রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৩ অপরাহ্ন

পটুয়াখালীতে নিজ সন্তানকে হত্যার ঘটনায় মা ও চাচা গ্রেফতার

মোস্তাফিজুর রহমান সুজন পটুয়াখালী
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

পটুয়াখালী দশমিনায় ৮ বছরের শিশু মরিয়মের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত মুল আসামি নিহত মরিয়মের মা রিনা বেগম ও চাচা সেন্টু মৃধাকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত মরিয়ম উপজেলার সানকিপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড রামবল্লব গ্রামের বাসিন্দা মকবুল হোসেন এর মেয়ে তিনি পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রী। মরিয়ম রামভল্লব অগ্রনী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেনীর ছাত্রী ছিলো। সুত্রে জানাগেছে, গত (০১-০২-২০২৪ ইং) তারিখ মকবুল হোসেন ও তার স্ত্রী রিনা বেগম(৩৮), মরিয়মকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী তার বোন ফরিদা বেগমের বাড়ীতে বেড়াতে যায়। ঘটনার দিন ইং-০৩-০২-২০২৪ তারিখ সন্ধ্যায় ভিকটিম মরিয়ম বাদীর ভাই আলাল মৃধার ঘরে গিয়ে আলালের নাতনী মরিয়ম আক্তার(১০) এর সহিত মোবাইলে ভিডিও দেখে। মাগরিবের নামাজের পর মরিয়ম তার মায়ের কাছে ফিরে না যাওয়ায় রিনা বেগম অনুমানিক ০৬:৫০ ঘটিকায় আলালের ঘরে আসে। কিন্তু সেখানে মরিয়মকে না পেয়ে বিভিন্ন স্থানে খোজাখুজি করে এবং মসজিদের মাইক দ্বারা মাইকিং করে। খোজা খুজির একপর্যায়ে রাত অনুমান ০৭:৪৫ মিনিটের সময় পার্শ্ববর্তী স্থান জব্বার মৃধা বাড়ীর অনুমান ৩০০ গজ উত্তর পাশে জনৈক শামসু বিশ্বাসের পরিত্যাক্ত ভিটায় গিয়া টর্চ লাইটের আলোতে মরিয়মের রক্তাক্ত ও গলায় ওড়না পেচানো মৃতদেহ দেখতে পায়। এবিষয়ে মরিয়মের পিতাঃ মকবুল হোসেন বাদী হয়ে দশমিনা থানায় মামলা দায়ের করেন। যাহার মামলা নং-০২, তারিখ-০৫-০২-২০২৪ ইং, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু করা হয় এবং মামলার তদন্তভার এস আই (নিঃ)-আসাদুজ্জামান জুয়েল এর উপর অর্পণ করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে, পটুয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার সাইদুল ইসলাম, (বিপিএম), (পিপিএম), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ)( পুলিশ সুপার পদে পদোন্নিত প্রাপ্ত) আহমাদ মাঈনুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) রফিউদ্দীন মোহাম্মদ যোবায়ের, (পিপিএম), সহকারী পুলিশ সুপার, গলাচিপা সার্কেল মোঃ মোরশেদ তোহা, মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম মজুমদার, অফিসার ইনচার্জ, দশমিনা থানা, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) অনুপ দাস এর দিক নির্দেশনায় ও প্রত্যক্ষ তদারকিতে মামলাটি তদন্তকালে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এবং গুপ্তচরের প্রদত্ত তথ্য মোতাবেক গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করিয়া হত্যাকান্ডের মূল হোতা মরিয়মের চাচা ১। মোঃ সেন্টু মৃধা (৫০), পিতা-মৃতঃ মুজাফ্ফর আলী মৃধা, ও ভিকটিমের মা ২। রিনা বেগম, স্বামী-মকবুল মৃধাকে, আটক করেন।