রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৩ পূর্বাহ্ন

অরক্ষিত অবহেলায় নাকুগাঁও বধ্যভূমি ৫২ বছরেও হয়নি সংস্কার

আল আমীন (নালিতাবাড়ী) শেরপুর
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৩

স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও সংরক্ষণ করা হয়নি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও এলাকার নাকুগাঁও বধ্যভূমি। অযত্ম-অবহেলায় পড়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত এ গণকবরটি। যুদ্ধে এ স্থানে নিহত ভারতের ৯ জন বিএসএফ সদস্যের স্মরণে সীমানার কাঁটাতার ঘেঁষে স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের ৫০-৬০ জনের গণকবরটি আজও সংরক্ষণ করা হয়নি। ভারত-বাংলাদেশ শূন্য রেখায় ভোগাই নদের তীরঘেঁষা ২০ শতাংশ জায়গাজুড়ে এ বধ্যভূমি। গণকবরটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন নিহতের স্বজন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে নাকুগাঁও স্থলবন্দর হয়ে এ দেশের কয়েক শতাধিক পরিবার নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলার সীমান্তবর্তী ডালু বাজার, বারাঙ্গাপাড়া, চান্দুভুঁই, মাছাংপানি, ছৈপানি, ডিমলারপাড়া এলাকার মন্দির, সড়ক ও গাছতলায় আশ্রয় নেন। ২৫ মে পাকিস্তানি হানাদারদের একটি বড় দল ভোগাই নদী পার হয়ে ভারতের ডাল বিএসএফ ক্যাম্পসহ প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা ঘিরে ফেলে। বিএসএফের প্রতিরোধ সত্ত্বেও হানাদারদের এক ঘণ্টার তা-বে ৯ জন বিএসএফ সদস্যসহ শতাধিক বাংলাদেশি নিহত হন। ওই দিন নিহত অনেকের লাশ ভোগাই নদের স্রোতে ভেসে যায়। বাকি ৫০-৬০ জনের মরদেহ নাকুগাঁও শূন্য রেখার কাছে গণকবর দেওয়া হয়। আর বিএসএফ সদস্যদের ভারতের মাটিতে সৎকার করা হয়। সেই যুদ্ধে নিহত ভারতের ৯ জন বিএসএফের স্মরণে সীমানার কাঁটা তার ঘেঁষে স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরও বাংলাদেশের গণকবরটি আজও সংরক্ষণ করা হয়নি। সরেজমিনে দেখা গেছে, নাকুঁগাওয়ের গণকবরটি অরক্ষিত। কেউ দেখিয়ে না দিলে গণকবরটি বোঝা বা চেনা সম্ভব নয়। সংরক্ষণ না করায় সেখানে খড় শুকানো হয়। আশপাশে চাষাবাদের কাজ করছেন স্থানীয়রা। কিন্তু সীমানার কাঁটাতার ঘেঁষে ভারতের তৈরি স্মৃতিফলক মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। অথচ কয়েক গজ দূরে বাংলাদেশ অংশে থাকা নাকুগাঁও গণকবরটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পড়ে আছে। সেই দিনের সাক্ষী পৌরশহরের বাসিন্দা বিভা রানি দে বলেন, ওই দিনের গণহত্যায় আমার স্বামীসহ পাকিস্তানি বাহিনী নির্বিচারে অনেককে হত্যা করেছে। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরও গণকবরটি এখনও সংরক্ষণ করা হয়নি। সংরক্ষণ করা হলে এই গণহত্যার কথা মানুষ জানতে পারত। আমরা চাই গণকবরটি সংরক্ষণ করা হোক। এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইলিশায় রিছিল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত ওই নাকুগাঁও বধ্যভূমির জায়গাটি পরিদর্শন করেছি। আন্তর্জাতিক আইনে নোম্যান্স ল্যান্ড এলাকায় কোনো স্থাপনা নির্মাণ করার অনুমতি নেই। তারপরও জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায় ওই স্থানের পাশেই স্মৃতিফলক নির্মাণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com