বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ভিন্নমতকে সহ্য করতে না পারা আওয়ামী লীগের জন্মগত রোগ। গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন। জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদকে সাথে নিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন বিএনপির সিনিয়র এই নেতা।
এ সময় এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা দীর্ঘদিন থেকে অভিযোগ করে আসছেন, ভিন্নমত পোষণ করলেই সরকারের নির্যাতন বাড়ে, একজন সরকারি কর্মকর্তা (ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল) আওয়ামী লীগ করে এসেছেন, তিনি ভিন্নমতের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকার অ্যাম্বাসিতে আশ্রয় চেয়েছেন। আওয়ামী লীগ করার পরও ভিন্নমতের কারণে তিনি হয়রানির শিকার হয়েছেন এবং আশঙ্কা করছেন যে তার পরিবারের ওপর নেগেটিভ কিছু হতে পারে। এই ভিন্নমত করলেই কি এই নির্যাতন-নিপীড়ন হবে কিনা আপনার কাছে জানতে চাই।’
জবাবে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এটা আওয়ামী লীগের নতুন রোগ নয়; এটা আওয়ামী লীগের জন্মগত রোগ। তারা এই রোগে আক্রান্ত। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, সমালোচনায় বিশ্বাস করে না, অন্যের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না, তাদের কাছ থেকে এর চেয়ে ভালো আচরণ আশা করা যায় না। আর আজকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আশ্রয় চেয়েছেন, অনেকে তো দেশ থেকে পালিয়ে বিদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সুতরাং এটার নিন্দা করে লাভ নেই। আমাদের এর পতন ঘটাতে হবে, গণতান্ত্রিক একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। সেই লড়াই আমরা আছি।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান বহু দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অগ্রগতির জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে সৃজনশীল এবং উৎপাদনমূখী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য নানাবিধ উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশে মহিলা মন্ত্রণালয় গঠন করেন এবং জাতীয় মহিলা সংস্থাও তিনি গঠন করেন। মহিলাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মধ্যদিয়ে তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলেন। এবং তারা যেন মেধা দিয়ে আত্মনির্ভরশীল থাকতে পারে সে ব্যাপারে নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সেই উদ্যোগের অংশ বিশেষ আজকে দেখবেন পোশাক শিল্পে ৮০ শতাংশ মহিলা কাজ করে। এমনকি অফিস আদালতে একজন দক্ষ সেক্রেটারিয়াল জব করার জন্য টাইপ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন।’
জিয়াউর রহমান দেশের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতেন উল্লেখ করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক মহিলারা যদি চুলার পাড়ে থাকে, তাহলে দেশের উন্নতি করা সম্ভব নয়। প্রত্যেকের জন্য মর্যাদার সাথে কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করা ছিল তার মূল কাজ। নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝেও দেশের জনসংখ্যার ৮৭ শতাংশ মুসলমানদের দেশে সাহসীকতার সাথে তিনিই প্রথম মহিলাদের সামরিক বাহিনীতে নেন, পুলিশ-আনসারে নিয়োগ দেন। তার আমলেই প্রথম মহিলা পাইলট হয়।’
তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন নির্লোভ মানুষ ছিলেন। সামরিক বাহিনীর লোক হয়েও বিনা আন্দোলনে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। বহু দলীয় গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে এবং স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে নিশ্চিত রাখতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করেন। এবং দেশাত্মকবোধের উৎসাহ নিয়ে সারাজাতিকে দেশপ্রেমিক সকল জনগোষ্ঠিকে একই ছাতার নিচে ঐক্যবদ্ধ করেছেন একটি আদর্শগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য। অর্থনৈতিকসহ এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে তিনি শুভ সূচনা করেননি।’