মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ১৬ বছর বয়সের এক শিক্ষার্থী টানা ১৪ ঘন্টায় তার হিফজের শিক্ষককে ত্রিশ পারা পবিত্র কুরআনুল কারিম মুখস্ত শুনিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। হাফেজ রেদওয়ান আহমদ মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ পৌরসভার নছরতপুর এলাকার মোঃ আকলুছ মিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র। তার মায়ের নাম জহুরা বেগম। সে তিন ভাই ও এক বোনের মাঝে সবার ছোট। শনিবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় কমলগঞ্জ পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের বড়গাছ নছরতপুর জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ আব্দুস সালাম মুঠোফোনে জানান, আমার ছাত্র হাফেজ রেদওয়ান আহমদ গত ৬ জানুয়ারি সকাল ৭টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত, শুধু নামাজ, খাবার ও অজু-ইস্তেঞ্জার জন্য কিছু সময় ছাড়া একটানা ১৪ ঘন্টায় পবিত্র কুরআনুল কারিমের প্রথম পৃষ্ঠা থেকে শেষ পৃষ্ঠা অর্থাৎ পুরো ত্রিশ পারা আমাকে মুখস্ত শুনিয়েছে। মুখস্ত শুনানোর সময় দুইটি লোকমা (ভুল) ছাড়া বড় ধরণের কোনো ভুল হয়নি তার। এছাড়া এর আগে সে আমাকে ১৫ দিনে ১টি দাওরা (মুখস্ত), ৭ দিনে ১টি দাওরা (মুখস্ত), ৩ দিনে একটি দাওরা (মুখস্ত) অর্থাৎ প্রতিদিন দশ পারা করে, ২ দিনে একটি দাওরা (মুখস্ত) অর্থাৎ প্রতিদিন ১৫ পারা করে মুখস্ত শুনিয়েছে। সর্বশেষ সে টানা ১৪ ঘন্টা পুরো কুরআন শরিফ মুখস্ত শুনায়। এবিষয়ে বড়গাছ (নছরতপুর) এলাকার বাসিন্দা ও কমলগঞ্জ একতা সমাজকল্যাণ পরিষদের সভাপতি হাফেজ হিফজুর রহমান ফাহাদের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমার এলাকার সন্তান হিসেবে সে বিস্ময়বালক হাফেজ রেদওয়ানের জন্য দোয়া করি এবং অভিনন্দন জানাই। কারণ কুরআন হিফজ করা চট্টিখানি কথা না। আর শুধু মেধা থাকলেও সবার কপালে হাফেজ হওয়ার ভাগ্য জুটে না। মহান আল্লাহ যাকে পছন্দ করেন শুধু তাকেই হাফেজ আলেম ও হওয়ার সৌভাগ্য দান করেন। তেমনি ভাগ্যবানদের মধ্যে রেদওয়ান একজন। হাফেজ ফাহাদ আরও বলেন, পবিত্র কোরআনুল কারিমের হেফজ করা সৌভাগ্যের বিষয় হলেও তা কিন্তু খুব সহজ নয়। তারপরও আমাদের দেশে প্রতি বছর অসংখ্য হাফেজে কুরআন তৈরি হচ্ছেন। তারা তাদের অসাধারণ তেলাওয়াত ও মুখস্থ প্রতিভা দিয়ে আমাদের মুগ্ধ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। ঠিক তেমনই এক কঠিন কাজ করলেন হাফেজ রায়হান আহমাদ। ত্রিশ পারা মুখস্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তার শিক্ষক হাফেজ আব্দুস সালাম জানান, ৬ জানুয়ারি শনিবার সকাল ৭টা থেকে রেদওয়ান আহমদ আমাকে পবিত্র কোরআন মুখস্ত শোনানি শুরু করে। নামাজের সময় ও খাবারের সংক্ষিপ্ত বিরতি ছাড়া সে আর কোনো বিরতি নেয়নি। এভাবে টানা ১৪ ঘণ্টায় পুরো কুরআন কারিম শুনিয়েছে সে। গড়ে প্রতি পারায় ২৫ মিনিট সময় লেগেছে তার। পুরো সময়ের মধ্যে তার দুইটি লুকমা (ভুল) ছাড়া আর কোনো ভুল হয়নি। রেদওয়ান আমাকে বিস্ময় করে দিয়েছে। আমার জীবনের প্রথম ছাত্র, যে পূর্ণ কোরআন দুইটি লোকমা (ভুল) ছাড়া আমাকে শুনিয়েছে। এটা আমার সবচাইতে বড় অর্জন আলহামদুলিল্লাহ! তার এমন অর্জনে এলাকাবাসীরা আনন্দিত যোগ করেন নছরতপুর জামে মসজিদের ইমাম আবাদুস সালাম। কুরআন হিফজ শেষ করার অনুভূতি চাইলে বিস্ময় বালক হাফেজ রেদওয়ান বলেন, প্রথমেই মহান আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করি। মহান আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহ এবং মা-বাবা ও শিক্ষকের প্রচেষ্টায় হাফেজে কুরআন হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আল্লাহ যেনো আমাকে বড় পরিসরে খেদমতের জন্য কবুল করেন এবং কর্মের মাধ্যমে যেনো আমার অসচ্ছল পরিবারের অর্থনৈতিক সচ্চলতা আমি ফিরিয়ে আনতে পারি।