দেশের উত্তরাঞ্চলের ধান-চালের রাজ্য হিসেবে পরিচিত টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলায় প্রচন্ড শীত ও হিমেল হাওয়া উপেক্ষা করে বোরো ধান রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। প্রতিদিন পূর্ব দিগন্তে সূর্যের আলো ফুটে ওঠার আগেই ফসলের মাঠে নেমে পড়ছেন। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নে ও একটি পৌর সভায় ১০৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।যা ২২-২৩ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০২০০ ছিল আগের তুলনায় এবার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হবে। এ পরিমাণ জমিতে বোরো চাষ করতে ৫০০ আসো হেক্টর বোরো ৪০০ হেক্টর উফশী ১০০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এ মৌসুমে হাইব্রিড ধান চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে হাজার ৪০০০ জন কৃষককে ২ কেজি করে উন্নত জাতের হাইব্রিড বীজ ও উফশী ৪৬০০ জনকে সরবরাহ করছেন। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, নদীর পাড়ে, খালের ধারে, রাস্তার পাশের জমিতে ও ফসলের মাঠে ধানের কচি চারার সবুজ গালিচা। কোথাও গভীর নলকূপ দিয়ে চলছে সেচ, আবার কোথাও ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার দিয়ে চলছে জমি চাষের কাজ। এছাড়া ধান রোপণের জন্য বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে চারা। চারা তোলা আর রোপণের ব্যস্ততায় কৃষকের গায়ে শীত যেন স্পর্শ করছে না। মাঠের পর মাঠ ব্যস্ত আর ব্যস্তত্ম হয়ে উঠেছে। সবমিলিয়ে কৃষকের একটাই উদ্দেশ্য ঘরে তুলতে হবে বোরো ধান। ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি গ্রামের কৃষক আমির আলী বলেন, ‘প্রচন্ড শীতের কারণে কৃষি শ্রমিকরা কাজ করতে পারছে না। এ কারণে শ্রমিক সংকট হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের অতিরিক্ত মজুরি দিতে হচ্ছে। তাদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকরা। শীতের কারণে এ বছর বোরো চাষ কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে।’ হারিনাতেলি গ্রামের কৃষক নাজমুল হাসান ও আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘তারা প্রায় ২০ বিঘা জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন।’ তাদের মতে, ‘প্রতি বিঘা জমিতে বোরো চাষ শেষ করতে কমপক্ষে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা খরচ হবে। অনেক ক্ষেত্রে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে খরচের পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে।’ ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মাসুদুর রহমান বলেন, ‘গত মৌসুমে বাজারগুলোতে মোটা চালের সংকট দেখা দেওয়ায়, চলতি মৌসুমে হাইব্রিড ধান চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করে কৃষকরা অধিক লাভবান হবেন। এই জাতের হেক্টর প্রতি ফলন প্রায় ৬ মেট্রিক টন। আর জীবনকাল ১৪০ থেকে ১৪৫ দিন।’ তিনি বলেন, ‘বাজারে ইউরিয়া, ফসফেট, টিএসপি, পটাশসহ সকল প্রকার সার, তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় বোরো ধানের ভরা মৌসুমে কোন সংকট হওয়ার আশঙ্কা নেই। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।