রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কয়েক কোটি টাকার মালামাল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কয়েক শ’ ব্যবসায়ী। গতকাল বৃহস্পতিবার বাজারের সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় সব ব্যবসায়ীরা রাতের বেলা দোকান বন্ধ করে নিজ নিজ বাড়িতে চলে যান। আজ ভোরে অগ্নিকাণ্ডের খবর জানার পর পুড়ে যাওয়া তাদের দোকান এবং মালামাল দেখতে মার্কেটে জড়ো হন ব্যবসায়ীরা।
মার্কেটের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম শরীফ বলেন, মার্কেটে আমার দু’টি দোকান আছে। এর মধ্যে একটি ভাড়ায় এবং অন্যটি আমার নিজস্ব। সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছেও কিছু করতে পারিনি। আমার দোকানগুলো ছাই হয়ে গেছে। আমার দোকানে এক কোটি টাকার কাপড় ছিল। তিনি বলেন, দোকানের ক্যাশ বাক্সে ছয় লাখ টাকা রাখা ছিল, সেটিও এখন চলে গেছে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স হেডকোয়ার্টার্সের (মিডিয়া সেল) গুদাম পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ভোর ৩টা ৪৩ মিনিটের দিকে মার্কেটে ব্যাপক আগুন লাগে এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে ১৭টি দমকল ইউনিট কাজ করছে। সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। সাইট থেকে এখনো ধোঁয়া উড়ছে, দমকলকর্মীদের কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ রিপোর্ট লেখার সময় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ওই মার্কেটে পাঁচ শতাধিক দোকান রয়েছে বলে জানান ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স হেডকোয়ার্টার্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার (মিডিয়া সেল) জানান, ওয়াসা, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ সবাই ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সহায়তা করছে।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে ফায়ার সেফটি ছিল না: ফায়ার সার্ভিস অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো: তাজুল ইসলাম বলেছেন, রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে কোনো ফায়ার সেফটি ছিল না। প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিংয়ের কোনো ব্যবস্থাই ছিল না। ফুটপাত ও সড়কে দোকান থাকায় ও মানুষের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়েছে। পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও ছিল না। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় এ তথ্য জানান তিনি।
তাজুল ইসলাম বলেন, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে আগুন লাগার খবর পেয়ে নয় মিনিটের মাথায় চলে আসি। রাত ৩টা ৫২ মিনিট থেকে আমরা আগুন নির্বাপণের চেষ্টা করি। সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছি। ১৭টি ইউনিটে ১৫০ জন ফায়ার ফাইটার কাজ করেছেন। বিজিবি-পুলিশ-র্যাব-সেনাবাহিনী-নৌবাহিনী আমাদের সহযোগিতা করেছে। তিনি আরো বলেন, এই মার্কেটে কোনো সেফটি প্ল্যান নেই। বার বার মার্কেটটিতে নোটিশ দেয়া হয়েছে এবং বিভিন্নভাবে গণসংযোগ করা হয়েছে। সচেতনতার প্রোগ্রাম যেভাবে আমরা করেছি সেভাবে তারা সাড়া দেয়নি। এই মার্কেটটা কিছুটা বঙ্গবাজার মতো। এখানে ভেতরে অনেক সাবওয়ে হয়েছিল ছোট ছোট কিন্তু ভেতরে যত রাস্তা এবং বাইরের যে ছোট ছোট রাস্তা, পুরোটাই বিভিন্ন মালামালে দিয়ে গাদাগাদি করে রাস্তাটা বন্ধ করা ছিল। পুরো মার্কেট টাইট কলাপসিবল গেট দিয়ে আটকানো ছিল।
