগ দেয়া হয় না। বিজেপি এতটাই মুসলমান বিদ্বেষী যে, ২০১৭ সালের জুনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে উত্তর প্রদেশে কোনো মুসলমান প্রার্থী দেয়নি। বিজেপি’র ধারণা, মুসলমান প্রার্থী দিলেও তারা বিজয়ী হতে পারবে না। এর কারণ যে, মুসলমানরা মোদি বা বিজেপিকে বিশ্বাস করে না। তবে এর অন্তর্নিত তাৎপর্য হচ্ছে, এ ধরনের বাহানা তাদের দলকে মুসলমানমুক্ত করে একটি হিন্দুত্ববাদী দলে পরিণত করা, যার সাথে পুরো ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্য নিহিত। বিজেপি তার প্রথম শাসনামলে হাতেগোনা কিছু মুসলমান এমপি রেখেছিল। তবে হিন্দুত্ববাদী মৌল চেতনা ধারণ করে দলকে মুসলমানমুক্ত রাখার কৌশল নিয়েছে। আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি কোনো মুসলমান প্রার্থী দেয় কিনা, তাই এখন দেখার বিষয়। বিজেপি যে, একটি মৌলবাদী হিন্দু দলে পরিণত হয়েছে, তা এখন স্পষ্ট। ভারতকে একটি হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার তার মিশন সারাবিশ্ব জানে। বিভিন্ন সময়ে মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ এবং নিপীড়ন, নির্যাতন ও হত্যা নিয়ে পশ্চিমাবিশ্ব এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিবৃতি দিয়েছে। তাতে মোদি সরকার কর্ণপাত করেনি। বরং তার হিন্দু মৌলবাদী নীতি বাস্তবায়নে আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে। দলটির নেতা এবং উগ্রবাদী হিন্দু সংগঠনগুলো ক্রমাগতভাবে মুসলমানদের নিয়ে বিদ্বেষমূলক আচরণ করে যাচ্ছে। যে ভারত একটি বৃহত্তম গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ছিল, তার বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে দিয়েছে। সংবিধানের এই মৌলিক বিষয় উপেক্ষা করে ভারতকে একজাতি, তথা হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার দিকে ঠেলে দিয়েছে। আগামী লোকসভা নির্বাচনে যদি আবারও মোদি সরকার আসে, তাহলে মুসলমানদের প্রতি যে, সে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে এবং তার প্রণীত নাগরিকত্ব আইন বাস্তবায়ন করে ভারতছাড়া করবে, তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। ভারতের মুসলমানদের জন্য আরও কঠিন সময় সামনে রয়েছে।
তিন.
ভারতের জন্য মোদি সরকারের শাসনামলকে পর্যবেক্ষকরা এখন নিপীড়নমূলক ও একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে অভিহিত করছেন। মোদির একচ্ছত্র আধিপত্যবাদ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের মধ্যে হিন্দুত্ববাদের মৌল ধারণা ঢুকিয়ে দিতে সমর্থ হয়েছে। এ কারণে, মোদির প্রতি উগ্রবাদী হিন্দুদের সমর্থন রয়েছে। মোদিকে তারা অনেকটা ‘ধর্মগুরু’ হিসেবে বিবেচনা করছে। তিনি রাষ্ট্রের মৌলিক বৈশিষ্ট্য ও হিন্দুত্ববাদকে একাকার করে ফেলেছেন। যেসব হিন্দু সারাজীবন এ ধরনের চিন্তা করেনি, তাদের মধ্যেও হিন্দুত্ববাদের চিন্তা ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। মোদি সরকার ভারতকে এমনভাবে হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠায় মরিয়া হয়ে উঠেছে যে, সেখানের অনেক প্রগতিশীল ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণের লোকজনের অনেকে তার সাথে তাল মিলাচ্ছে। কেউ কেউ তার দলে যোগ দিয়ে এমপি হয়েছে। মোদি ‘হিন্দুইজম’ প্রতিষ্ঠায় যেমন একনায়কতান্ত্রিক রূপ ধারণ করেছেন, তেমনি অনেক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করে ফেলেছেন। গণতন্ত্র এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলো সংকুচিত করেছেন। ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রÑএমন ধারণা একপাশে সরিয়ে তার হিন্দুত্ববাদ সামনে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। তার দশ বছরের শাসনামলে বিরোধীদলগুলো যে স্বস্তির সাথে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে পারছে, তা নয়। তাদেরকেও বিজেপি’র বাধাবিপত্তির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর থেকে এ বছরের ৩০ জানুয়ারি ভারতের কন্যাকুমারী থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত যে ৪ হাজার ৮০ কিলোমিটার পথে ‘ভারত জড়ো’ নামে ১৪৬ দিনব্যাপী শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে, তাতে বিভিন্ন জায়গায় হামলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মামলা এবং সাজাও দেয়া হয়। পরবর্তীতে আদালত থেকে রাহুল মুক্তি পান। ভারতের আদালতের নিরপেক্ষতা প্রশংসনীয় ছিল, সে আদালতও বিজেপি’র শাসনামলে হস্তক্ষেপের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। একটি উদাহরণ হতে পারে এমন, গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে মোদি অভিযুক্ত হয়েছিলেন। আদালতে মামলাও হয়। তিনি ক্ষমতায় আসার পর তা থেকে মুক্তি পান। কিভাবে তিনি মুক্ত হন, তা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। ভারতে এখন হিন্দু মৌলবাদের যে উত্থান, তা নিয়ে দেশটির সুশীল সমাজ ও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগ থাকলেও সম্ভবত তা জোরেসোরে উচ্চারণের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে ভীতি কাজ করে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের দেশে ইসলামী দলগুলোর শান্তিপূর্ণ রাজনীতি এবং তাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অংশগ্রহণ বাড়লে, ভারতের উদ্বেগের সীমা থাকে না। বাংলাদেশে উগ্র জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে। তার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে বলে বিভিন্নভাবে বিবৃতি দিতে থাকে। অথচ ভারতে যে একটি উগ্র হিন্দু মৌলবাদের উত্থান ঘটেছে, সেদিকে দৃষ্টি দিচ্ছে না। সেখানের মুসলমানরা যে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে অত্যন্ত শঙ্কিত অবস্থায় বসবাস করছে, তা আমলে নিচ্ছে না। উগ্র হিন্দুরা যে প্রশাসনিক সহায়তায় মনিপুর ও বিহারে মুসলমানদের হত্যা, নির্যাতন ও উচ্ছেদ করে দিচ্ছে, তা উপেক্ষা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার তো এ নিয়ে কোনো বক্তব্য-বিবৃতি দেয়নি। বিজেপি ও মোদি এখন আগামী লোকসভা নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য যে তার ‘হিন্দুত্ববাদ কার্ড’ পুনরায় ব্যবহার করবে, তা নিশ্চিত। তবে এবার কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ২৬টি বিরোধীদলীয় জোট ‘ইন্ডিয়া’ (ইন্ডিয়ান ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স) বেশ জোরেসোরে মাঠে নেমেছে। গত ১৮ জুলাই ‘ইউনাইটেড উই স্ট্যান্ড’ স্লোগান নিয়ে এ জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এটি এখন গঠন প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এ জোটে অন্তত ২০টি দলের লোকসভা ও বিভিন্ন রাজ্যসভায় প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। সম্মিলিতভাবে লোকসভায় জোটের আসন ৫৪৩টির মধ্যে ১৪৩টি এবং বিভিন্ন রাজ্যসভায় ২৪৫টির মধ্যে ৯৮টি। এ জোটের প্রধান দলগুলোর মধ্যে রয়েছে, তামিলনাড়ুর এম কে স্টালিনের দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাঝাগাম দল, মমতা ব্যানার্জির অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস, বিহারের নিতিশ কুমারের জনতা দল, মাহারাষ্ট্রের উধাব থেকারের শিবসেনা, মাহারাষ্ট্রের নাগাল্যান্ডের শরদ পাওয়ারের ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি, কেরালার কে এম মহিউদ্দিনের ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগ, জম্মু-কাশমীরের ফারুক আবদুল্লাহর জম্মু-কাশমীর ন্যাশনাল