বরিশাল নগরবাসী গত ৩ দিনে শীতে কাবু হয়ে পড়েছে। শীতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে রয়েছে নগরের নিম্ন আয়ের মানুষ। তিন দিনের শীতে তারা বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বেচে থাকা ও সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় অর্থের তাগেদায় নিম্নশেণির মানুষ শীত উপেক্ষা করে সকাল বেলায় যে যার মত করে কাজে নেমেছে। এ অবস্থা আরো ৪/৫ থাকার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে বরিশাল আবহাওয়া অফিস। তাদের দেয়া তথ্যে শৈত্য প্রবাহের শংকাও রয়েছে। আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা রুবেল জানান ৮/১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু শৈত্য প্রবাহ বলে। ৬/৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মাঝারী ও ৬ ডিগ্রির হলে তীব্র শৈত্য প্রবাহ বলা হয়। বরিশালে এখনো শৈত্য প্রবাহ হয়নি। শীত অনুভূত হওয়ার বেশি কারণ হলো আকাশ মেঘলা ও উত্তর দিক থেকে ধেয়ে আসা হিমেল হাওয়ায় শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। এখন শৈত্য প্রবাহ না থাকলেও আশংকা রয়েছে জানিয়েছেন তিনি। বরিশাল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা রুবেল আরো বলেন আজ শনিবার এ মৌসুমে বরিশালে এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন ১০ ডিগ্রি ৭ সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন শীতের এ তীব্রতা আরো ৪/৫ দিন থকার সম্ভবনা রয়েছে তবে মাঝে মধ্যে এর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে তারপরে শীতের তীব্রতা থাকার পর এ অঞ্চলে বজ্র বৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এছাড়া শুক্রবার সকাল থেকে তাপমাত্রা ছিলো ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুর ২টার পর রোদের দেখা মেলে। তাই তাপমাত্রা বেড়ে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। কিন্তু সূর্য ডোবার সাথে সাথে আবারো শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকে। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১২টা সময় অতিক্রম হওয়ার পরও মেঘলা আবহাওয়া ও কুয়াশার চাঁদরে শহরকে ঘিড়ে রেখেছে। শীতের প্রকোপের মধ্যে আজ শনিবার সাধারনত ব্যবসা বাণিজ্য খোলা থাকার পরও নগরীতে সাধারন মানুষের চলাচল তেমন নেই। বেলা ১২টার দিকেও নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে সাধারন মানুষের চলাচল বেশি নেই। যারা শহরে বেড় হয়েছে অধিকাংশ মানুষ তাদের গরম জ্যাকেট চাদর পেছিয়ে চলাচল করছে। অন্যদিকে শনিবার বেলা ১১টার দিকে বরিশাল নদী বন্দর এলাকায় ঘুড়ে দেখা যায় একেকটি ভ্যানের উপর নিম্ন শ্রেণির শ্রমিকরা গরম বস্ত্র পেছিয়ে শুয়ে যা দুর থেকে দেখলে মনে হয় ভ্যান গাড়ির উপর কোন মালামালের বস্তা পড়ে রয়েছে। নগরীর ডিসি ঘাট পাইকারী কাঁচা বাজার এলাকার চায়ের দোকানী মো. সোলায়মান জানিয়েছেন, বাজারে পাইকাররা তেমন আসেনি। তাই সবজি কম দামে বিক্রি হয়েছে। চায়ের দোকানেও তেমন কোন বেচা বিক্রি হয়নি। রিকশাচালক জলিল বলেন, এমনিতে শীতে কাবু হয়ে আছি। তার পর রাস্তায় যাত্রী তেমন নেই। কোন আয় নেই। মালিককে ভাড়া দিয়ে কিভাবে বাজার করবেন সেই চিন্তা রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। অপরদিকে ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষরা আগুন জ্বালিয়ে শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন অনেকে। তাদেরই একজন বলেন, বিভিন্ন স্থান থেকে কাগজ কুড়িয়ে এনে আগুন জ্বালিয়েছি। খাইতেই কষ্ট হয়, শীতের কাপুড় কেনার টাকা পামু কই। আবহাওয়া বিভাগ থেকে আগামী কয়েক দিনে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পারদ হ্রাস পাবার কথাও বলা হয়েছে। সাথে গত কয়েকদিন ধরে রাতের শেষ প্রহর থেকে মেঘনা অববাহিকা সহ বরিশাল অঞ্চল মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশার চাঁদরে ঢেকে থাকছে অনেক বেলা পর্যন্ত। এমনকি গত মঙ্গলবার রাতের প্রথম প্রহরে দুটি যাত্রিবাহী বেসরকারী নৌযানের সংঘর্ষে মেঘনার হাইমচরে ‘এমভি সুরভী-৮’এর ব্যাপক ক্ষতি ছাড়াও নৌযানটির এক যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ বিরুপ আবহাওয়ায় শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হবার প্রবনতাও বাড়ছে। বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জেনারেল হাসপাতাল সহ বরিশাল অঞ্চলের সব হাসপাতালেই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এসময়ে শিশু ও বয়স্কদের ঠান্ডা এড়িয়ে চলার পাশাপাশি হালকা গরম পানিতে গোসল করারও পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। পাশাপাশি সব বয়সী মানুষকেই যতটা সম্ভব গায়ে রোদ লাগানোরও পরামর্শ দিয়েছেন।