রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২২ পূর্বাহ্ন

সীমান্ত হাটে বাণিজ্যে পিছিয়ে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৩

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং সীমান্ত এলাকার মানুষের মাঝে সম্প্রীতি বাড়াতে চালু হয় সীমান্ত হাট। কোনো ধরনের শুল্ক ছাড়াই এসব হাটে উভয় দেশের পণ্য বেচাকেনা হয়। দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি ও বৈষম্য কমিয়ে আনতে হাট চালু হলেও নানা সীমাবদ্ধতায় এর যথাযথ সুফল পাচ্ছেন না বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা। বেচাকেনার ক্ষেত্রে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছেন তারা। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, চাহিদা থাকলেও অনুমোদন না থাকায় কিছু পণ্য বিক্রির সুযোগ নেই। আবার বাংলাদেশী ক্রেতারা সহজে হাটে প্রবেশ করতে পারলেও ভারতীয় ক্রেতাদের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করে বিএসএফ। ফলে প্রকৃতপক্ষে অধিকাংশ ক্রেতাই বাংলাদেশী। আর তাদের কাছেই পণ্যসামগ্রী বিক্রি করছেন ভারতীয়রা। অন্যদিকে ভারতীয় ক্রেতার অভাবে বাংলাদেশী পণ্য খুব একটা বিক্রি হয় না। সব মিলিয়ে প্রতিটি হাটে বাংলাদেশীদের চেয়ে গড়ে তিন গুণ বেশি পণ্য বিক্রি করছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। সুনামগঞ্জ সদর, তাহিরপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলা সীমান্তে তিনটি হাট চালু রয়েছে। একটি রয়েছে সিলেটের ভোলাগঞ্জ সীমান্তে। নতুন চালু হওয়া সিলেট ও সুনামগঞ্জের তিনটি হাটে ব্যবসা নিয়ে হতাশা রয়েছে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের মাঝে। হাটগুলোয় দুই দেশের ৫২টি পণ্য বিক্রির অনুমতি রয়েছে। দুই দেশের সীমান্ত থেকে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত যারা বাস করে তাদেরই মূলত সীমান্ত হাটে বাণিজ্য করার অনুমতি কার্ড দেয়া হয়। এ কার্ড ব্যবহার করে একজন ২০০ ডলারের পণ্য কিনতে পারেন প্রতি বাজারে। প্রতি হাটে দুই দেশ মিলে ৫০ ব্যবসায়ী ব্যবসার সুযোগ পান।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ডলুরা সীমান্ত হাটের ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘হাটের বাংলাদেশ অংশ বেলা ১১টায় খুলে দেয়া হলেও ভারত থেকে গেট খোলা হয় বেলা ১টায়। সে কারণে ভারতীয় ক্রেতারা কম আসেন, বেচাকেনাও কম হয়। বিএসএফ তাদের ক্রেতাদের হাটে আসার ব্যাপারে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করে। প্রতি হাটে বাংলাদেশীরা গড়ে ১০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেন। বিপরীতে ভারতীয়রা এর প্রায় তিন গুণ বিক্রি করেন।’ এদিকে ২০২২ সালের ১২ মে সুনামগঞ্জের বোগলা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বাগানবাড়ী এলাকায় চালু হয় বাগানবাড়ী-রিংকু সীমান্ত হাট। দুই দেশের সীমান্ত এলাকার লোকজন কৃষি, খাদ্য, হস্তশিল্পের পণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনাবেচা করেন এ হাটে। সেখানেও ভারতীয় ব্যবসায়ীদের আধিক্য রয়েছে বলে অভিযোগ বাংলাদেশীদের।
বাংলাদেশী ব্যবসায়ী আলমাছ আলী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘হাটে দোকান নিয়ে বসলেও ভারতীয় ক্রেতারা কম আসেন। বিএসএফ তাদের ঢুকতে দেয় না। বাংলাদেশের ক্রেতারা ঠিকই ভারতীয় পণ্য কিনছেন।’
তাহিরপুরের সাহেদাবাদ সীমান্ত হাটের অবস্থা একই। প্রতি সপ্তাহে বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বসে এ হাট। এখানে ভারতের ২৬টি ও বাংলাদেশের ২৪টি স্টল রয়েছে। তবে হাটে ভারতীয় ক্রেতারা কম আসেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশী ব্যবসায়ী রইছ উদ্দিন।
