ঢাকার কেরাণীগঞ্জে চাঞ্চল্যকর বন্ধুর নির্যাতনে বন্ধু খুন ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকান্ডের মূল হোতা রাব্বিসহ ১২জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন ১। আফতাব উদ্দিন রাব্বি(৩৫) ২। সজীব(৩৬) ৩। রাজীব(৩৫) ৪। হীরা(৩০) ৫। ফিরোজ(৩১) ৬। আলমগীর ঠান্ডু(৩৯) ৭) আমির(৩৮) ৮) রনি(৩৫) ৯) দেলোয়ার দেলু(৩৭) ১০) শিপন(৩১) ১১) মাহফুজ(৩৬) ও ১২) মোঃ রতন শেখ(২৮)। গতকাল বুধবার সকালে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন এ তথ্য নিশ্চিত করেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান পিপিএম বার। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পরপরই গত ১০ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাতে আফতাব উদ্দিন রাব্বি তার বন্ধু রাসেলকে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার তৈলঘাটে পারভিন টাওয়ারের নিচ তলায় তার অফিসে ডেকে নিয়ে যায়। রাসেল রাব্বির অফিসে হাজির হলে সেখানে উপস্থিত রাব্বির অন্যান্য বন্ধুরা রাব্বির নেতৃত্বে রাতভর রাসেলকে এলোপাথাড়িভাবে লাঠিসোঠা দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্রচন্ড মারধর করে মারাত্মক জখম করে এবং কেচি দিয়ে রাসেলের মাথার চুল কেটে দেয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে রাত ২টার দিকে রাসেল মৃত্যুর দিকে হেলে পড়লে রাব্বির নির্দেশে ৪/৫ জন লোক রাসেলকে অজ্ঞান অবস্থায় তার বাসায় পৌছে দেয় এবং রাসেলের স্ত্রীকে এ বিষয়ে থানা পুলিশ বা কাউকে কিছু না জানানোর জন্য হুমকী প্রদান করে আসামীরা চলে যায়। রাসেল মারা যাওয়ার পর রাব্বির অফিসে নিহত রাসেলকে নির্যাতনের বিভিন্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। আলোচিত এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত রাসেলের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হাওলাদার বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় আফতাব উদ্দিন রাব্বিকে প্রধান আসামী করে ১৩ জন এজাহারনামীয়সহ আরো অজ্ঞাতনামা ১০/১৫ জন আসামীর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। চাঞ্চল্যকর ও ব্যাপক আলোচিত এই হত্যাকান্ডের শুরু থেকেই ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িত আসামীদের দ্রুত গ্রেতার করার জন্য আমার নেতৃত্বে একটি অভিযানিক টিম গঠন করা হয়। হত্যাকান্ডের সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশ হত্যার ঘটনাস্থল রাব্বির অফিসে গিয়ে হত্যাকান্ড সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন আলামত জব্দ করে। হত্যাকান্ডে জড়িত এজাহারনামীয় আসামী ছাড়াও তদন্তটিম ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ ও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া নির্যাতনের বিভিন্ন ভিডিও পর্যালোচনা করে ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামীদের সনাক্ত করে। পরবর্তীতে উক্ত টিম তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে ঝিনাইদহ জেলার মহেষপুর থানার বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বাঁশবাড়িয়া বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অত্র হত্যাকান্ডের মূল হোতা আফতাব উদ্দিন রাব্বি সহ ৫জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দিতে পরে আরে ৭ জনকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করতে আমরা সক্ষম হই। গ্রেফতারকৃত আসামীরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অত্র হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে অত্র হত্যাকান্ডের কারণ সম্পর্কে জানা যায়, নিহত রাসেল মামলার প্রধান আসামী আফতাব উদ্দিন রাব্বির বন্ধু ছিলো। আর্থিক লেনদেনকে কেন্দ্র করে ও পারস্পারিক মতবিরোধের জেরে রাব্বি ও তার সহযোগীরা রাসেলের উপর ক্ষুদ্ধ হয়। এই ঘটনার জেরধরেই আফতাব উদ্দিন রাব্বির নেতৃত্বে তার সহযোগীরা রাসেলকে পৈশিক কায়দায় নির্মমভাবে হত্যা করে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস অ্যান্ড ট্রাফিক-দক্ষিণ), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কেরাণীগঞ্জ সার্কেল শাহাবুদ্দিন কবীর ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুব আলম। এদিকে এই ঘটনায় রাসেল হত্যার প্রধান আসামি আফতাব উদ্দিন রাব্বির সাথে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মাসুদুর রহমানের সখ্যতা থাকার অভিযোগে তাকে ইতিমধ্যেই ক্লোজ করেছে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে নিহত রাসেলের স্ত্রী সুমি বেগম এই ঘটনার সাথে জড়িত রানা, রাকিব ও বাপ্পি সহ আরো ৫-৬ জন কে গ্রেতারের দাবি জানান। তিনি আরো বলেন আমার স্বামীর লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই যারা তড়িঘড়ি করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য দাফন করার ব্যবস্থা করে, তাদের বিরুদ্ধেও আইনের আওতায় আনার দাবী জানান।