অ্যালার্জির সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। কারও কারও ক্ষেত্রে এটি গুরুতর সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সাধারণত ধুলাবালি, পরাগ, খাবার কিংবা ওষুধের কারণে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে। তবে দীর্ঘদিন অ্যালার্জিতে ভুগলে এর থেকে অ্যানাফিল্যাক্সিস, হাঁপানি, সাইনোসাইটিস, কান বা ফুসফুসের সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
অ্যালার্জি কেন হয়? অ্যালার্জিতে যারা ভোগেন তাদের ইমিউন সিস্টেম অ্যান্টিবডি তৈরি করে, যা একটি নির্দিষ্ট অ্যালার্জেনকে ক্ষতিকারক হিসেবে চিহ্নিত করে। এক্ষেত্রে অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসলে ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়া পড়ে ত্বক, সাইনাস, শ্বাসনালি বা পাচনতন্ত্রে।
অ্যালার্জির তীব্রতা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে পরিবর্তিত হয়। ত্বকে সামান্য জ্বালাভাব থেকে শুরু করে চুলকানি এমনকি অ্যানাফিল্যাক্সিস পর্যন্তও হতে পারে অ্যালার্জির কারণে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অ্যালার্জি নিরাময় করা যায় না, তবে এর লক্ষণগুলো থেকে মুক্তি পেতে নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ সাহায্য করে।
কোন কোন উপাদান অ্যালার্জি সৃষ্টি করে? >> বায়ুবাহিত অ্যালার্জেন, যেমন- পরাগ, প্রাণীর খুশকি, ধুলো মাইট এবং ছাঁচ
>> কিছু খাবার, বিশেষ করে- চিনাবাদাম, গাছের বাদাম, গম, সয়া, মাছ, শেলফিশ, ডিম ও দুধ
>> পোকামাকড়ের হুল, যেমন- মৌমাছি বা ওয়াপ থেকে
>> ওষুধ, বিশেষ করে- পেনিসিলিন বা পেনিসিলিন-ভিত্তিক অ্যান্টি বায়োটিক
>> ল্যাটেক্স বা অন্যান্য পদার্থ স্পর্শ করলেও ত্বকে অ্যালার্জি সৃষ্টি হতে পারে
অ্যালার্জির ঝুঁকি কাদের বেশি? >> অ্যাজমা বা অ্যালার্জির পারিবারিক ইতিহাস আছে
>> শিশুদের মধ্যে
>> হাঁপানি বা অন্য অ্যালার্জিতে ভুগছেন
অ্যালার্জির লক্ষণ কী কী? অ্যালার্জির লক্ষণগুলো বিভিন্ন অ্যালার্জেন উপাদানের উপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে শ্বাসনালি, সাইনাস ও অনুনাসিক পথ, ত্বক ও পাচনতন্ত্রকে প্রভাবিত হয়। অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হালকা থেকে গুরুতর পর্যন্ত হতে পারে। কিছু গুরুতর ক্ষেত্রে অ্যালার্জি একটি প্রাণঘাতী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে যা অ্যানাফিল্যাক্সিস নামে পরিচিত।
জেনে নিন কোন অ্যালার্জির লক্ষণ কী কী?
অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের লক্ষণ: >> হাঁচি >> নাক, চোখ বা মুখে চুলকানি >> সর্দি, নাক বন্ধ
>> চোখে কনজাংটিভাইটিস
খাবারে অ্যালার্জির লক্ষণ: >> মুখে শিরশিরানি
>> ঠোঁট, জিহ্বা, মুখ বা গলা ফুলে যাওয়া
>> আমবাত
>> অ্যানাফিল্যাক্সিস
>> হাঁচি
>> নাক দিয়ে পানি পড়া
পোকা থেকে অ্যালার্জি হলে-
>> শরীরের কোনো স্থানে ফুলে যাওয়া (এডিমা)
>> সারা শরীরে চুলকানি বা আমবাত
>> কাশি, বুক ধড়ফড়, শ্বাসকষ্ট
>> অ্যানাফিল্যাক্সিস
ড্রাগ এলার্জির লক্ষণ-
>> আমবাত
>> ফুসকুড়ি
>> মুখ ফুলে যাওয়া
>> ঘ্রাণে তীব্রতা
>> অ্যানাফিল্যাক্সিস
অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস, এটি একটি অ্যালার্জিজনিত ত্বকের অবস্থা। যাকে একজিমাও বলা হয় এক্ষেত্রে যেসব লক্ষণ দেখা দেয়-
>> চুলকানি
>> লাল ত্বক
>> ত্বকে খোসা ওঠা
>> অ্যানাফিল্যাক্সিস
অ্যানাফিল্যাক্সিসের লক্ষণ কী কী?
>> চেতনা হারানো
>> রক্তচাপ কমে যাওয়া
>> তীব্র শ্বাসকষ্ট
>> চামড়ায় ফুসকুড়ি
>> হালকা মাথাব্যথা
>> হৃদস্পন্দন বেড়ে বা কমে যাওয়া
>> বমি বমি ভাব ও বমি
খাবারের অ্যালার্জি কিংবা পোকামাকড়ের কামড় থেকে অ্যালার্জি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। যাকে বলা হয় অ্যানাফিল্যাক্সিস। এক্ষেত্রে রোগী চেতনা হারাতে পারেন।
অ্যালার্জির যত জটিলতা
অ্যালার্জি বিভিন্ন সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। যেমন-
অ্যানাফিল্যাক্সিস
আপনার যদি গুরুতর অ্যালার্জি থাকে তাহলে আপনি এই প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিতে আছেন। খাদ্য, ওষুধ ও পোকামাকড়ের দংশন থেকে হঠাৎ করেই অ্যালার্জির গুরুতর প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে।
হাঁপানি
আপনার যদি অ্যালার্জি থাকে তবে আপনার হাঁপানি হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। এটি একটি ইমিউন সিস্টেম প্রতিক্রিয়া যা শ্বাসনালি ও শ্বাসকে প্রভাবিত করে। অনেক ক্ষেত্রে পরিবেশে অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসার কারণে হাঁপানি শুরু হয় (অ্যালার্জি-প্ররোচিত হাঁপানি)।
সাইনোসাইটিস, কান বা ফুসফুসের সংক্রমণ
আপনার যদি হাঁপানি থাকে তাহলে সাইনোসাইটিস, কান বা ফুসফুসের সংক্রমণের ঝুঁকি আছে। তাই অ্যালার্জি নিয়ে কখনো অবহেলা করা উচিত নয়।
কখন ডাক্তার দেখাবেন? আপনি যদি অ্যালার্জির কারণে সৃষ্ট উপসর্গগুলো টের পান তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হন। গুরুতর অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া (অ্যানাফিল্যাক্সিস) এর জন্য জরুরি চিকিৎসা সহায়তা নিতে হবে।
আর আপনার যদি অতীতে গুরুতর অ্যালার্জির আক্রমণ বা অ্যানাফিল্যাক্সিসের কোনো লক্ষণ থাকে তাহলেও নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ মোকাবেক চলুন। এক্ষেত্রে অ্যালার্জি ও ইমিউনোলজিতে বিশেষজ্ঞ এমন চিকিৎসকের শরনাপন্ন হন। সূত্র: মায়োক্লিনিক