চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় আখ চাষে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের। দিন দিন চাষের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মৌসুমে প্রায় ২ কোটি টাকার আখ বিক্রির আশা করছেন এখানকার কৃষকেরা। কিছুদিন আগে জমি থেকে আখ তুলে বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। আরও এক মাস বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান একাধিক কৃষক।
জানা গেছে, এখানকার উর্বর মাটি ও উপযুক্ত পরিবেশের কারণে কৃষকেরা ঝুঁকছেন আখ চাষে। উপজেলার দুর্গাপুর ও জোরারগঞ্জ ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি আখ চাষ হয়েছে। এছাড়া খৈয়াছড়া, ওয়াহেদপুর, হিঙ্গুলী ইউনিয়নেও আখ চাষ হয়েছে। উপজেলায় ২০৮ ও চায়না জাতের আখ বেশি চাষ হয়েছে। আখ রোপণ করার পর বিক্রির উপযোগী হতে প্রায় ১ বছর সময় লাগে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মিরসরাইয়ে ৩৩ একর জমিতে ৮ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন আখ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে প্রায় ২৭ হাজার পিস আখ উৎপাদন হয়। প্রতিটি আখ কৃষকেরা পাইকারি ব্যবসায়ীর কাছে ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি করেন। প্রতি পিস ৭০ টাকা ধরে যার বাজার মূল্য ২ কোটি টাকা। স্থানীয় বাজারগুলোয় ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে আখ কিনে প্রতি পিস ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি করেন।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয় বাজারে বেড়েছে আখের চাহিদা। চাষিরাও ভালো দাম পাচ্ছেন। পাইকাররা আখ কিনে পাশের উপজেলায় নিয়ে যান বিক্রির জন্য। মিরসরাই পৌর বাজার, বারইয়ারহাট পৌর বাজার, মিঠাছড়া বাজার, বড়তাকিয়া, আবুতোরাব, নিজামপুর বাজার, জোরারগঞ্জ বাজার, করেরহাট, আবুরহাট, শান্তিরহাটে এ আখ বিক্রি হয় বেশি। এছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে মিনি ট্রাকে করে নিয়ে যান।
উপজেলার সোনাপাহাড় এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, আখ চাষি সিরাজুল হক জমিতে পরিচর্যা করছেন। তাকে সহযোগিতা করছেন তার স্ত্রী কোহিনুর। এসময় কথা হয় সিরাজুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি গত ৫ বছর ধরে আখ চাষ করে আসছি। এবার চাষের পরিধি কিছুটা কমে গেছে। ১২ শতক জমিতে চাষ করেছি। কিছু আখ বিক্রি হয়েছে, বেশিরভাগ এখনো জমিতে আছে। সার, কীটনাশকের দাম অগের তুলনায় অনেকে বেড়েছে কিন্তু আখের দাম আগের মতোই। বেশি লাভ করা সম্ভব হয় না।’
আরেক চাষি সুরুজ মিয়া বলেন, ‘আমি ৩০ শতক জমিতে আখ চাষ করেছি। একজনের কাছে জমিতে সব আখ পাইকারি বিক্রি করেছি ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকায়। আমি প্রায় ৮ বছর ধরে বাড়ির পাশের জমিতে আখ চাষ করছি। বাজারে নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। পুরো জমির আখ পাইকাররা কিনে নেন।’
আবুতোরাব বাজারের আখ বিক্রেতা নুরুল হুদা বলেন, ‘এবার ৩৫ শতক জমিতে আখ চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। খুচরা বাজারে বড় সাইজের আখ ৯০-১০০ টাকা ও মাঝারি সাইজের আখ ৫০-৬০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে বাজারে দেশি আখের চেয়ে লাল আখের চাহিদা অনেক বেশি।’
উপজেলা কৃষি সুপারভাইজার কাজী নুরুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবার চাষের পরিমাণ সামান্য বেড়েছে। কৃষকদের মধ্যে আখ চাষে আগ্রহ বাড়ছে। ২০৮ চায়না লাল হাইব্রিড আখই এবার বেশি চাষ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।’