লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামীক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নামে পরিচিত মসজিদের চারটি গম্বুজে ফাটল ধরেছে। এ ছাড়াও মসজিদের বিভিন্ন স্থানে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার বিল্ডার্স এর বিরুদ্ধে। ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজন মসজিদ নির্মাণ কাজের শুরুতেই দরজায় নিম্নমানের কাঠ সহ বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছিল। ওই অভিযোগ উঠার পরে দরজার কিছু কাঠ পরিবর্তন করা হলেও এখনো অনেক কাঠই রযেছে আগের লাগানো। ফলে এ নিয়ে মসজিদের মুসল্লি সহ ইমাম মুয়াজ্জিনের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে টয়লেটের ওপরে ফ্লাশ, দরজায় নিম্নমানের কবজা ব্যবহার করা হয়েছে। এসবের মধ্যে কোন কোনটি ইতোমধ্যেই অকেজো হয়ে গেছে, কোনটি ভেঙ্গে গেছে। টয়লেটের ফ্লাশ এবং দেয়ালে লাগানো বিদ্যুতের সুইজ বোর্ড দিয়ে বৃষ্টির পানি চুয়ে পরে। কিছু কমোটের ফ্লাশে পানি থাকেনা আবার পানি চুয়ে পড়ে। নিম্নমানের উপকরণ এবং কাজের মধ্যে গাফিলতি থাকার কারনে দ্বিতীয় তলা এবং নীচে ছাদে পিভিসি পাইপ দিয়ে বৃষ্টির পানি চুয়ে পড়ায় নীচে স্টোর রুমে পানি জমে থাকে। সংশ্লিষ্টরা জানায় দ্বিতীয় তলায় মুসল্লিদের নামাজের স্থানে পাশের কাঁচের জানালার সামনে কোন রেলিং দেয়া হয়নি। ফলে ওই জানালার স্থানে যে ফাঁকা রয়েছে ওই ফাঁকা স্থান দিয়ে মুসল্লিদের যে কেউ পা পিছলে নীচে পড়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে মসজিদের মুসল্লিরা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধির নিকট জানতে চেয়েছিল প্রতি উত্তরে তারা নাকি জানিয়েছিল এটা তাদের সিডিউলে নেই। এ ছাড়াও ওই জানালার বাহির পাশে রয়েছে নীচ থেকে ওপরে লম্বা হোলো বক্স। ওই হোলো বক্সের মাঝে রয়েছে ডিম্বাকৃতির বড় আকারের গ্যাপ। সংশ্লিষ্টদের আশংকা রাতের আধারে চোরেরা হোলো বক্স বেয়ে ওপরে উঠে ওই গ্যাপ দিয়ে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করে মুল্যবান জিনিষপত্র চুরি করে নিয়ে যেতে পারে। সরেজমিনে দেখা গেছে মসজিদের বারান্দার সামনে প্রায় তিন ফুট উচু দেয়ালের ওপরে ডিম লাইটের তার বের হয়ে আছে কিন্ত তাতে কোন (ডিম লাইট) বাল্ব নেই। এতে যেকোন সময় বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। দু’একটি ডিম লাইট থাকলেও তারও কোনটি অকেজো। নীচে প্রথম ফ্লোরে ইসলামীক পাঠাগারের থাই গ্লাসের দরজা অনেক চেষ্টা করেও মসজিদের খাদেম জয়নুল আবেদিন খুলতে পারেননি। সুত্র জানায় মসজিদে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে, এসব সিসি ক্যামেরা কিছু সচল, আবার কিছু অচল। বিদ্যূতের আর্থিং তারের স্টিলের পাইপ ভেঙ্গে ছাদের ওপরে পড়ে আছে। অন্যদিকে মসজিদের সামনের ডানদিকের বাউন্ডারী দেয়ালের নীচের মাটি সামান্য বৃষ্টির পানিতে ধ্বসে যাচ্ছে। মসজিদ নির্মানের কিছুদিন যেতে না যেতেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। জানা গেছে ৪৮ শতাংশ জমির ওপরে পাটগ্রাম পৌর শহরের মির্জারকোটে লালমনিরহাট বুড়িমারী সড়কের পাশে গণপূর্ত বিভাগের অধীনে প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হয়। ২০২১ সালের ২১ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই মসজিদ উদ্বোধন করেন। ত্রুুটিপূর্ণ নির্মাণ এবং কিছু কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই গত ২২ সালের ১৮ নভেম্ভর মসজিদে আনুষ্ঠানিক ভাবে জামায়াত চালু করা হয়। এর পূর্বে ইসলামীক ফাউন্ডেশন মসজিদে একজন করে ইমাম মুয়াজ্জিন একজন সুপারভাইজার ও দুইজন খাদেম নিয়োগ দেন। মসজিদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় নারী ও পুরুষ সহ ১৫ শ মানুষ এক সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবে। তবে তৃতীয় তলায় নারীদের নামাজ আদায় করার স্থান এখনো চালু করা না হলেও দ্বিতীয় তলায় এক সঙ্গে ৬ শ মুসল্লির নামাজের স্থান চালু হয়েছে। এ বিষয়ে লালমনিরহাট গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী (এসও) প্রকৌশলী আব্দুর রহমান বলেন ইসলামীক ফাউন্ডেশন, অনুমোদন দিয়েছে, আমরা বাস্তবায়ন করছি। গম্বুজের যে ফাটল দেখা গেছে সেটা অরিজিনাল ফাটল নয় যেটা দেখা গেছে সেটি ওপরে সিমেন্টের প্লাস্টারের ফাটল বলে তিনি মন্তব্য করেন। হোলো বক্স সম্পর্কে তিনি বলেন এটি ডিজাইন অনুযায়ী যেভাবে আছে সেভাবেই করা হয়েছে। তবে পানি চুয়ে আসা সহ অন্যান্য যেসব সমস্য আছে তা ঠিক করা হবে, এজন্য সেখানে মিস্ত্রি কাজ করছে।