রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
খেলাধুলার মাধ্যমে মাদককে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে-মাফরুজা সুলতানা মাইলস্টোন কলেজে নবম শ্রেণির বালিকাদের অংশগ্রহণে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত বিদেশি প্রভুদের নিয়ে বিতাড়িত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে: তারেক রহমান সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ  ‘বিবেচনায় রয়েছে’: বদিউল আলম ১৬ বছর বঞ্চিতদের এবার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বইমেলয় স্টল বরাদ্দের দাবি ইসির অগাধ ক্ষমতা থাকলেও প্রয়োগে সমস্যা ছিল: বদিউল আলম আমাদের শিক্ষা কর্মসংস্থান খোঁজার মানুষ তৈরি করছে, যা ত্রুটিপূর্ণ: প্রধান উপদেষ্টা সেন্টমার্টিন: ‘স্থানীয়দের জীবিকা বনাম পরিবেশ রক্ষা’ আ. লীগ-জাপা নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবিতে কফিন মিছিল ১৫ বছরের জঞ্জাল সাফ করতে সময় লাগবে: মির্জা ফখরুল

দাওয়াত হোক ইসলামের দিকে

আলী ওসমান শেফায়েত:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২ মার্চ, ২০২৪

দাওয়াত একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ ডাকা, আহ্বান করা। ইসলামে দাওয়াতের সার কথা হচ্ছে, মানুষকে দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তির দিকে আহ্বান করার নামই দাওয়াত। আর যিনি দাওয়াত দেন তাকে বলা হয় দাঈ।
ইসলামের আবির্ভাব শুধু ব্যক্তির কল্যাণের জন্য নয়; সমগ্র মানবজাতির কল্যাণের জন্য। আর ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের সৌভাগ্য দু’টি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল : সালাহ ও ইসলাহ। অর্থাৎ নিজে সংশোধন হওয়া এবং অন্যকে সংশোধন করা। দাওয়াতের কাজ ছাড়া যা কখনো সম্ভব নয়। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে এ পৃথিবীর বাসিন্দা বানিয়েছেন। তিনি তাদেরকে কোনো কিছু ছাড়া পাঠাননি। বরং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার-পানীয় ও পোশাক সৃষ্টি করেছেন। যুগে যুগে তাদের চলার জন্য জীবনাদর্শ নাজিল করেছেন। সর্বকালে ও সর্বস্থানে আল্লাহর নাজিলকৃত আদর্শ অনুসরণ করার মধ্যে ও অন্য সব আদর্শ বর্জন করার মধ্যেই মানবজাতির কল্যাণ ও সুখ নিহিত রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর এ পথই আমার সরল পথ। কাজেই তোমরা এর অনুসরণ করো এবং অন্য পথ অনুসরণ করবে না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। এভাবে আল্লাহ্ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যেনো তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হও’ (সূরা আনআম : ১৫৩)।
ইসলাম হচ্ছে সর্বশেষ আসমানি জীবনব্যবস্থা। আর কুরআন হচ্ছে- সর্বশেষ আসমানি কিতাব। মুহাম্মদ সা: হচ্ছেন- সর্বশেষ নবী ও রাসূল। আল্লাহ তাঁকে এ জীবন-বিধান সব মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এ কুরআন ওহি করা হয়েছে যেন তোমাদেরকে এবং যার নিকট তা পৌঁছবে তাদেরকে এর দ্বারা সতর্ক করতে পারি’ (সূরা আনআম : ১৯)।
আল্লাহ তাঁর রাসূল মুহাম্মদ সা:-কে ইসলাম দিয়ে সব মানুষের কাছে প্রেরণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আপনি বলুন, হে মানুষ! নিশ্চয় আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহর রাসূল’ (সূরা আরাফ : ১৫৮)।
ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়া একটি উত্তম আমল। যেহেতু এই দাওয়াত দানের মাধ্যমে মানুষ সরল পথের দিশা পায়। এর মাধ্যমে মানুষকে তার দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তির পথ দেখানো হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ওই ব্যক্তির চেয়ে আর কার কথা উত্তম হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নেক আমল করে। আর বলে অবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’ (সূরা হামিম আস-সাজদাহ : ৩৩)।
ইসলামের দিকে আহ্বান করা একটি মর্যাদাপূর্ণ মিশন। এটি নবী-রাসূলদের কাজ। রাসূল সা: বর্ণনা করেছেন, তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর মিশন এবং তাঁর অনুসারীদের মিশন হচ্ছে- আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়া। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘বলুন, এটাই আমার পথ, আমি জেনে-বুঝে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকি, আমি এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারা। আর আল্লাহ্ কতই না পবিত্র এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (সূরা ইউসূফ : ১০৮)।
আমভাবে সব মুসলমান এবং খাসভাবে আলেমসমাজকে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল যেন থাকে যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজে নিষেধ করবে; আর তারাই সফলকাম’ (সূরা আলে-ইমরান : ১০৪)। রাসূল সা: বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত হলেও মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দাও’ (সহিহ বুখারি- ৩৪৬১)।