ভারতের মেঘালয়ের ইস্ট খাসি হিলস ও সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে হাট বসে প্রতি শনি ও বুধবার। হাটের সময় সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা। সেখানে বাংলাদেশী ক্রেতা প্রবেশে ঢিলেঢালা মনোভাব থাকলেও ভারতীয় ক্রেতাদের হাটে আসতে কড়াকড়ি আরোপের অভিযোগ রয়েছে বিএসএফের বিরুদ্ধে। তবে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ডলুরা সীমান্ত হাটে সিলেট অঞ্চলের অন্য হাটের তুলনায় একটু ভালো ব্যবসা হয় বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সুনামগঞ্জে তিনটি সীমান্ত হাট পড়েছে। হাটের বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশীদের ব্যবসা কম হচ্ছে, ভারতীয় ক্রেতারা আসছেন না। এসব বিষয় পর্যালোচনার জন্য সভা ডাকা হবে। সেখানে করণীয় ঠিক করা হবে।’
২০১০ সালের ২৩ জুলাই কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার বালিয়ামারী সীমান্তে উদ্বোধন করা হয় সীমান্ত হাট। শুরুর দিকে দুই দেশের কার্ডধারী ৬০০ ক্রেতার অনুমতি থাকলেও ভারতীয় ক্রেতার উপস্থিতি অনেকটাই কম ছিল। কভিডের কারণে ২০২০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এর কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর সীমান্ত হাট খুলে দেয়া হয়। তারপর থেকে প্রতি সপ্তাহে বুধবার ও সোমবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বসছে সীমান্ত হাট।
ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক জানান, পণ্য তালিকায় দুই দেশের ৩৭টি পণ্য হাটে বেচাকেনার অনুমতি থাকলেও ভারত থেকে আসে জিরা, সুপারি, কলা ও আদা। আর বাংলাদেশের পণ্যের মধ্যে প্লাস্টিক, ক্রোকারিজ, তৈরি পোশাক, আলু ও শাকসবজি থাকে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সীমান্ত হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা বৃদ্ধির জন্য নতুন করে কিছু আবেদন এসেছে। যেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। পাশাপাশি হাটের অবকাঠামো উন্নয়নের প্রক্রিয়াও চলমান।’
ফেনীর ছাগলনাইয়ার পূর্ব মধুগ্রাম ও ভারতের সীমান্ত এলাকা শ্রীগরে রয়েছে আরেকটি সীমান্ত হাট। জেলা প্রশাসনের হিসাবে গত জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন। বিপরীতে ভারতীয়রা বিক্রি করেছেন ৩ কোটি ১৮ লাখ টাকার পণ্য।
২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি দেশের তৃতীয় সীমান্ত হাট হিসেবে চালু হয় ফেনীর সীমান্ত হাটটি। এখানে ২৬টি করে ৫২টি দোকান দুই দেশের ব্যবসায়ীদের বরাদ্দ দেয়া হয়। বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশী ক্রেতাদের কাছে ভারতীয় মসলা, কসমেটিক, দুধ, হরলিকস ও অন্যান্য পণ্যের চাহিদা বেশি। অন্যদিকে ভারতীয় ক্রেতাদের বাংলাদেশী শুঁটকি, মুদি মালপত্র, বেকারি, ফল ও প্লাস্টিকের পণ্যের প্রতি ঝোঁক বেশি।
২০১৫ সালের জুনে যাত্রা শুরু হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তারাপুর সীমান্ত হাটের। ত্রিপুরার সিপাহীজলা জেলার কমলাসাগর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার তারাপুর সীমান্তে এ হাটের অবস্থান। যদিও তিন বছরের বেশি সময় বন্ধ রয়েছে হাটটি। স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাট বন্ধ হওয়ার আগে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের একেকজন ১০-২০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করতে পারলেও ভারতীয়রা জনপ্রতি বিক্রি করতেন ৫০ হাজার-১ লাখ টাকার পণ্য। কসবা উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা ও তারাপুর সীমান্ত হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সঞ্জীব সরকার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘হাটের বিষয়টি দ্বিপক্ষীয়। আগস্টে হাট খোলার ব্যাপারে দুই দেশের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা আলোচনা সভা করেছেন। হাট চালুর বিষয়ে ভারত অংশের ব্যবস্থাপনা কমিটির আগ্রহ আছে। দুই দেশের সরকারি সিদ্ধান্ত হলে এটি খুলে দেয়া হবে।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com