ভরা মৌসুমেও অস্থির বাজার। স্বস্তি ফিরছে না কোনো কিছুতেই। চাল ডাল থেকে মাছ মাংস কিংবা সবজি সবকিছুরই বেড়েছে দাম। গতকাল ২৬ জানুয়ারি গতকাল (শুক্রবার) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত কয়েকদিনে চালের দাম বেড়েছে ৬ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে আটা-ময়দা ও ডালের দাম কেজিতে ১০ টাকা ও তেলের দাম লিটারপ্রতি ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
সরু (মিনিকেট) চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৪ টাকা দরে। যা সপ্তাহ দুয়েক আগে ছিল ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে সর্বোচ্চ ৬ টাকা বেড়েছে। মাঝারি (বিআর-২৮, পায়জাম) চালের কেজিতে সর্বোচ্চ ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা। এছাড়া কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা। প্রতি ডালে কেজি প্রতি বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। মুগ ডাল ১৬৮ টাকা, বুটের ডাল ১০৮ টাকা, অ্যাংকর ডাল ৭৫ টাকা, মসুর ডাল ১৪০ টাকা, ছোলার ডাল ৯৬ টাকা, খেসারির ডাল ১০০ টাকা, ডাবলি ৭২ টাকা ও মোটা ডাল ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২২৫ টাকা। যা গত মাসে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকার মধ্যে ছিল। সোনালি জাতের মুরগির দামও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায়। আর গরুর মাংসের দাম ৬৫০ টাকা থেকে লাফিয়ে ৭৫০ টাকা হয়েছে।
এদিকে, আমদানিকৃত সব খাদ্যপণ্যের দামও বেড়েছে। বাজারে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়িয়ে ১৭৩ টাকা করা হয়েছে, যা আগে বিক্রি হয়েছে ১৬৯ টাকায়। ৫ লিটারের বোতলের দাম ৮২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৪৫ টাকা করা হয়েছে।
একই সঙ্গে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটা ও ময়দার দাম ১০ টাকা এবং চিনির দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেটের আটার দাম এখন ৬৫ টাকা। ময়দার দাম বেড়েছে হয়েছে কেজিপ্রতি ৮০ টাকা। চিনির দামেও একই ধরনের অস্থিরতা। প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি বাজারে ১৪৮ টাকা মূল্য থাকলেও বিক্রেতারা সেটা খুলে বিক্রি করছেন ১৫০-১৬০ টাকায়।
বাজারে এখন প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। দেশি পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকা। এছাড়া বাজারে এখন প্রতি কেজি আদা এবং রসুন একই দামে ২০০ থেকে ২৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ভোক্তারা বলছেন, ভরা মৌসুমে শীতকালীন সবজির দাম কমার কথা। কিন্তু দাম না কমে বরং বেড়ে যাওয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। ভোক্তাদের অভিযোগ, বাজারে সিন্ডিকেট কাজ করছে। যা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। যে কারণে এ পরিস্থিতি।
এদিকে, সবজির দাম বাড়ার পেছনে কুয়াশাকে দায়ী করেছেন কাওরান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা রহিম উল্লাহ। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বেশি কুয়াশা পড়ছে। এতে নির্ধারিত সময়ে পণ্যবাহী ট্রাক আসছে না। সে কারণে ঢাকায় তুলনামূলক পণ্য কম আসছে।
৮০ টাকার কমে সবজি পাওয়াই দায়: ভরা মৌসুমেও অস্থির শীতকালীন সবজির বাজার। মূলা ও পেঁপে ছাড়া সব সবজিই কিনতে হচ্ছে ৮০ টাকার ওপরে। তাছাড়া চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজসহ অধিকাংশ পণ্যের দাম বেড়েছে। মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় আছে গরুর মাংস ও ব্রয়লার মুরগি, ডিম। শুক্রবার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, শীতের শুরুর দিকে যে বেগুন বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় এখন সেটি ঠেকেছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। টমেটো ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ফুলকপি ৭০ থেকে ৯০ টাকা (পিস), মিষ্টি কুমড়া ১০০ থেকে ১৫০ টাকা (পিস), লাউ ১০০ থেকে ১২০ টাকা (পিস), পেঁপে ৫০ টাকা ও মুলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজির পাশাপাশি বাজারের অধিকাংশ পণ্যের লাগামহীন দামে দিশেহারা ক্রেতা। বর্তমানে প্রতি কেজি মসুর ডাল ১০ টাকা বেড়ে ১৫০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা এবং গরুর মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এদিকে বাজারে চালসহ বেশকিছু খাদ্যপণ্যও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। নির্বাচনের পরে প্রতি কেজি চালের দাম ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। এখনো সে দাম স্বাভাবিক হয়নি। বোতলজাত ভোজ্যতেলের দাম গত সপ্তাহে প্রতি লিটারে ৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এরপর থেকে খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ছে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা এবং পাম তেল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। আগের সপ্তাহের তুলনায় যা ৫ টাকা বেশি।