স্ত্রী সন্তান নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার চালান আসাদ আলী(৫৫)। প্রতিবেশিদের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন। যা আয় হয় তাতে সংসার চলেনা। মাঝে মাঝে দিনমজুরের কাজও করেন। দুই বছর আগে মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে আর্থিক অভাবে পড়ে আব্দুল আজিজের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকায় দশ কাঠা জমি বন্ধক রেখেছিলেন। দুই বছরে ২০ হাজার টাকা লাভ দিয়েছেন। আসল ৩০ হাজার শোধ দিয়েছেন। এবছর টাকা দিতে না পারায় দিনমজুর আসাদ আলীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান সুদ ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ। আজিজের বাড়িতে শনিবার সকাল থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত শিকলে বেঁধে নির্যাতন করা হয় আসাদ আলীকে। প্রায় ৩৬ ঘন্টা শিকল বন্দি থাকার পর রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ভোরে দিনমজুর আসাদ আলীকে উদ্ধার করে পুলিশ। সুদ ব্যবসায়ী আজিজের বাড়ি গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের বাহাদুরপাড়া গ্রামে। এঘটনায় আজিজ ও তার বড় ভাই মাজেদুল এবং পিতা আফজাল প্রামাণিককে অভিযুক্ত করে গুরুদাসপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন আসাদের স্ত্রী শাহানারা বেগম। হযরত আলীর ছেলে কৃষক আসাদ আলীর বাড়ি পার্শ্ববর্তী তাড়াশ উপজেলার ঈশ্বেরপুর গ্রামে। শনিবার সকালে সেখান থেকেই আসাদ আলীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোনোয়ারুজ্জামান জানান, খবর পেয়ে শিকলে বেঁধে রাখা আসাদকে অভিযুক্ত আব্দুল আজিজের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আসামি আজিজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার কৃষক আসাদ জানান, বছর দুয়েক আগে জমি বন্ধক রেখে আব্দুল আজিজের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা নিয়ে ছিলেন তিনি। এবছর ৫০ হাজার টাকা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু অভাব-অনটনে পরে সময় মতো টাকা ফেরত দিতে পারেননি তিনি। শনিবার বিকেলে সুদ ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, দিনমজুর আসাদ আলী কোমরে শিকল পেচিয়ে তালা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে বারান্দার এক খুঁটির সাথে। টাকা দিতে না পারায় সারাদিন সারারাত তাকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়। টাকা দিতে না পারলে হাত-পা ভেঙে ফেলার হুমকিও দেন আজিজ। ভুক্তভোগী কৃষকের স্ত্রী শাহানারা বেগম জানান, শনিবার সকালে তার স্বামী ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ করে বাড়িতে এসে সুদেকারবারি আব্দুল আজিজ ও তার লোকজন চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ঘুমন্ত স্বামীকে বিছানা থেকে জোরপূর্বক তুলে হাত পা বেঁধে ফেলেন। সে সময় টাকার দাবিও করেন। টাকা দিতে না পারায় স্বামীকে চোখের সামনেই টেনে হেঁচরে আব্দুল আজিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শিকলে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। অভিযুক্ত আব্দুল আজিজ জানান, দুই বছর আগে ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখে তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন আসাদ। বার বার তাগিদ দিলেও টাকা পরিশোধ করেননি। একারণে বাড়ি থেকে আসাদ আলীকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।