উভয় সাং-রামভল্লব, ৪নংওয়ার্ড, থানা-দশমিনা,পটুয়াখালী। পরে ব্যপক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিক তদন্তে আসামিরা স্বীকার করে বলেন, একই বাড়ীর হারুন মৃধা ও রাজ্জাক মৃধা গংদের সহিত জমি জমার বিষয় নিয়ে মামলা মোকদ্দমাসহ বিরোধ বিদ্যমান রহিয়াছে মর্মে জানা যায়। মামলা পরিচালনার খরচ ধৃত আসামী, মরিয়মের পিতা ও চাচারা যৌথ ভাবে বহন করিত। এছাড়াও ভিকটিমের মা রিনা বেগম তার ঘরের পাশে হারুন মৃধা থেকে ৫ কড়া জায়গা ক্রয় করিলে হারুন জমি বুঝিয়ে না দেয়ায় উক্ত জমি নিয়েও চরম বিরোধ চলে আসছিল। হারুন মৃধা, রাজ্জাক মৃধা গংদের ঘায়েলের চেষ্টায় ব্যর্থ হইয়া ধৃত আসামী ভিকটিমের চাচা সেন্টু মৃধা ও মা রিনা বেগম কয়েক মাস যাবৎ আলোচ্য মামলার ঘটনার পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইং-০৩-০২-২০২৪ সেন্টুর সাথে রিনা একধিকবার মোবাইলে কথা বলে এবং বাদীর বোন ফরিদার বাড়িতে দুপুরে একসাথে খাবার খায়। সেখানে বসে তারা চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে।একই তারিখ মাগরিবের আগে অর্থ্যাৎ বিকাল ০৫.৩০ ঘটিকার সময় মরিয়ম তার ফুফুর বাড়ি চাচা আলালের ঘরে আলালের নাতনির সাথে খেলতে যায়। ঘটনায় জড়িত সেন্টু মৃধা আলালের ঘরে গিয়ে পান খাওয়ার ছলে মরিয়মকে নজরদারিতে রাখে । মরিয়ম আলালের ঘর থেকে অনুমান ০৬:৪৫ ঘটিকায় বের হয়ে ফুফুর বাড়িতে যাওয়ার সময় সেন্টু তার পিছু নেয়। রাস্তার উপর পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ভিকটিমের মা রিনা বেগম দাঁড়িয়ে ছিল। রিনা ভিকটিম মরিয়মকে বিশ্বাস বাড়িতে ঘুরে আসবে বলে ঘটনাস্থলের দিকে যায়। স্বাভাবিকভাবে মেয়ে মায়ের কথায় বিশ্বাস করে মায়ের সাথে হাটতে থাকে। আসামি সেন্টু সামনে থাকে। সেন্টু ঘটনার একটু আগেই ঘটনাস্থল সামসুর পরিত্যক্ত ভিটায় পৌঁছায়। পরে ভিকটিমকে নিয়ে তার মা রিনাও উক্ত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সেখানে রিনা ভিকটিম যাতে চিৎকার করতে না পারে ভিকটিমের ব্যবহৃত উড়না দিয়ে মুখ বেঁধে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। তখন সেন্টু মৃধা(৫০), রেইনট্রি গাছের ডাল দিয়া ভিকটিমের মাথায় ২ টি ও পায়ে ১টি আঘাত করেলে ভিকটিম তাৎক্ষণিক মৃত্যুবরণ করেন। ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত করে সেন্টু একদিকে ও রিনা বাড়ীর দিকে চলে যায়। রিনা বাড়িতে গিয়ে চিৎকার করে তার মেয়েকে খুঁজতে থাক। তার সন্দেহ হয় যে শরীরের মধ্যে রক্ত লেগে আছে সেজন্য সে রক্ত পরিষ্কার করার জন্য ভিকটিমকে খুজার ছলে পুকুরে লাফ দেয়। মামলার ঘটনায় সেন্টু মৃধাকে গ্রেফতারের পর সে ঘটনার স্বীকার করে। তার দেখানো ও উপস্থাপনমতে ঘটনাস্থলের পার্শ্ব হইতে হত্যা কান্ডে ব্যবহৃত ০৪ টি গিটযুক্ত ০১টি রেইনট্রি গাছের ডাল যাহার দৈর্ঘ্য-৪৭ ইঞ্চি, জব্দ করা হয়। ধৃত আসামী সেন্টু মৃধা ঘটনার দায় স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন এবং মামলার তদন্ত অব্যাহত আছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com