ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে বিজিবি’র এক জওয়ান নিহতের প্রতিবাদ, বার বার সীমান্তে হত্যাকান্ড ও ফাইভ পার্সেন্ট ডামি সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বিরুদ্ধে মিডিয়া ব্রিফিং করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি ‘এবি পার্টি’। দলটির বিজয় নগরস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল বুধবার বিকেল ৩. ৩০ টায় অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে দলের বক্তব্য তুলে ধরেন পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব, কূটনৈতিক উইং এর দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। এবি পার্টির সহকারী সদস্য সচিব ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু।
ব্রিফিংয়ে সীমান্ত হ্ত্যা রোধে সরকারের উপুর্যুপুরি ব্যর্থতার খতিয়ান তুলে ধরে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, পৃথিবীর অন্য কোন সীমান্তে এত পরিমান বেসামরিক নাগরিক খুন হওয়ার নজীর নাই। ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে বিভিন্ন মাত্রায় প্রায়ই যুদ্ধ হয়, দুই পক্ষেরই সামরিক বাহিনীর সদস্য নিহত হয় কিন্তু বেসামরিক নাগরিক খুন হবার ঘটনা সেখানে নেই বললেই চলে। ভারত-চীন সীমান্তে কোন বেসামরিক নাগরিকের গায়ে হাত দেয়ার সাহস কোন পক্ষই করেনা। ইরান-আফগানিস্তান বা পাকিস্তান সীমান্ত দিয়ে প্রচুর মাদক পাচার হয়ে থাকে কিন্তু হরহামেশাই বেসামরিক নাগরিককে গুলী করে হত্যার ঘটনা সেখানে শোনা যায়না। এমনকি নেপাল, ভুটান সীমান্তেও কোন নাগরিককে হত্যার কথা আমরা শুনিনি। তিনি ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন; শুধু বাংলাদেশ সীমান্তই মনেহচ্ছে যেন অসহায় বাংলাদেশের মানুষের রক্ত, লাশ আর খুনের সীমান্ত! ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ‘দেখা মাত্র গুলী’র নীতিই আজকের হাজার হাজার বেসামরিক লোকের হত্যার কারন বলে আমরা মনে করি। ১৯৪৬ সালে জারী করা ভারতের বিদেশ আইনের বিধি উল্লেখ করে তিনি বলেন; সে আইনে অবৈধভাবে তাদের দেশে প্রবেশের শাস্তি রাখা হয়েছে পাঁচ বছরের জেল এবং জরিমানা। অথচ আইনের চরম লংঘন করে বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রায়ই নির্মমভাবে গুলী করে মারা হয়। তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন; আমাদের নাগরিকদের যেহেতু নিজ দেশেই কোন মর্যাদা নেই, ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা তাদেরকে তো খুন করে সীমানার কাটাতারে ঝুলিয়ে রাখবেই। তিনি ভারতীয় মানবাধিকার কর্মী এবং বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম)-এর প্রধান কিরীটি রায়ের মন্তব্য তুলে ধরে বলেন, কিরিটি রায় বলেছেন “আসলে ভারত সীমান্ত হত্যা বন্ধ চায় না, তাই বন্ধ হয় না৷ ওরা মুখে এক কথা বলে আর কাজে করে আরেকটা৷ আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও শক্ত কোনো প্রতিবাদ নেই৷ তারা ভারতের কাছে নতজানু হয়ে থাকে৷”
ব্যারিস্টার ফুয়াদ আরও বলেন; গত পঞ্চাশ বছরে যে কয়েক হাজার বাংলাদেশী নাগরিককে বিএসএফ হত্যা করেছে তাদের অধিকাংশই গরু ব্যবসায়ী এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলের কৃষক ও বাসিন্দা। বাংলাদেশের সাথে ভারতের অনেকগুলো রাজ্যের সীমান্ত থাকলেও অধিকাংশ খুন সংগঠিত হচ্ছে বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্তে; পশ্চিম বাংলার সাথে। লালমনিরহাট, চুয়াডাঙ্গা, যশোহর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সহ জেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দারা প্রতিনিয়তই মৃত্যুভয় নিয়ে বেঁচে থাকেন। তিনি অভিযোগ করেন; দেশের সীমান্তরক্ষী বিজিবি জনগণের করের টাকায় চললেও সীমান্তে তাঁরা জননিরাপত্তা দিতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছেন। ইয়াবা, ফেনসিডিল, অবৈধ অস্ত্র চোরাচালান রোধে তাদের ব্যর্থতা চরম, কিন্তু সরকারের লাঠিয়াল হয়ে বিরোধীদলের আন্দোলনে গুলীবর্ষণ করতে তাদের হাত কাঁপেনা।
ব্রিফিংএ সংবাদ কর্মীদের করা প্রশ্নের জবাবে দলের সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন; একটা অবৈধ সরকার যখন জনগনের ম্যান্ডেট ব্যতীত ১৫ বছর ধরে জোর করে ক্ষমতায় থাকে, তখন একটি স্বাধীন, মর্যাদাপূর্ণ স্বকীয় পররাষ্ট্রনীতি প্রনয়ণের মনোবল ও যোগ্যতা তাদের থাকেনা। জনপ্রত্যাখ্যাত আওয়ামীলীগ সরকারের নতজানু, অক্ষম, পরনির্ভরশীল পররাষ্ট্রনীতির কারণে প্রতিনিয়ত দেশের কোটি কোটি মানুষ সীমান্তে হতভাগ্য ফেলানীর মত কাটাতারে ঝুলার অপেক্ষায় আছে বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেন। মিডিয়া ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন, এবি পার্টির যুগ্ম আহবায়ক বিএম নাজমুল হক, যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমেদ ভুইয়া, দফতর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, যুবপার্টির আহবায়ক এবিএম খালিদ হাসান, মহানগর উত্তরের আহবায়ক আলতাফ হোসাইন, মহানগর দক্ষিনের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল হালিম খোকন, গাজী নাসির, সহকারী অর্থ সম্পাদক সুমাইয়া শারমিন ফারহানা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সেলিম খান, আমেনা বেগম সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।