ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র প্রভাবে ও অতি বৃষ্টির ফলে ব্যাপক হারে নষ্ট হয়েছে ইটভাটার কাঁচা ইট। যার পরিমাণ দাঁড়াবে এক কোটিরও বেশি। এতে প্রায় সাড়ে চার থেকে ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ইটভাটার মালিকরা। অধিকাংশ মালিকই চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ভাটা প্রস্তুত করেছিলেন বলে তারা জানা। এই ক্ষতির কারণে এখন তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে তারা সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ২০টি ইটভাটা রয়েছে। আবহাওয়া ও পরিবেশের উপর নির্ভর করে প্রতিবছর আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত ভাটাগুলোতে ইট তৈরির কাজ চলে। সে অনুযায়ী এ বছর আশ্বিন মাসের ১৫ তারিখের পরে ইট তৈরির কাজ শুরু হয। কিন্তু হঠাৎ ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে একটানা বৃষ্টির ফলে পোড়ানোর জন্য প্রস্তুত রাখা কাঁচা ইট এখন মাটিরস্তুপে পরিণত হয়েছে। এতে করে ইট পোড়ানোর আগেই ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে ইটভাটার মালিকদের।এবং এতে করে নতুন ইট উৎপাদনে আবার এক থেকে দেড় মাস পিছিয়ে গেছে। চলতি মৌসুমে এ ক্ষতির প্রভাব পড়বে ইটের দামের উপর। ইট বাটার মালিকরা জানান লাভের আশায় প্রতি বছরের মত এ বছরও বিভিন্ন ব্যাংক ও স্থানীয়দের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ইটভাটার কাজ শুরু করেন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় তাদের সেই আশা পন্ড করে দেয়। পাশাপাশি চড়া সুদের ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। তাই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন। উপজেলার সবচাইতে বড় ইটভাটা মানিকরাজ ব্রিকফিল্ডের (ঞঘই) মালিক মিরন খান বলেন, তিনি এই বছরই প্রথম ইটভাটার কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে তার প্রায় ১০লাখ প্রস্তুতকৃত কাঁচা ইট সব নষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে কামতা এলাকার (শইশ) কামতা বাজার ব্রিফ এর ম্যানেজার বাচ্চু মজুমদার বলেন, তাদের ইট ভাটায় প্রায় ছয় লাখ কাঁচা ইট নষ্ট হয়, এছাড়া একই এলাকার বাঘপুর ব্রিকফিল্ডের মালিক খোরশেদ আলম বলেন, তার ফিল্ডে প্রায় ৫লাখ কাঁচা ইট নষ্ট হয়েছে। অন্যদিকে মেসার্স মুন ব্রিকস এর মালিক সুমন বলেন, তার ইটভাটায় প্রায় ৬ লাখ ইট নষ্ট হয়। অন্যদিকে গাজীপুরের (গঈই) মাহাবুব চেয়ারম্যান ব্রিকফিল্ডের পরিচালক মাওলানা দেলোয়ার হোসেন বলেন, তাদের ইটভাটার প্রায় ৬লাখ কাঁচা ইট সম্পূর্ণরূপে বিলীন হয়ে যায়, এছাড়া গাজীপুর এলাকার বঙ্গেরগাও ব্রিট ফিল্টের মালিক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আবেদ আপ্লূত হয়ে বলেন, তার ইটভাটায় প্রস্তুতকৃত ৬ লাখ কাঁচা ইট সব নষ্ট হয়ে গেছে। ইটভাটা গুলোর মালিক প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে বলেন, গত শুক্রবারের ঘূর্ণিঝড় মিধিলির আঘাতে আমরা সবাই নিঃস্ব হয়ে গেছি। তারা বলেন, কেউ ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে অথবা বিভিন্ন সমিতি থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে এবং এলাকার অনেকের কাছ থেকে নগদ টাকা নিয়ে ইটভাটার কাজ শুরু করেছিলেন। মিধিলির আঘাতে তাদের সবকিছুই শেষ হয়ে গেছে। তারা সবাই সরকারের কাছে জ্বালানি খাতে অথবা অন্য কোনভাবে সহযোগিতা কামনা করছেন। চাঁদপুর জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব এস এম শফিকুল ইসলাম শপু কোম্পানি বলেন, ফরিদগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ২০টি ইটভাটা রয়েছে। আশ্বিন মাসের ১৫ তারিখের পর থেকে ইট প্রস্তুত করা শুরু হয়েছিল। এবং প্রত্যেক ইটভাটার মালিকই ৫ থেকে ৬ লাখ কাঁচা ইট প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে সমস্ত ইটভাটার কাঁচা ইট সব নষ্ট হয়ে গেছে। যার পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১ কোটি। এবং এতে করে ইটভাটার মালিকরা প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এই ক্ষতির প্রভাব পড়বে ইটের দামের উপর। তিনি আরো বলেন, প্রত্যেক ইটভাটার মালিক সরকারকে আয়কর প্রদান করে। তাই তিনি এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকারের কাছে জ্বালানি সুবিধা নয়ত অন্য কোন সুবিধা দাবি করেন।