আল্লাহ্র দিকে দাওয়াত দান একটি মহান মিশন ও গুরুদায়িত্ব। কারণ দাওয়াত মানে- মানুষকে এক আল্লাহ্র ইবাদতের দিকে ডাকা, তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসা, অনিষ্টের জায়গায় কল্যাণ বপন করা, বাতিলের বদলে হককে স্থান করে দেয়া। তাই যিনি দাওয়াত দেবেন তার ইলম, ফিকহ, ধৈর্য, সহনশীলতা, কোমলতা, দয়া, জান-মালের ত্যাগ, নানা পরিবেশ-পরিস্থিতি ও মানুষের আচার-অভ্যাস সম্পর্কে অবগতি ইত্যাদি গুণ থাকা প্রয়োজন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আপনি মানুষকে দাওয়াত দিন আপনার রবের পথে হিকমত ও উত্তম কথার মাধ্যমে এবং তাদের সাথে তর্ক করুন উত্তম পদ্ধতিতে। নিশ্চয় আপনার রব, তাঁর পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয়েছে, সে সম্বন্ধে বেশি জানেন এবং কারা সৎপথে আছে তাও তিনি ভালোভাবেই জানেন’ (সূরা নাহল : ১২৫)।
আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে তাঁর রাসূলের ওপর অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করেন, ‘আল্লাহ্র দয়ায় আপনি তাদের প্রতি কোমল-হৃদয় হয়েছিলেন; যদি আপনি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতেন তবে তারা আপনার পাশ থেকে সরে পড়ত। কাজেই আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং কাজ-কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন’ (সূরা আলে-ইমরান : ১৫৯)।
দাঈ বা দাওয়াত দানকারী দাওয়াত দিতে গিয়ে তর্কের সম্মুখীন হতে পারেন। বিশেষত আহলে কিতাবদের (ইহুদি ও খ্রিষ্টান) সাথে। যদি তর্কের পর্যায়ে পৌঁছে যায় সে ক্ষেত্রে আল্লাহ আমাদেরকে উত্তম পন্থায় তর্ক করার নির্দেশ দিয়েছেন। উত্তম তর্ক হচ্ছে- কোমলতা ও দয়ার মাধ্যমে, ইসলামের বুনিয়াদি দিকগুলো তুলে ধরার মাধ্যমে, ঠিক যেভাবে নির্মলভাবে কোনোরূপ জোর-জবরদস্তি ব্যতিরেকে এ বুনিয়াদগুলো এসেছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা উত্তম পন্থা ছাড়া কিতাবীদের সাথে বিতর্ক করবে না, তবে তাদের সাথে করতে পার, যারা তাদের মধ্যে জুলুম করেছে। আর তোমরা বল, আমাদের প্রতি এবং তোমাদের প্রতি যা নাজিল হয়েছে, তাতে আমরা ঈমান এনেছি। আর আমাদের ইলাহ্ তোমাদের ইলাহ্ তো একই। আর আমরা তাঁরই প্রতি মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী)’ (সূরা আনকাবুত : ৪৬)।
আল্লাহ্র দিকে দাওয়াত দেয়ার রয়েছে মহান মর্যাদা ও অফুরন্ত প্রতিদান। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘কেউ হেদায়েতের দিকে আহ্বান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান ছওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করবে তাদের ছওয়াবের কোনো কমতি হবে না। আর কেউ ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান পাপের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করবে তাদেরও পাপের কোনো কমতি হবে না’ (সহিহ মুসলিম-২৬৭৪)।
বৈষয়িক কোনো কিছুর ভিত তৈরি হয়ে পূর্ণতা পেতে যেমন পরিশ্রম ও ধৈর্যের প্রয়োজন তেমনি মানুষের অন্তরগুলো গড়ে তুলতে এবং সেগুলোকে সত্যের পথে নিয়ে আসতে ধৈর্য ও ত্যাগের প্রয়োজন। রাসূল সা: ইসলামের দিকে দাওয়াত দিয়েছেন এবং কাফের, ইহুদি ও মুনাফিকদের নির্যাতনে ধৈর্য ধারণ করেছেন। তারা তাঁর সাথে উপহাস করেছে, তাঁকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছে, কষ্ট দিয়েছে, পাথর ছুড়ে মেরেছে। তারা বলেছে- তিনি জাদুকর, পাগল। তারা তাঁকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বলেছে যে, তিনি কবি বা গণক। এসব কিছুর পরও তিনি ধৈর্য ধারণ করেছেন। এক পর্যায়ে আল্লাহ তাঁকে সাহায্য করেছেন, তাঁর ধর্মকে বিজয়ী করেছেন। তাই দাঈর কর্তব্য হচ্ছে- তাঁর অনুসরণ করা। ‘অতএব আপনি ধৈর্য ধারণ করুন, নিশ্চয় আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি সত্য। আর যারা দৃঢ় বিশ্বাসী নয় তারা যেন আপনাকে বিচলিত করতে না পারে’ (সূরা রূম : ৬০)।
তাই মুসলমানদের কর্তব্য হচ্ছে রাসূলের অনুসরণ করা। তাঁর আদর্শে পথ চলা। ইসলামের দাওয়াত দেয়া। আল্লাহর রাস্তায় কষ্টের মুখোমুখি হলে ধৈর্য ধারণ করা; যেভাবে তাদের রাসূল সা: ধৈর্য ধারণ করেছেন। ‘অবশ্যই তোমাদের জন্য রয়েছে রাসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ, তার জন্য, যে আশা রাখে আল্লাহ্ শেষ দিনের এবং আল্লাহ্কে বেশি স্মরণ করে’ (সূরা আহজাব : ২১)।
এ দ্বীনের অনুসরণ করা ব্যতীত এ উম্মত সুখী হতে পারবে না, কল্যাণ অর্জন করতে পারবে না। এ জন্য আল্লাহ্ সব মানুষের কাছে এ ধর্মকে প্রচার করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটা মানুষের জন্য এক বার্তা, আর যাতে এটা দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা হয় এবং তারা জানতে পারে যে, তিনিই কেবল এক সত্য ইলাহ্ যাতে বুদ্ধিমানগণ উপদেশ গ্রহণ করে’ (সূরা ইব্রাহিম : ৫২)।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com