তাজুল ইসলাম বলেন, এখানকার নাইটগার্ড যারা ছিলেন তারা বাইরে ছিলেন। তাদের খুঁজেই পাওয়া যায়নি তেমন একটা। ফায়ার ফাইটারদের ভেতরে প্রবেশ করতে বেগ পেতে হয়েছে। তালা ভেঙে এবং কলাপসিবল গেট ভেঙে ভেতরে গিয়ে তারপর আগুন নির্বাপণের চেষ্টা করি। এ মার্কেটের বাইরেও রাস্তাগুলো দখল করা ছিল। দোকানের সামনে ছোটখাটো দোকান আমাদের একটা কালচার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলোর জন্য আমাদের বেগ পেতে হয়। আমরা আসার পরই আগুনের মাত্রা অনেক বেশি দেখেছি। একটা পর্যায়ে মার্কেটের প্রায় চার ভাগের তিন ভাগ সম্পূর্ণ আগুন ধরে যায় এবং আমরা চেষ্টা করি এই মার্কেটের ভেতরে যেন আগুনটা আবদ্ধ থাকে। আমাদের ফায়ার ফাইটাররা সর্বাত্মক চেষ্টা করে আগুনটাকে একটা জায়গায় সীমাবদ্ধ রাখতে পেরেছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা প্রতি সপ্তাহে শনিবারে গণসংযোগ করি। এছাড়াও বিভিন্ন সময় মার্কেটের প্রতিনিধিদের ডেকে অনেকবার আলোচনা করেছি, অনেক ওয়ার্কশপ করেছি। মার্কেটের যারা মালিকপক্ষ তাদের ডেকে আমরা বুঝিয়েছি সচেতনতার প্রোগ্রাম আমরা কিভাবে করব। প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিং উনাদেরই করতে হবে। এই মার্কেটে প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিংয়ের কোনো ইকুইপমেন্টই ছিল না। কোনো ধরনের পানির উৎস ছিল না। আমরা সবচেয়ে বেশি বেগ পেয়েছি পানির উৎসের জন্য। এখানে বিভিন্ন ভবনে পানির উৎস রয়েছে কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। খুব দ্রুত আমাদের পানি শেষ হয়ে যায়। আমরা বিশেষ পানিবাহিত গাড়ি এনে এবং অন্যান্য বাহিনীর সহায়তায় আমরা এই কার্যক্রমগুলো করি। আগুন নেভানোর এত সময় লাগার আরো বড় কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগুন নেভানোর আরেকটি বড় কারণ ছিল মানুষের ভিড়। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের পুলিশ বিজিবি তারা খুবই হিমশিম খেয়েছে। এই ভিড়ের কারণে আমাদের এত সময় লেগেছে। যদিও মানুষ চেষ্টা করতে চায় আমাদের সহযোগিতা করার জন্য কিন্তু আদৌ এটা আমাদের অনেক সময় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তিনি বলেন, আগুনের সূত্রপাত আমরা তদন্ত করে দেখার চেষ্টা করব জানার জন্য। তবে যতটুকু বুঝেছি মুদির দোকানের যেই অংশটি ছিল ওই অংশ থেকে আগুনের সূত্রপাত। আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে যারা ছিল তাদের দু-একজন কিছুটা আহত হয়েছে। এর বাইরে বড় ধরনের হতাহতের তথ্য নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এর আগে বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত ৩টা ৪৩ মিনিটের দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর অগ্নিনির্বাপণ সাহায্যকারী দল।
সাড়ে ৫ ঘণ্টা পর কৃষি মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে: রাজধানীর মোহাম্মদপুরে কৃষি মার্কেটের আগুন সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টার পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রাকিবুল হাসান।
এই মার্কেটের দুজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, এখনো মার্কেটের ভেতরে অনেক দোকানের মধ্যে আগুন জ্বলছে। তারা আগুন পুরোপুরি নেভানোর চেষ্টা করছেন। মালামাল বাঁচানোর শেষ চেষ্টাটুকু তারা করছেন। জানান, মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনো কিছু কিছু জায়গা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। সেখানে পানি দেয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে মার্কেট পরিষ্কারের কাজও শুরু করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে আছে পুলিশ, এনএসআই, র্যাব, বিজিবি, বিমান বাহিনী ও সেনাবাহিনী। ভোররাত ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে আগুন লাগে কৃষি মার্কেটে। ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি টিম আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। আগুনে কয়েকশ দোকান পুড়ে গেছে। তবে আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে এখনো জানা যায়নি।
মোহাম্মদপুর থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) দেবলাল সরকার বলেছেন, আজ ভোর চারটার দিকে আগুন লাগার সংবাদ পান তারা। পরে থানার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর তারা পাননি।