রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন

গাজীপুরের পূবাইলে বাণিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষ করে ফেরদৌসের চমক

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১ অক্টোবর, ২০২৩

ফল ও সবজি হিসেবে পেঁপে বেশ জনপ্রিয়। শুধু পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য একসময় বাড়ির আঙিনায় চাষ করা হতো, সুস্বাদু এই ফলটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন গাজীপুর মহানগরীর পূবাইলের সাপমারা এলাকার ফেরদৌস মিয়া।
ফেরদৌসসহ তার বন্ধুরা সবাই সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কিন্তু তিনি বেঁচে নিয়েছেন কৃষি কাজ। এলাকার সবাই তাকে স্মার্ট কৃষক বলে ডাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পড়াশোনা শেষে বাবার সঙ্গে ব্যবস্যায় যোগ দেন ফেরদৌস মিয়া। তারপর কাজের জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার চিন্তা করেন এবং কয়েকটি দেশে চেষ্টা করে যেতে না পেরে ২০১৬ সালে নিজের পৈত্রিক জমিতে ১০৫ টি চারা লাগিয়ে যাত্রা শুরু করেন কৃষি কাজের। প্রথমবারেই তিনি সফল হন। আয় করেন ১ লাখ টাকার ওপরে। তারপর তিনি জমি এবং চারার পরিধি বাড়াতে থাকেন। ২০১৭ সালে জমিতে ৫০০ পেঁপে চারা রোপণ করেন, সেখান থেকে তার আয় হয় ৫ লাখ টাকা। বিভিন্ন প্রতিকূলতা পেরিয়েও ধারাবাহিকভাবে এর পরিমাণ বাড়তে থাকে। বর্তমানে ৭বিঘা জমিতে দুইটি ঘেরের পাড়ে সতেরশো সারি-সারি পেঁপে গাছ শোভা পাচ্ছে। প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত ঝুলে আছে অসংখ্য পেঁপে। তার বাগানে, কিং, থাই, দেশি চারা, টপ লেডি জাতের পূর্ণবয়স্ক পেঁপে গাছ রয়েছে। প্রতিটা পেঁপে গাছে প্রায় ৩০-৩৫ কেজি পেঁপে ধরে। সব কিছু ঠিক থাকলে এবারো লাভবান হবে বলে তিনি মনে করছেন।
ফেরদৌস মিয়া এখন এলাকার (মসজিদ, মাদরাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় ফ্রি পেঁপে চারা লাগিয়ে বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। উন্নত জাতের এই সব পেঁপে চারা প্রতিবেশিদের বাড়ির আঙিনায় লাগিয়ে নিজেদের প্রয়োজন মিটানোয় উদ্বুদ্ধ করে নজির স্থাপন করেছেন। নিজের ফলানো পেঁপে বিনামূল্যে সবজি হিসেবে এলাকার এতিমখানায়ও দিচ্ছেন তিনি।
এ বিষয়ে ফেরদৌস মিয়া বাসসকে বলেন, আমি এখন এলাকার বেকার ও শিক্ষার্থীদের পেঁপে চাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কাজ করছি। একজন শিক্ষার্থী যদি লেখাপড়ার পাশাপাশি মাত্র ২৫টি পেঁপে গাছ লাগায় এবং যতœ করে তাহলে সেই গাছ থেকে মৌসুমে ১ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। এ ধরনের উদ্যোক্তা থাকলে আমি নিজে সময় ও শ্রম দিয়ে সফলতা অর্জনে সহযোগিতা করবো। তবে বাগান করার আগে অবশ্যই জাত নির্বাচন ও সঠিক জাতের চারা রোপণ করে পরিচর্যা করলেই সফলতা অনিবার্য। এখন আমি বিভিন্ন এলাকার পেঁপে চাষিদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। মাকড়সা ও ছত্রাক ছাড়া পেঁপে বাগানে তেমন কোনো সমস্যা দেখা যায় না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে পুষ্টিমাণসমৃদ্ধ পেঁপে চাষে ভাগ্য বদলে ফেলা যায়। পেঁপে চাষে অর্থনৈতিকভাবে সরকারি সহযোগিতা পেলে দেশের বেকার সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। শিক্ষিত বেকার যুবকরা যদি চাষে অগ্রসর হয় তাহলে তারাও লাভবান হবে।
বেসরকারি চাকরিজীবী পূবাইল এলাকার বাসিন্দা রফিক মিয়া বাসসকে জানান, ফেরদৌস আমাদের এলাকার গর্ব, পরিশ্রম করলে সাফল্য অর্জন করা যায়। পেঁপে চাষ করে আমাদেরকে দেখিয়ে দিল, তার দেখা দেখি আমরা এখন পেঁপে বাগান করার চেষ্টা করছি।
এ ব্যাপারে গাজীপুর সদরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহিনা সুলতানা বাসসকে বলেন, আমি পেঁপে বাগানটি পরিদর্শন করেছি। ফেরদৌস মিয়া একজন কর্মঠ লোক। তিনি অনেক বছর ধরে পেঁপে চাষ করছেন। তিনি গাজীপুরে পেঁপে চাষে চমক দেখিয়েছেন। পেঁপে চাষে অনেক সময় ভাইরাসের কারণে চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় আবার ব্যবসায়ীরা উন্নত জাত বলে নিন্মমানের চারা কৃষকদের কাছে বিক্রি করেন এতে ফলন খারাপ হয় প্রতারিত হয় কৃষকেরা। কৃষকদের প্রতারণা থেকে বাঁচাতে তিনি নিজেই এখন উন্নত জাতের পেঁপে চারা উৎপাদন করে বিক্রি করছেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com