একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। অপরদিকে কাজ নেই। এ অবস্থায় আবার রাজনৈতিক অস্থিরতা, হরতাল-অবরোধ। সব মিলিয়ে সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছেন দিনমজুররা। এসব মানুষ এখন বেঁচে থাকার লড়াই করছেন প্রতিদিন। তাদের মলিন মুখে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কাই বেশি।
ঢাকার বেশকিছু এলাকায় এই দিনমজুররা কাজের সন্ধানে বসেন। যা মূলত শ্রম বিক্রির হাট হিসেবেই পরিচিত। খিলগাঁও রেলগেট এলাকায় প্রতিদিন সকালে বসে এমন হাট। ছুটির দিনে শ্রমিকের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। তবে এবার ভিন্নচিত্র। গতকাল শুক্রবার সকালে খিলগাঁও রেলগেটে দেখা যায়, টুকরি, কোদালসহ জিনিসপত্র নিয়ে বসে আছেন শ্রমিকরা। কাজের জন্য প্রয়োজন এমন কেউ এলেই তাকে ঘিরে ধরছেন।
সেখানে কথা হয় কয়েকজন দিনমজুরের সঙ্গে। তারা জানান, হরতাল-অবরোধ শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের কাজ কমে গেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মানুষ খরচ করতে চাচ্ছে না। আবার অবরোধে অনেকে কাজে যেতে পারছেন না। অনেক প্রতিষ্ঠান ও পণ্য সরবরাহ বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে বসে আছেন তারা। দিনমজুর খালেকুজ্জামান হতাশ হয়ে বলেন, ‘খুব কষ্ট। কাম (কাজ) একেবারেই কইম্যা গ্যাছে। পুরু সপ্তাই দুদিন কাজ করছি। বাসাভাড়া বাহি (বাকি) পড়ছে। মালিক চিল্লাচিল্লি করে। বাজার করতে পারতাছি না।’
তিনি বলেন, ‘এমনিই কাম কম। হেরমধ্যে অবরোধ দিয়া আমাগো কপাল পুড়ছে। জিনিসের যে দাম, একবেলা খাইলে অন্য বেলা না খাওয়ান থাকতে হয়।’
এসব শ্রমিকরা দাবি করছেন, মানুষ এখন ভবন নির্মাণ কিংবা দিনমজুর সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজ কম করছে। মাসে ১০-২০ দিনের বেশি কেউ কাজ পাচ্ছে না। কাজ কমে যাওয়ায় মজুরদের চাহিদা কমে গেছে। সেখানে প্রতিদিন যে পরিমাণ দিনমজুর উপস্থিত হোন, তাদের মধ্যে অধিকাংশই কাজ না পেয়ে ফিরে যান। অন্যদিকে জীবিকার তাগিদে অনেককেই কম মজুরিতে কাজ করতে হচ্ছে। জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী হলেও মজুরি কমছে শ্রমিকদের। তাই দ্রব্যমূল্যের বাজারে কঠিন সংকটে রাজধানীর দিনমজুররা। খিলগাঁওয়ের মতো এমন শ্রম বিক্রির অস্থায়ী বাজার বাসাবো, মানিকনগর, জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, ফকিরাপুল, বাড্ডা, শান্তিনগর, মিরপুর, নয়াবাজারসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আছে বলে জানান শ্রমিকরা। সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এসব স্থানে অবস্থান করেন তারা। যারা কাজ করাবেন তারা এসে দরদাম করে শ্রমিক নিয়ে যান। কাজের জন্য তাদের বহু দূর-দূরান্তে যেতে হয়।
হারুন নামের একজন দিনমজুর বলেন, কাজ থেকে এখন শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই যারা শ্রমিক নিতে আসেন, তারাও কম দাম দিতে চান। বাধ্য হয়ে আমাদের কাজে যেতে হয়।
বিভিন্ন শ্রেণির শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজমিস্ত্রি ও কাঠমিস্ত্রিদের দৈনিক মজুরি ৮০০-৯০০ টাকা, রং মিস্ত্রীদের ৭০০-৮০০ টাকা, মাটিকাটা ও ইট-বালু টানা শ্রমিকদের ৬০০-৭০০ টাকা। তবে এখন কাজ না থাকায় এর চেয়েও কমে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে। বিন্দা দাস নামের একজন বলেন, ‘জিনিসপত্রের যে দাম, মজুরি রোজ এক হাজার টাহা অইলেও অয় না। কিন্তু মানুষ ৫০০-৬০০ টাহার বেশি দিতে চায় না। এই টাহা দিয়া ঘরভাড়া দিয়ে ডাল-ভাত খাওয়া ছাড়া উপায় নাই। মাছ-মাংসের কতা আমরা চিন্তাও করতে পারি না।’ দিনমজুররা জানান, অনেক শ্রমিক কাজ না থাকায় গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন।
কমতে শুরু করেছে সবজির দাম : শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। তাতে ঢাকার বাজারে সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহে ব্যবধানে ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ কয়েকটি সবজির দাম কমেছে।
গতকাল শুক্রবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত এক সপ্তাহ তুলনায় এ সপ্তাহে শীতের সবজির সরবরাহ ভালো থাকার কারণে দাম কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল হয়ে আছে আলু, পেঁয়াজ, চাল, ডাল, আটা, ময়দা, চিনি ও ভোজ্যতেলের মতো নিত্যপণ্যের দাম। রাজধানীর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, বেগুন প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ঢেড়স ৫০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, ঝিঙা ৫০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, শিম ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা, প্রতিটি পিস লাউ ৫০ ও বাঁধাকপি ৫০ টাকা ও ফুলকপি ৪০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, মুলা ৫০টাকা, চিচিঙ্গা ৫০, দুন্দল ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০টাকা, দেশি পেঁয়াজের দাম ১৪০টাকা, আমদানিকৃত পেঁয়াজ ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিম প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। মাছের বাজারের অস্থিরতা কোনভাবেই কমছে না। এক কেজি পাঙ্গাশ ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০টাকা, চাষের কই ২০০টাকা, পাবদা ৪০০টাকা। বড় রুই ৪০০টাকা, গলদা চিংড়ি ৬০০ টাকা, কাতল ৩৫০ টাকা, বোয়াল ৬০০টাকা, কোরাল ৭০০ টাকা এবং এক কেজি উপরের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০০টাকায়।
রাজধানীর নিউমার্কেটের সবজি বিক্রেতা হাসান মিয়া রাইজিংবিডিকে জানান, বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ ভালো থাকার কারণে দাম কমেছে। আগামী সপ্তাহে আরও কমার সম্ভাবনা আছে। এখন ক্রেতারা তাদের চাহিদা মত সবজি সংগ্রহ করছে।
রাজধানীর ধানমন্ডির সালেক গার্ডেন বাজারে কেনাকাটা করতে আসা নোমান সিকদার রাইজিংবিডিকে বলেন, সবজির দাম কমলেও মাছ ও মুদি পণ্যের চড়া হওয়ার কারণে আমাদের একটা না একটা সমস্যায় পড়তে হয়। সরকারের উচিত নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া।