কনফারেন্স, কেরালা-তামিলনাডু-মনিপুরের দোরাইস্বামী রাজার কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া, সিতারাম ইচুরির মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়াসহ আরও অন্যান্য দল। এই জোটকে বলা হচ্ছে, মোদিবিরোধী ‘বিগ ট্যান্ট’ বা বড় তাবু। এই জোট সংগঠিত হয়ে পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করলে বিগত দশ বছরের মধ্যে মোদির জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। পর্যবেক্ষকরার মনে করছেন, গত দুই নির্বাচনে মোদি যে অনায়াস বিজয় লাভ করেছে, ইন্ডিয়া জোটের কারণে এবার তা অত সহজ হবে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই জোট ভারতকে মোদির শাসন বা হিন্দুত্ববাদী ধারা থেকে বের করে তার আদি চরিত্রে ফিরিয়ে আনতে পারবে কিনা। ভারতের পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, যেখানে মুসলমান ও অন্যান্য ধর্মের মানুষরা অপেক্ষাকৃত কম আতঙ্কে বসবাস করত সেই পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পারবে কিনা। তাদের উপর জুলুম, নির্যাতন এবং দেশছাড়া করার নীতি থেকে সরে আসবে কিনা। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই জোট ক্ষমতায় এলে মোদির উগ্র হিন্দুত্ববাদ নীতি থেকে ভারতকে একটি সহনশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার ক্ষেত্রে তা সহায়ক হতে পারে। যেহেতু এ জোটে সব মত ও পথের দল শামিল হয়েছে, তাতে একটি ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ থাকবে।
চার.
বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। একটা সময় ছিল, যুক্তরাষ্ট্র ইসলাম ও মুসলমানদের দমাতে ‘জঙ্গী’ ও ‘মৌলবাদ’ কার্ড ব্যবহার করতো। বিশ্ব রাজনীতির ক্রমাগত পরিবর্তনে সে এখন এ কার্ড ব্যবহার করা বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ, তাতে কোনো লাভ হয়নি। ইসলাম ও মুসলমানদের দমানো যায়নি। উল্টো যুক্তরাষ্ট্র অর্থ ও সৈন্য হারিয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে এবং মুসলমান দেশগুলোর দিকে ঝুঁকেছে। তাদের সহায়তা পাওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে, সউদী আরব, তরস্ক, ইরান ও অন্যান্য মুসলমান দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে, এখন আর ইসলাম ও মুসলমানদের জঙ্গী বলা কিংবা মৌলবাদের উত্থানের কল্পিত তত্ত্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে এসেছে। ইসলামকে ‘মহান ধর্ম’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে। অন্যদিকে, নরেন্দ্র মোদি বৈশ্বিক এই পরিবর্তনকে পাস কাটিয়ে উগ্র হিন্দু মৌলবাদের দিকে ঝুঁকেছেন। হিন্দুত্ববাদের জিকির তুলে ভারতকে বিশ্বে একটি মৌলবাদী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করছে। এটা করছেন শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। মোদির এই এক হিন্দুজাতি নীতি বা ভারতকে হিন্দুস্তানে পরিণত করা যে অখণ্ড ভারতকে বিভক্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তার আভাস ইতোমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য যদি স্বাধীন হতে চায়, তবে তা অস্বাভাবিক মনে হবে না। এখন যেসব উগ্র হিন্দু মোদির হিন্দুত্ববাদ নীতি সমর্থন করছে, তখন ভারতের বিচ্ছিন্নতা তাদের চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছু করার থাকবে না। ভারতের সাধারণ হিন্দু, যারা সব ধর্ম ও বর্ণ মিলে একসঙ্গে বসবাস করতে চায়, তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আগামী নির্বাচনে মোদির হিন্দুত্ববাদকে সমর্থন দিয়ে ভারতকে বিভক্তির মধ্যে ঠেলে দেবে, নাকি ইন্ডিয়া জোটের ‘ইউনাইটেড ইউ স্ট্যান্ড’ বা ‘ঐক্যই শক্তি’র পক্ষে থাকবে। উৎস: দৈনিক ইনকিলাব, অন লাইন
ইমেইল:darpan.journalist@gmail.com