প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ শেখ রাসেলসহ বঙ্গবন্ধুর শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্রের ৬০তম জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানার সাথে আজ বনানী কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। দিবসটি শেখ রাসেল দিবস হিসেবেও পালন করা হয়। এরআগে সকালে শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা বনানী কবরস্থানে যান। তারা বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা ও ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের অন্যান্য শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে সেখানে ফাতেহা পাঠ করেন এবং বিশেষ মোনাজাতে যোগ দেন। পরে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শহীদদের কবরে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন।
ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শেখ রাসেলের ৬০তম জন্মদিন আজ শেখ রাসেল দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্মগ্রহণ করেন। রাসেল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যদের সাথে নির্মম হত্যার শিকার হন। ২০২১ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ‘ক’ বিভাগের আওতায় ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেলের জন্মদিনকে ‘শেখ রাসেল দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
গাজায় হাসপাতালে ইসরাইলি হামলার নিন্দা প্রধানমন্ত্রীর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবজাতির কল্যাণে যুদ্ধ ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধের জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি তার আহ্বান পুণর্ব্যক্ত করে গাজার একটি হাসপাতালে ইসলাইলের সাম্প্রতিক হামলায় নারী-শিশুসহ নিরীহ মানুষ হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা গতকাল মঙ্গলবার (ইসরাইল কর্তৃক গাজায়) হাসপাতালে বোমা হামলা চালিয়ে মানুষ ও শিশুদের হত্যা এবং শিশুদের রক্তমাখা মুখ দেখেছি। আমি বিশ্ব নেতাদের আহ্বান জানাচ্ছি-যুদ্ধ ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, যুদ্ধ এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতা কখনই মানবজাতির জন্য ধ্বংসের পরিবর্তে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। যুদ্ধে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অস্ত্র প্রতিযোগিতার অর্থ সারাবিশ্বের শিশুদের কল্যাণে ব্যয় করা হোক। গতকাল বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৬০তম জন্মদিন উপলক্ষে ‘শেখ রাসেল দিবস-২০২৩’ এবং বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিজয়ীদের মধ্যে ‘শেখ রাসেল পদক-২০২৩’ ও ‘স্মার্ট বাংলাদেশ পদক-২০২৩’ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিজয়ীদের মাঝে ‘শেখ রাসেল পদক ও স্মার্ট বাংলাদেশ পদক’ প্রদান করেন তিনি। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ এবং সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং ইসরাইলের ফিলিস্তিনের ওপর আগ্রাসনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আজকে সারা বিশ্বের যে যুদ্ধ চলছে, ফিলিস্তিনে নারী-শিশু মারা যাচ্ছে, ইসরাইলেও মারা গেছে। গতকাল দেখলাম হাসপাতালে বোমা হামলা করা হয়েছে। সেখানে মানুষ মারা গেছে, শিশু মারা গেছে, দেখলাম রক্তাক্ত সেই শিশুদের চেহারা। তিনি বলেন, আমি বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে বলবো-যুদ্ধ বন্ধ করেন। অস্ত্র প্রতিযোগিত বন্ধ করুন। যুদ্ধ আর অস্ত্র মানুষের মঙ্গল বয়ে আনে না। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় শিশু আর নারীরা। আর যুবকরা দেয় জীবন। সন্তান হারান পিতা-মাতা। পিতা-মাতা হারান সন্তান। তাদের যে কী বেদনা সেটা আমরা জানি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি যুদ্ধের ভায়বহতা দেখেছেন, কিভাবে রাস্তায় রাস্তায় মানুষের লাশ পড়ে রয়েছে। আর ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর প্রবাসে রিফিউজি জীবন কাটাতে বাধ্য হতে হয়েছে তাকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫-এর আমরা দুই বোন এবং আমাদের পরিজনরা জানে এই কষ্টটা কী। আমাদের তো রিফিউজি হিসেবে বিদেশে থাকতে হয়েছে। সেতো আরো কষ্ট। নিজের নাম পরিচয়টা দিতে পারবো না, অন্যের দেশ, ভাষা আলাদা। সেখানে থাকতে হয়েছে কবে ফিরবো দেশে একটা অনিশ্চয়তা- সেভাবেই তো ছ’টি বছর কাটাতে হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। শান্তি সমৃদ্ধি বয়ে আনে, আর যুদ্ধ কেবল ধ্বংস করে। সেজন্য আমি যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, এই অস্ত্র বানানোর এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতায় যে অর্থ ব্যয় হয় সেই অর্থ সারাবিশ্বের শিশুদের খাদ্য, স্বাস্থ্য এবং তাদের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হোক। সেটাই আমাদের দাবি, আমরা তা-ই চাই। আমরা সবসময় শান্তির পক্ষেই কাজ করি। প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, আমার ছোট্ট রাসেল সোনার মতো, আর যেন কাউকে এভাবে জীবন দিতে না হয়। একটা ফুল না ফুটতেই যেন ঝরে না পড়ে। সেটাই আমার কামনা। কবি সুকান্তের ছাড়পত্র কবিতার কয়েকটি পংক্তি তুলে ধরে এ সময় বিশ্বকে নবজাতকের বাসযোগ্য করে যাওয়ার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেন তিনি।
সরকার প্রধান অনুষ্ঠানে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্ত বিভাগ বাস্তবায়িত সারাদেশের একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন ও বেশকিছু প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
বাংলাদেশ পুলিশ সরকারি ক্যাটাগরিতে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ পদক লাভ করায় মহাপুলিশ পরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন। একই ক্যাটাগরিতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ঢাকা, পঞ্চগড় এবং ঠাকুরগাঁও জেলা এই পদক লাভ করায় সংশ্লিষ্ট জেলাপ্রশাসকগণও প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন।
একইসাথে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ রাসেল দিবস-২০২৩’ উপলক্ষে মাসব্যাপী ক্রীড়া, চিত্রাংকন ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশু-কিশোরদের মাঝেও পুরস্কার বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের পরপরই শেখ রাসেলকে নিয়ে একটি থিম সং পরিবেশিত হয়। আর শেখ রাসেলসহ ‘৭৫-এর ১৫ আগস্টের শহিদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব মো: শামসুল আরেফিন, আয়োজক সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিস শরাফত, সাংগঠনিক সচিব ফরিদউদ্দিন আহমেদ রতন এবং শিশু বক্তা সামিরা নাইর চৌধুরী। শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের মহাসচিব কে এম শহীদুল্লাহ স্বাগত বক্তৃতা করেন। সূত্র : বাসস