বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৫ অপরাহ্ন

ন্যায্য মজুরি নিশ্চিতের আহ্বান আইএলওর

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৩

বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী পোশাকশ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা ও প্রমাণের ভিত্তিতে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণপ্রক্রিয়া নির্ধারণের ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি চূড়ান্ত হওয়ার এক সপ্তাহ পর আইএলও এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানায়। গত বুধবার দেওয়া দেওয়া বিবৃতিতে আইএলও বলেছে, তৈরি পোশাক খাতে মজুরি নিয়ে বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে। আরও প্রাণহানি ও জীবিকার ক্ষতি এড়াতে সব পক্ষকে শান্ত ও সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ন্যূনতম মজুরি নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে গঠনমূলক সংলাপ ও আলোচনায় অংশ নিতে আমরা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জোরালোভাবে উৎসাহ দিচ্ছি। এটি শ্রমিকের মানসম্মত জীবনযাত্রার পাশাপাশি তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসাকে টেকসই করতে নিশ্চয়তা দেবে।’ বাংলাদেশের জন্য একটি জাতীয় মজুরি নীতি ও মজুরি নির্ধারণের জন্য একটি প্রমাণভিত্তিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য বলে মনে করে আইএলও। তারা বিবৃতিতে বলেছে, ‘এ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা চলছে এবং সরকারের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠনকে আমরা স্বাগত জানাই।’
পোশাকশ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণের জন্য গত এপ্রিলে ন্যুনতম মজুর বোর্ড গঠন করে সরকার। প্রথম ছয় মাসে তিনটি বৈঠক হলেও মালিক ও শ্রমিক—কোনো পক্ষ থেকেই মজুরি প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। গত ২২ অক্টোবর বোর্ডের সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব দেন। বিপরীতে মালিকপক্ষ প্রায় অর্ধেক বা ১০ হাজার ৪০০ টাকার মজুরি প্রস্তাব দেয়। মালিকপক্ষের এই মজুরি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে পোশাকশ্রমিকেরা পরদিন ২৩ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা নি¤œতম মজুরির দাবিতে আন্দোলনে নামেন। প্রথমে গাজীপুরে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন শুরু হলেও পরে তা সাভার-আশুলিয়া ও মিরপুরে ছড়ায়। এ আন্দোলনে গাজীপুরের চার পোশাকশ্রমিক নিহত হয়েছেন।

আন্দোলন তীব্র হলে ১ নভেম্বর মজুরি বোর্ডের প ম সভায় মালিকপক্ষ নতুন করে মজুরি প্রস্তাব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। পরে ৭ নভেম্বর মালিকপক্ষ সাড়ে ১২ হাজার টাকার মজুরি প্রস্তাব দেয়। সেটিকেই চূড়ান্ত করে ন্যূনতম মজুরিকাঠামোর খসড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠায় নি¤œতম মজুরি বোর্ড। তারপরও শ্রমিকেরা আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকলে মালিকেরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ করেন। গত রোববার থেকে কারখানাগুলো খুলতে শুরু করে। শিল্পা লের উৎপাদন কার্যক্রম বর্তমানে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে। মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলনের সময় কারখানা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ বিভিন্ন অভিযোগে শুধু গাজীপুর ও আশুলিয়ায় করা ৪৩ মামলা হয়েছে যাতে কমপক্ষে ২০ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ১১৫ জন। তার মধ্যে বেশ কয়েক শ্রমিকনেতাও আছেন।
নি¤œতম মজুরি বোর্ড গত রোববার (১২ নভেম্বর) পোশাকশ্রমিকদের জন্য ১২ হাজার ৫০০ টাকা ন্যূনতম মজুরির খসড়া কাঠামো প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, বিভিন্ন গ্রেডে পোশাকশ্রমিকের মজুরি বেড়েছে ৫৪-৫৬ শতাংশ। মোট মজুরির মধ্যে মূল বেতন ৫৪ শতাংশ। ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা হলেও শিক্ষানবিশ শ্রমিকের মজুরি হবে ৪ হাজার ৯৫০ টাকা। আর শিক্ষানবিশকাল হবে সর্বোচ্চ ৬ মাস। খসড়া মজুরির ওপর ১৪ দিন পর্যন্ত লিখিত আপত্তি বা সুপারিশ নেবে মজুরি বোর্ড।
গত রোববার ১১ শ্রমিক সংগঠনের জোট ‘মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন’–এর নেতারা মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লার কাছে খসড়া মজুরিকাঠামোর ওপর লিখিতভাবে আপত্তি জানান। এতে তারা ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার ও মোট মজুরি মধ্যে মূল বেতন ৬৫ শতাংশ, সব গ্রেডে সমানহারে মজুরি বৃদ্ধি, প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্টসহ সাত দফা দাবি জানান।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com