শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৪ অপরাহ্ন

কৃষকের ন্যায্যমূল্যপ্রাপ্তি কী করে হবে?

মো. বশিরুল ইসলাম
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৩

আমি কৃষক পরিবারের ছেলে। ফসল ফলাতে গিয়ে একজন কৃষকের কী রকম শ্রম ও অর্থ প্রয়োজন হয় তা আমার জানা। মেহনতি মানুষের স্বার্থরক্ষায় কবি নজরুল ‘লাঙ্গল’-এর মাধ্যমে সমস্যাজর্জরিত কৃষকের পক্ষে যে দাবিগুলো পেশ করেছিলেন, তার ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। কৃষক যাতে তার উৎপন্ন ফসল থেকে উপযুক্ত মুনাফা পায়, জমিতে তার কায়েমি স্বত্ব বজায় থাকে এবং জমি থেকে তাকে উচ্ছেদ করা না যায়এজন্য দাবিগুলো আজকের দিনেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ফসল উৎপাদনে বিশ্বের সেরা দশে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনের তালিকায় শীর্ষ দশে বাংলাদেশের অবস্থানসম্প্রতি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে কৃষকদের ভর্তুকি এবং পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়ার বিকল্প নেই। ১০ টাকার বিনিময়ে ব্যাংক হিসাব উন্মুক্তকরণ, সেচের পানির ভর্তুকির টাকা সরাসরি কৃষকের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার এবং সেইসঙ্গে ১ কোটি ৮২ লাখ কৃষকের মধ্যে উপকরণ সহায়তা কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। এসব উদ্যোগ কৃষিতে বিপ্লব এনে দিতে দারুণভাবে সাহায্য করেছে। সরকারিভাবে দেশের ৩৫ জেলায় ২৫ শতাংশ ভর্তুকিতে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, হারভেস্টরসহ বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া কৃষক ডাটাবেজ তৈরি, কৃষিজমিতে অবকাঠামো নির্মাণ নিষিদ্ধ, কৃষি উপকরণ আমদানিতে সহায়তা প্রদান কৃষির ব্যাপারে সরকারি সদিচ্ছার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ন্যায্যমূল্য না পেয়ে জমিতে আগুন, দুধ পানিতে ও সবজি রাস্তায় ফেলে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হলে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকের সরাসরি বড় বাজারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এলাকাভিত্তিক কৃষক সংগঠন গড়ে গ্রুপ মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে করা যেতে পারে। বর্তমানে কৃষি বিভাগ এনএটিপি-২ প্রকল্পের আওতায় কিছুটা করে যাচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগের কর্মীরা উৎপাদন বাড়ানোর পেছনে যে শ্রম ও সময় ব্যয় করে, এর কিছুটা সময় ফসল বিক্রিতে সহায়তা করলে কৃষক লাভবান হতো। এছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের প্রশিক্ষণে স্থানীয় ব্যবসায়ীকে অন্তর্ভুক্ত করে আধুনিক বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর ধারণা দেওয়া যেতে পারে। কৃষকের উৎপাদন ব্যয় হ্রাস, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের বৃহৎ বাজারে প্রবেশাধিকার, মিডিয়ায় বাজার তথ্য সম্প্রচার, পণ্য পরিবহণকালীন চাঁদা বন্ধ, প্রত্যন্ত অঞ্চলে পর্যাপ্ত পণ্য সংগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন, ইউনিয়ন পর্যায়ে বিপণনসেবা চালু, উপজেলা পর্যায়ে মিনি হিমাগার এবং জেলা পর্যায়ে কৃষক বাজার বা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপন করা গেলে কৃষকের ন্যায্যমূল্যপ্রাপ্তির সংকট দূর হবে বলে আশা করা যায়। এজন্য বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার এগিয়ে আসার পাশাপাশি সরকারি পৃষ্টপোষকতার প্রয়োজন হবে। মৌসুমে জোগান বেশি থাকলে কৃষিপণ্যের দামও কমে যায়। কিন্তু অমৌসুমে উৎপাদিত পণ্যে কৃষক ভালো দাম পায়। তাই কৃষকদের অমৌসুমে ফসল উৎপাদনের ওপর বেশি জোর দিতে হবে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান ও গম সংগ্রহ করে থাকে। এটি কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রদানের একটি প্রচেষ্টা মাত্র। ভারতের কেরালা রাজ্যে আনারস বিক্রির ওপর রাজ্য সরকার নির্দিষ্ট দাম নির্ধারণ করে দেয়। ফলে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই থাকেন সন্তুষ্ট। সেখানে ‘কেরালা পাইনঅ্যাপল সিটি’ নামে বৃহৎ মার্কেট রয়েছে, এটি ‘কৃষক বাজার’ ধারণার আদলে গড়া। সব আনারস চাষি সরাসরি সেখানে এসে চুক্তিভিক্তিক আনারস বিক্রি করে। সেখানে ‘দ্য পাইনঅ্যাপল ফারমারস অ্যাসোসিয়েশন কেরালা’ নামে শক্তিশালী কৃষক সংগঠন রয়েছে, যার সদস্য সংখ্যা প্রায় ১০০০। শক্তিশালী কৃষক সংগঠনের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণের এটি একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে। লেখক: উপ-পরিচালক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com