ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে কর্ণফুলী নদী পার হয়ে সাইকেল চালিয়ে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন ড. হাছান মাহমুদ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৭ আসনে (রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ও বোয়ালখালী আংশিক) আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় পথসভায় বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ সালে সাইকেলে চড়ে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছিলেন। তখন থেকে আমাদের দলীয় প্রতীক নৌকা।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু নৌকা এবং সাইকেলে চড়ে নির্বাচনী প্রচার চালাতেন। ‘বঙ্গবন্ধু’ সিনেমায় আপনারা সেটি দেখেছেন। বঙ্গবন্ধুর সেই স্মৃতিকে স্মরণ করে আজকে আমি নৌকায় চড়ে কর্ণফুলী নদী পার হয়েছি এবং দলীয় কার্যালয় থেকে সাইকেল চালিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছি।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আজকে নির্বাচন নিয়ে জনগণের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে বিএনপিসহ দেশে-বিদেশে যারা ষড়যন্ত্র করেছিল তারা বেলুনের মত টুস করে চুপসে গেছে। এখন শক্তিশালী ভিটামিন ট্যাবলেট দিয়েও বিএনপিকে দাঁড় করানো যাচ্ছে না। ইনশআল্লাহ ৭ জানুয়ারি ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সারাদেশের মতো এই রাঙ্গুনিয়ায় লক্ষ লক্ষ মানুষ নিয়ে আমরা সবাই ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেব।’
‘নির্বাচন নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করেছিল, তারা এখন গর্তের মধ্যে ঢুকেছে এবং বিএনপির রিজভী আহমেদও গর্তের ভিতর ঢুকেছে’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যখন ইঁদুরকে দৌড়ানো হয়, সে তখন গর্তের মধ্যে ঢুকে। জনগণ বিএনপিকে ধাওয়া করেছে, জনগণের দৌড়ানি খেয়ে তারা গর্তের মধ্যে ঢুকেছে। আর রিজভী আহমেদ এখন গর্তের ভেতর থেকে চোখ মেলে মেলে তাকান আর কর্মসূচি ঘোষণা করেন।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচি হচ্ছে গাড়ি ঘোড়া পোড়ানো। এটি কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি হতে পারে না। যারা গাড়ি-ঘোড়া পোড়ায় তাদেরকে আমরা বর্জন করি, তাদেরকে জনগণও বর্জন করেছে। সুতরাং রাঙ্গুনিয়ার মাটিতেও তাদের কোন স্থান নাই।’
তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন যাতে অনুষ্ঠিত না হয়, সেজন্য অনেক ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। বিএনপি-জামাত মনে করেছিল, আমরা নির্বাচন করতে পারব না। এখন তারা বুঝতে পেরেছে, সমস্ত প্রতিকূলতাকে উপড়ে ফেলে দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক জনগণের ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যেভাবে প্রতিবার ভোটকেন্দ্রে গিয়ে আপনারা ভোট দিয়েছেন এবারও দ্বিগুণ উৎসাহে মা-বোনদের সাথে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য আপনাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাই।’
নির্বাচনী এলাকার জনগণের উদ্দেশ্যে ড. হাছান বলেন, ‘আমি প্রতিবারই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি, কিন্তু নির্বাচিত হবার পর আমি সব মত-পথের মানুষের এমপি হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করেছি, কে কোন দলের সেটি কখনো দেখি নাই। আমার কাছে যিনিই গেছেন, আমি কাউকে নিরাশ করি নাই। গত ১৫ বছর ধরে আমার দুয়ার সব মানুষের জন্য খোলা ছিল। এখন আমি আপনাদের দুয়ারে হাজির হয়েছি, আপনাদের কাছে আমার বিনীত ফরিয়াদ, আপনারা দয়া করে আমার জন্য আপনাদের দুয়ারটি খুলে দেবেন।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকে সারাদেশে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। দেশের অনেক উপজেলার চেয়ে বেশি উন্নয়ন আমাদের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ও বোয়ালখালী অংশে হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন না দিলে আপনারা আমাকে ভোট দিতে পারতেন না। আপনারা আমাকে নির্বাচিত করেছেন, তিনি আমাকে মন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন। সেই দায়িত্বে থাকার কারণে আমার পক্ষে এখানে উন্নয়ন করা সম্ভবপর হয়েছে, অন্যথায় এত উন্নয়ন করা সম্ভবপর হতো না। আপনাদের সেই ভালবাসার প্রতিদান আমি দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’
তথ্যমন্ত্রী রাঙ্গুনিয়ার ইছাখালীতে উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে থেকে সাইকেল চালিয়ে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক ধরে মরিয়মনগর চৌমুহনী গিয়ে পথসভা করেন। এর আগে পাহাড়ের চূড়ায় সত্যপীরের মাজার এবং নিজের পিতা-মাতাসহ মুরুব্বীদের কবর জিয়ারত করেন তিনি। এ সময় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ও উপজেলা চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার, উত্তরজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাশেম চিশতি, মো. শাহজাহান সিকদার, কামরুল ইসলাম চৌধুরী, নজরুল ইসলাম তালুকদার, মুহাম্মদ আলী শাহ, ইফতেখার হোসেন বাবুল, আকতার হোসেন খান, নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির সচিব ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার, গিয়াস উদ্দিন খান স্বপন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।