শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:১৫ পূর্বাহ্ন

রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপের বিকল্প নেই

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৩

সুজনের জাতীয় সংলাপে বক্তারা
চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপের বিকল্প নেই। একমাত্র সংলাপের মাধ্যমেই সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব। যুদ্ধের মধ্যেও সংলাপ হয়। এজন্য প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকে ছাড় দিতে হবে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা কার্যক্রম রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার লক্ষ্যে জাতীয় সংলাপ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সহযোগিতায় আলোচনার আয়োজন করে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশ।
বিচারপতি এমএ মতিন বলেন, ১৯৯০ সালে জাতীয় প্রতিশ্রুতি পালন করলে এসব সংকট হতো না। সংলাপের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে সাবেক বিচারপতি বলেন, সংলাপ হচ্ছে আল্লাহর সুন্নত। তিনি মানুষ সৃষ্টির জন্য সংলাপের আয়োজন করেছিলেন, সেখানেও দ্বিমত ছিল। রাসূলের সুন্নাতও সংলাপ। বদরের যুদ্ধে তিনি সেই সংলাপের আয়োজন করেন। এম এ মতিন বলেন, সংলাপের কাজ হচ্ছে আলোচনা করা ও যা সিদ্ধান্ত হবে তা সবাইকে মেনে নেয়া। সংলাপ করতে হলে সকলের মতামত নিতে হবে। সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। লিডারদের কাজই হচ্ছে শোনা। যাদের নেতৃত্ব দিবেন তাদের কথা শুনতে ও শিখতে হবে। তিনি বলেন, ইলেকশন পঞ্চবার্ষিক আতঙ্ক। এ থেকে উত্তরণ দরকার। এজন্য স্থায়ী আইন করতে হবে। অর্থাৎ বিরোধীদলের লোকদের হয়রানি করা যাবে না।
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. রওনক জাহান বলেন, জনগণের বিষয়ে দুইদলে ঐকমত্য না থাকলেও কিছু বিষয়ে তারা একমত। নিজেদের সুযোগ-সুধিবা নেয়ার বিষয়ে তারা একমত। যেমন: শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি, নিজের এলাকায় উন্নয়ন ফান্ড। সংসদের কোড অব কন্ডাক্ট থাকা দরকার হলেও আর করা হয়নি। তিনি বলেন, ক্ষমতায় যাওয়া নিয়েই রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধ, একবার ক্ষমতায় গিয়ে আর ছাড়তে চায় না। তিন মাসে যারা নিরপেক্ষ নয়, তারা পাঁচ বছরে কিভাবে নিরপেক্ষ হবে? তিনি বলেন, দুইবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না, এটি ভালো হলেও দেখা যাবে পরবর্তীতে তার স্বামী, স্ত্রী, ছেলে বা নাতি প্রধানমন্ত্রী হচ্ছে। ড. রওনক জাহান বলেন, বর্তমান অবস্থায় অনেক লোক লাভবান হচ্ছে। তারা এই ব্যবস্থা রেখে লাভবান হয়ে তা বজায় রাখতে চাচ্ছে। আমাদের দেশে কখনোই পার্মানেন্ট সলিউশন হবে না যতদিন পর্যন্ত না হেরে যাওয়া দল নিশ্চিত হতে পারবে তাদেরকে নিপিড়নের শিকার বা নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে না। সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, সামরিক শাসনের অধীনে ১৯৭০ সালের নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় স্বাধীনতার দিকে যেতে হয়েছে। গণতন্ত্রের বাহন হচ্ছে নির্বাচন। সেজন্যই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ভালো মানুষ। তাদের পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, কিন্তু সেগুলো কি তারা পালন করতে পারছে? গাইবান্ধার নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ায় তা বাতিল করে দেয়ায় প্রশংসা কুড়িয়েছিল। কিন্তু ইসির ফৌজদারী মামলার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তারা মামলা করেনি। অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা হয়নি।
আলী ইমাম মজুমদার বলেন, দুটি পক্ষের অনমনীয় অবস্থান থেকে আলোচনা করা যায় না। বসতে হবে খোলা মনে। রাজনৈতিক দলগুলো বিচক্ষণতার পরিচয় দেবেন বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। তিনি বলেন, ১/১১ হয়েছিল রাজনীতিবিদদের সমঝোতা না হওয়ার কারণে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে এ্যাডভোকেট হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা স্থায়ী সমাধান চাই। মানব সভ্যতায় প্রয়োজনেই আইন হয় আবার বাতিলও হয়। সংকট তৈরির কারণে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ বেড়েছে। তারা কেন আসবে প্রশ্ন রাখেন তিনি। তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে হলে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে যে ধ্বস নেমেছে তা সংস্কার করা ছাড়া সম্ভব না। সংকট তৈরির কারণ সম্পর্কে বলেন, প্রতিনিয়ত আইন তৈরি হলেও আইন প্রয়োগে বৈষম্য করা হচ্ছে। আর এজন্য সংকট তৈরি হয়েছে। সংকট মোকাবিলায় নাগরিক সমাজকে সুস্পষ্ট ভূমিকা রাখতে হবে। সংবিধানের স্থায়ী কাঠামো তৈরি করতে হবে। সংকট উত্তরণে সংলাপের বিকল্প নেই। সরকার একতরফা নির্বাচন করতে চাইলে সংকট আরো ঘণীভূত হবে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমরা সবসময় সংকটের মধ্য দিয়েই গিয়েছি। স্বাধীনতার পর থেকে একের পর এক সংকট মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হয়েছে। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারের পতনের পর সেই সংকট সমাধান হলেও ২০০৬ সালে আবার শুরু হয়। সংবিধান আছে কিন্তু সংশোধনীগুলো জনমুখি নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে সব মানুষ হতাশ।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, আমরা সমাধান চাই। সেজন্য প্রত্যেককেই কিছু না কিছু ছাড়তে হবে। সংলাপ করতে হবে। আবার আস্থাও রাখতে হবে। সমঝোতার নীতিতে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু নির্বাচন নয় বরং বাংলাদেশের উন্নয়নে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তত্ত্বাধায়ক সরকার আমলের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ঐ সময় সবাইকে নিপিড়নের শিকার হতে হয়েছে। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদান বলেন, সংলাপের বিকল্প সংলাপই। রাজনীতি কোনো জ্বালাও পোড়াও নয়। রাজনীতিবিদরা রাজনীতি চর্চা করবে এটাই প্রত্যাশা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com