আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। একই দিনে বসন্তের শুরু, পহেলা ফাল্গুন। বছরের অন্যান্য সময়ের চাইতে এ সময়টাতে ভালো ব্যবসার আশা করেন ব্যবসায়ীরা। দিবসটিকে কেন্দ্র করে বাড়তি প্রস্তুতিও নিয়ে রাখেন অনেকে। ক্রেতার চাপ সামলাতে অনেক দোকানি দুই-তিন দিনের জন্য নেন বাড়তি কর্মচারী।
গতকাল শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় সরেজমিনে ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত ফুল মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, বছরের অন্য সময়ের চাইতে এখন ক্রেতা সমাগম কিছুটা বেশি। কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, এসময় বিবাহসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান বেশি হয়ে থাকে। তাই ক্রেতার সংখ্যাও বেশি। তবে ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে বাড়তি লাভের আশা দেখছেন ব্যবসায়ীরা। সাধারণ একটি দিনের তুলনায় এদিন কয়েকগুণ বেশি বিক্রির প্রত্যাশা তাদের।
শাহবাগের এ ফুল মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, এখানে ফুলের দুটি মার্কেট রয়েছে। একটি খুচরা ফুল বিক্রির মার্কেট। আরেকটি পাইকারি মার্কেট। খুচরা মার্কেটে মোট দোকান ৫০টি। পাইকারি ফুলের মার্কেট সরগরম থাকে রাত ১টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত। দিনের বেলা এ মার্কেটে তেমন ক্রেতা-বিক্রেতা থাকেন না। মূলত ঢাকা শহরের ক্ষুদ্র ফুল ব্যাবসায়ীরা এ পাইকারি মার্কেট থেকে ফুল কিনে সেগুলো দোকানে বিক্রি করেন। ঢাকার আসেপাশের অনেক কৃষক সরাসরি এ মার্কেটে এসে ফুল বিক্রি করে থাকেন। সব মিলিয়ে প্রতি রাতে প্রায় ৪০০ জনের মতো বিক্রেতা এখানে ফুল বিক্রি করতে বসেন।
এসব ফুল মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভালোবাসা দিবসে বাড়তি বিক্রি হবে এ আশায় তারা বাগানে আগেভাগেই ফুলের অর্ডার দিয়ে রেখেছেন।
শাহবাগের এ ফুল মার্কেটের মাল পুষ্প কেন্দ্রের দোকানি আব্দুল বারেক বলেন, এখন দিনে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি হয়। বছরের অন্য সময়ে বিক্রি মোটামুটি থাকে। তবে এখন বিক্রি ভালো। আসছে ভালোবাসা দিবসে ভালো বিক্রি হবে বলে আশা করছি। সেদিন দুই লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবো। আমার এখানে ১০ ধরনের ফুল আছে। এখন প্রতিটা গোলাপের দাম ২০ টাকা, ভালোবাসা দিবসে এটার দাম হবে সর্বনি¤œ ৫০-৬০ টাকা।
ফুল সজ্জ্বা দোকানের বিক্রেতা মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ক্রেতার চাহিদা মেটাতে বাগানে অগ্রীম ফুলের অর্ডার দিয়ে রেখেছি। আজকে ভালো মানের গোলাপ ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালোবাসা দিবসে এটা ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হবে। গোলাপী রংয়ের বিদেশী গেলাপ এখন প্রতি পিস ১০০ টাকায় বিক্রি করছি। ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৫০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হবে। বাগান মালিকরাও দাম বাড়িয়েছে। আগের চাইতে বেশি দামে অর্ডার করতে হচ্ছে।
শাপলা পুষ্প কেন্দ্রের ব্যবসায়ী মিরাজ হোসেন শাহেদ বলেন, অন্য বছরের চাইতে এবার ব্যবসা ভালো হবে, রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। এজন্য বিক্রি ভালো হবে আশা করছি। অন্য দিনের চাইতে বিশেষ দিবসে কয়েকগুণ বেশি বিক্রি হয়। ক্রেতা সামাল দিতে দোকানে আমরা অতিরিক্র কর্মচারী রাখি।
শাহবাগ বটতলা ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, এবার বাগান মালিকরা ফুলের দাম বাড়িয়ে রেখেছে। তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। আমাদের টার্গেট প্রায় ১৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করা। দেখা যাক কী হয়। আশা করি এবার ভালো ব্যবসা হবে।
শাহবাগে অবস্থিত পাইকারি ফুল মার্কেটে ঢাকা ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি শ্রী বাবুল প্রসাদ জাগো নিউজকে বলেন, এমনিতেই প্রতিদিন আমাদের এখানে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকার ফুল পাইকারি বিক্রি হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারিতে ৫ কোটি টাকার বেশি ফুল বিক্রি হবে বলে আশা করছি। আমাদের এ মার্কেটে যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, রংপুর, সিলেট, কক্সবাজারসহ মোট ২৪টি জেলা থেকে ফুল আসে। অনেকেই আগে থেকে ফুলের অর্ডার করে রাখে। যেগুলো কম উৎপাদন হয় এবং চাহিদা বেশি, সেগুলোর অর্ডার বেশি থাকে। অনেক চাষি সরাসরি এখানে এসে পাইকারি মূল্যে ফুল বিক্রি করে।