নীলফামারী জলঢাকায় মাঠে মাঠে হলুদ বরণ সরিষা ফুলে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। মাঠ জুড়ে চির সবুজের বুকে কাচা হলুদের রঙের উৎসব এনেছে। যা প্রকৃতিকে এনে দিয়েছে ভিন্ন রুপ। এ যেন প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্য্যে। ফুলে ফুলে ভরে গেছে কৃষকের পুরো ক্ষেত। রঙের এই মেলায় প্রকৃতি যেন আপন মনে হাসছে। হলুদের এই চোখ জুড়ানো দৃশ্য দেখে যে কারো মন জুড়িয়ে যাবে।কাচা হলুদের ছন্দে হাসি ফুটেছে সরিষা চাষির মুখে। খরচ কম ও কম সময়ে বেশি ফলন ও ভালো দাম পাওয়ার আশায় জলঢাকা উপজেলার কৃষেকরা দিন দিন সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এ উপজেলায় তেমন একটা সরিষার চাষ না হলেও এ বছর কম বেশি অনেক এলাকায় সরিষার চাষ লক্ষ্য করা গেছে। সরেজমিনে পৌরসভা বগুলাগারি সরিষা চাষি কৃষক মোঃ বেলাল হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি দৈনিক খবরপত্র কে জানান, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণের অধিদপ্তর এর সহায়তা ও পরামর্শ অনুযায়ী এবছর ৩ (একর) জমিতে বারি সরিষা-১৪ রোপন করেছি।সরিষা গাছের চেহারা বেশ ভালো দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সরিষার বাম্পার ফলন হবে। উপজেলার খুটামাড়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড এর দিগলটারী গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা আনোয়ার(৩৫) হোসেন জানান, এবছর ২ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি।আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ভালো ফলনের আশা করছেন তিনি। এছাড়া উপজেলার বেশ কয়েকজন সরিষা চাষির সাথে কথা হলে তারা জানান, সরিষা মুলত বোনাস ফসল। বীজ বপনের পর থেকে সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৮৫ দিনের মধ্যেই সরিষা ঘরে তোলা যায়। অল্প পরিমাণ ইউরিয়া ও টিএসপি ছাড়া অন্য কোনো সারের প্রয়োজন হয় না। চারা গজানোর পর আগাছা ছাড়া কোনো পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় না। তাই সরিষা চাষে বিঘা প্রতি সর্বোচ্চ ১৭০০ থেকে ২২০০ টাকা খরচ হয় বলে জানান সরিষা চাষিরা।প্রতি বিঘা জমিতে সরিষার ফলন হয় ৬-৭ মণ। যার বাজার মূল্য প্রায় ১০ থেকে ১৩ হাজার টাকা।সে বিবেচনা করে কৃষকের লাভ থাকে ৯ থেকে ১১ হাজার টাকা।তাই কম খরচ লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছে এ উপজেলার সরিষা চাষিরা। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার সদর উপজেলায় ১২৬৮ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।এর মধ্যে বারি সারিষা-১৭, বারি সরিষা-১৮, বারি সরিষা-১৭,বিনা সরিষা-৪, বিনা সরিষা-৯ ও বারি সরিষা-১৪ উল্লেখ যোগ্য হারে চাষ হয়েছে। উল্লেখ্য যে উপজেলায় এবার যে সরিষা চাষ হয়েছে তার বেশিরভাগই সরকারি প্রণোদনার আওতায় ভুক্ত। সরকারিভাবে উপজেলায় প্রদর্শনী ও দেওয়া আছে ১০০ জন কৃষকের মধ্যে।এদিকে উপজেলায় আবাদের আনুমানিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২৬৬ মেট্রিক টন।তাছাড়া সরিষার সঙ্গে মৌমাছির চাষ করে মধু সংগ্রহ করে বাড়তি আয় করতে পারে এ জন্য পৌরসভা সহ উপজেলার গোলমুন্ডা, কাঠালী শিমুলবাড়ী, শৌলমারী ও ডাউয়াবারী সহ ৬ টি মৌ-বক্স প্রধান করা হয়েছে।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমন আহমেদ দৈনিক খবরপত্র কে জানান, জলঢাকা উপজেলা সরিষা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। উপজেলার কৃষকদের মধ্যে সরকারিভাবে সরিষার বীজ বিতরণ, বিভিন্ন গ্রামের খেত পরিদর্শনসহ ভালো ফলন পেতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উপজেলায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সরিষার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।