শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::

কেরালার নিপাহ ভাইরাসকে কেন ‘বাংলাদেশ ভ্যারিয়েন্ট’ বলা হচ্ছে?

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ভারতের দক্ষিণা লীয় রাজ্য কেরালায় নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ। এ ঘটনা নিশ্চিত হওয়ার পর রাজ্যটির সরকার সেটিকে ‘বাংলাদেশ ভ্যারিয়েন্ট’ ভাইরাস বলে দাবি করেছে। কেরালার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভিনা জর্জ রাজ্যের বিধানসভায় এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানিয়েছেন। যদিও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বা তাদের সংস্থাগুলো এখনো বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি থেকে বিশেষজ্ঞদের দল এরই মধ্যে কেরালায় পৌঁছেছে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে। অস্থায়ী ল্যাবরেটরি স্থাপন করে এবং বাদুড়দের ওপর জরিপ চালিয়ে তারা ভাইরাসটির প্রকৃতি ও ধরন নিশ্চিত করতে চাচ্ছেন তারা। তবে কেরালা সরকার বলছে, সম্প্রতি তাদের রাজ্যে নিপাহ ভাইরাসের যে ধরন বা ভ্যারিয়েন্টটির প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশ ভ্যারিয়েন্টের মিল রয়েছে। এ জন্যই সেটিকে ওই নামে শনাক্ত করা হচ্ছে।
কেরালার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, নিপাহ ভাইরাসের বাংলাদেশ ভ্যারিয়েন্টের বৈশিষ্ট্য মূলত তিনটি।
প্রথমত, এটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানোর ক্ষমতা রাখে। দ্বিতীয়ত, এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে মর্টালিটি রেট, অর্থাৎ আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার অত্যন্ত বেশি।
তৃতীয়ত, এটি কিন্তু তেমন সংক্রামক নয়। অর্থাৎ সংক্রমণ খুব দ্রুত বেগে ছড়ায় না। কেরালার থোনাক্কালে ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড ভাইরোলজি রাজ্যের নিপাহ আক্রান্ত কেসগুলো নিয়ে এরই মধ্যে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে। সংস্থার প্রধান ই শ্রীকুমার বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) জানিয়েছেন, আক্রান্ত এলাকায় কনট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের কাজ চলছে। তবে বাংলাদেশ থেকে আগত কারও মাধ্যমে কেরালায় ওই ভাইরাস ছড়িয়েছে, সেটি বলা হচ্ছে না। তিনি বলেন, ভাইরাসের ধরনটির সঙ্গে বাংলাদেশ ভ্যারিয়েন্টের প্রচুর মিল রয়েছে বলেই সেটিকে ওই নামে শনাক্ত করা হচ্ছে। কেরালায় গত পাঁচ বছরে এ নিয়ে চতুর্থবার নিপাহ সংক্রমণের ঘটনা ঘটলো। এটি যেন ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, তার জন্য শুরু থেকেই ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে রাজ্য সরকার।
সাতটি গ্রাম ঘিরে রেখেছে পুলিশ: নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে কেরালার কোঝিকোড় জেলার সাতটি গ্রাম প ায়েত এলাকা ঘিরে রেখেছে পুলিশ। সেগুলো হলো আতানচেরি, মারুথোনকারা, তিরুভাল্লুর, কুট্টয়িাডি, কায়াক্কোডি, ভিলিয়াপাল্লি ও কাভিলামপারা গ্রাম প ায়েত।
এলাকাটিকে কনটেইনমেন্ট জোন ঘোষণা করে সেখানকার সব ব্যাংক, সরকারি অফিস, স্কুল-কলেজ, দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও ওষুধ সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।
গত ৩০ অগাস্ট এই এলাকারই এক বাসিন্দা নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। প্রথমে ভাবা হয়েছিল ওই ব্যক্তি হয়তো লিভার সিরোসিস-জনিত কোমর্বিডিটিতে মারা গেছেন। কিন্তু দিনকয়েক পরে তার নয় বছর বয়সী ছেলে নিপাহ সংক্রমণের লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ওই মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধে। বাচ্চা ছেলেটি এখন আইসিইউতে ভর্তি রয়েছে। তাদের পরিবারের আরও একজন সদস্য নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজ্যে কমপক্ষে চারটি নিপাহ সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে বলে কেরালা সরকার নিশ্চিত করেছে, যার সবগুলোই কোঝিকোড় জেলায়। এর মধ্যে দুজন ব্যক্তি মারাও গেছেন। কেরালায় কয়েক বছর ধরেই নিপাহ সংক্রমণ ঘুরেফিরে আসার পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিন্নারাই বিজয়ন স্বীকার করেছেন, পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক। তবে সেই সঙ্গেই তিনি বলেছেন, আমি রাজ্যবাসীকে বলবো, আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। সরকার সবধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। নিপাহ সংক্রমণ যেন পাশের রাজ্যগুলোতেও ছড়িয়ে না-পড়ে সে জন্য কেরালার প্রতিবেশী কর্ণাটক এবং তামিলনাডুও সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে।
কে নিশ্চিত করলো বাংলাদেশ ভ্যারিয়েন্ট? কেরালায় এবার নিপাহ ভাইরাসের যে ধরনটি ছড়িয়ে পড়েছে, সেটিকে বাংলাদেশ ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে মূলত রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন দুটি প্রতিষ্ঠানের চালানো পরীক্ষার ভিত্তিতে। সেগুলো হলো- কোঝিকোড় মেডিক্যাল কলেজ এবং থোন্নাকালে অবস্থিত ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড ভাইরোলজি। তবে রাজ্য সরকার নিজেই স্বীকার করেছে, এ দুটি প্রতিষ্ঠানের কারোরই নিপাহ সংক্রমণ ঘোষণা করার এখতিয়ার নেই।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভিনা জর্জ জানান, আমাদের এ দুটি প্রতিষ্ঠানের নিপাহ ভাইরাস পরীক্ষার মতো উপযুক্ত ল্যাব ও সামর্থ্য রয়েছে। তবে তাদের সংক্রমণ নিশ্চিত করার ক্ষমতা এখনো দেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার। ভারত সরকারের নিয়ম অনুসারে, দেশের কোনো এলাকায় নিপাহ (বা ওই জাতীয় কোনো ভাইরাস) সংক্রমণ হয়েছে, তা ঘোষণা করার এখতিয়ার রয়েছে কেবলমাত্র পুনের ইনস্টটিটিউট অব অ্যাডভান্সড ভাইরোলজির। এটি কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। পুনের ওই ইনস্টিটিউট থেকে বিশেষজ্ঞদের একটি দল এরই মধ্যে কোঝিকোড়ে পৌঁছেছেন এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছেন। এছাড়া তামিলনাডু থেকেও একদল মহামারি বিশেষজ্ঞকে কেরালায় পাঠানো হয়েছে। ভারতীয় পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, কেরালা সরকার রাজ্যে প্রাদুর্ভাব হওয়া নিপাহ ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট পর্যন্ত বিধানসভায় ঘোষণা করে দেওয়ার আগে এই বিশেষজ্ঞদের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করলেই ভালো করতো। সূত্র: বিবিসি বাংলা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com