শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১২ পূর্বাহ্ন

ভৈরব ট্র্যাজেডি: দুর্ঘটনায় ১৭ জনই মারা গেছেন

আবদুর রউফ ভৈরব প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৩

কোথাও কি আর লাশ আছে? তালাশ চললো রাতভর। সেই ভোর অব্দি। এরই মাঝে সরানো হয়েছে বিধ্বস্ত ট্রেনের বগিগুলোও। ফের চালু হয়েছে ট্রেনের চাকা। যাত্রীবাহী ট্রেন এসে স্টেশনে থামছে, দিচ্ছে হুুঁইসেল। ভোর থেকে সবই স্বাভাবিক। কিন্তু মাঝে লাশ হয়ে ঘরে ফিরলেন ১৭ জন মানুষ। কতো স্বজনের কান্না হলো সঙ্গী। আহতও হয়েছেন শতাধিক। অনেকেরই হয়তো সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে ক্ষত।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে এগারসিন্ধুর এক্সপ্রেসের উল্টে যাওয়া ২টি বগি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে বগির ভেতরে বা নিচে আর কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৪ টায় উদ্ধার অভিযান শেষ হয় বলে জানান আখাউড়া রেলজংশনের লোকোসেড ইনচার্জ মো: মনির উদ্দিন। বগি দুটি সরিয়ে নেয়ার পর রেল চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়। রাত ১১টা থেকে রিলিফ ট্রেন উদ্ধার অভিযান শুরু করে। এরআগে মালবাহী ট্রেনটি সরিয়ে নেয়া হয়। এদিকে নিহত ১৭ জনের মধ্যে ১৬ জনের মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। একটি মরদেহ এখনো রয়েছে।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদেকুর রহমান সবুজ জানান- আর কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি। দূর্ঘটনায় ১৭ জনই মারা গেছেন। তবে আহত অনেকে। শতাধিক হতে পারে। গত সোমবার বিকেলে ভৈরব রেলস্টেশনের অদূরে কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা এগারসিন্ধুর গোধুলী ট্রেনটি ৩ নম্বর লাইন থেকে ১ নম্বর লাইনে উঠার সময় ৩ নম্বর লাইনে চলে আসে মালবাহী ট্রেন। মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন এগারসিন্ধুর ট্রেনের শেষ দুটি বগিতে উঠে পড়ে। যাত্রীবাহী ট্রেনের বগি দুটি উল্টে পড়ে। এতে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে ১৬ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হচ্ছেন ভৈরবের আগানগরের রাধানগর গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেল আফজাল হোসেন (২৩), রানীরবাজারের প্রবোধ শীলৈর ছেলে সবুজ চন্দ্র শীল (৫০) ও ভৈরব উপজেলার শ্রীনগর এলাকার মানিক মিয়ার ছেলে রাব্বি মিয়া, ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ভারপাপাড়া মেরেঙ্গা গ্রামের জুনায়েদের স্ত্রী হোসনা আক্তার (১৪), কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার লক্ষীপুর এলাকার মো. জিল্লুর রহমানের ছেলে ইমারুল কবীর (২২), বাজিতপুর উপজেলার পিরোজপুর ডুয়াইগাও এলাকার আবদুল হাইয়ের ছেলে আসির উদ্দিন, কিশোরগঞ্জের চানপুরের গোপদীঘীর চান মিয়ার ছেলে সাইমন মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার বরইছড়া এলাকার মৃত সুরত আলীর ছেলে নিজাম উদ্দিন সরকার, ঢাকার দক্ষিণখানের আবদুর রহমানের ছেলে এ কে এম জালাল উদ্দিন আহমেদ, ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার গাঙ্গালপাড়ার রইছ উদ্দিন ছেলে সুজন মিয়া, সুজনের স্ত্রী ফাতেমা বেগম, ছেলে সজীব মিয়া ও ইসমাইল মিয়া, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদাির বোয়ালিয়া গ্রামের কাসেম মিয়ার ছেলে গোলাপ মিয়া ও মিঠামইন এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে রাসেল মিয়া।
স্টেশন মাস্টারের দাবি
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে দুটি ট্রেনের ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনার কারণ জানালেন ভৈরব স্টেশন মাস্টার ইউসুফ। এ দুর্ঘটনায় ভৈরব স্টেশন থেকে দেওয়া সিগন্যালের কোনও ত্রুটি ছিল না বলে দাবি করেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে গণমাধ্যমে দুর্ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করে এ দাবি করেন স্টেশন মাস্টার। তিনি জানান, রেলওয়ের সিগন্যাল সিস্টেম পুরোপুরি কম্পিউটারাইজড। যে কারণে কখনই একসঙ্গে দুটি ট্রেনের সংকেত দেওয়া যাবে না। ভৈরব স্টেশন থেকে শুধু এগারসিন্দুর ট্রেনের জন্য সংকেত দেওয়া হয়েছিল। মালবাহী ট্রেনটিকে স্টেশনে প্রবেশের জন্য কোনও প্রকার সিগন্যাল দেওয়া হয়নি। সুতরাং স্টেশনের সিগন্যাল সিস্টেমে কোনও ত্রুটি ছিল না।
স্টেশন মাস্টার ইউসুফ আরও জানান, ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের প্রবেশ সিগন্যাল না পাওয়ার পরও তা অমান্য করে মালবাহী ট্রেনটি স্টেশনে প্রবেশ করে। ফলে স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া এগারসিন্দুর ট্রেনকে ধাক্কা দিলে যাত্রীবাহী দুটি বগি উল্টে যায় এবং হতাহতের ঘটনাটি ঘটে।দুর্ঘটনার পর শিডিউল কিছুটা এলোমেলো হয়েছে। তাই নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ট্রেন চলাচলের জন্য কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে আজকের মধ্যেই সব ট্রেন শিডিউল অনুযায়ী চলতে পারবে। দুর্ঘটনার পর বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা এগারসিন্দুর গোধূলি ট্রেনের সঙ্গে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। মালবাহী ট্রেনটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল। একই সময় ভৈরব থেকে ঢাকায় যাচ্ছিল যাত্রীবাহী ট্রেন এগারসিন্দুর গোধূলি। ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্টে ক্রসিংয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনের শেষ তিন বগিতে ধাক্কা দেয় মালবাহী ট্রেনটি। এতে যাত্রীবাহী ট্রেনের কয়েকটি বগি উল্টে যায়। দুর্ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষে ১৭ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর ১৫ জনের মরদেহ শনাক্ত শেষে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ ঘটনায় লোকোমাস্টার জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী লোকোমাস্টার আতিকুর রহমান ও গার্ড আলমগীর হোসেনকে বরখাস্ত করা হয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com