কক্সবাজার ভ্রমণে আসা পর্যটকদের সাথে আপত্তিকর ছবি তুলে প্রতারণায় লিপ্ত নারী-পুরুষসহ ২৫ জন প্রতারককে ট্যুরিষ্ট পুলিশ আটক করেছে। আটক প্রতারকদের মধ্যে ১৬ জন পুরুষ ও ৯ জন নারী। প্রতারকের কবলে পড়া ভুক্তভোগি পর্যটকের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ শহরের লাইট হাউজ এলাকার টানা গলির ৩টি কটেজ যথা আমীর ড্রীম, শিউলি ও হিলটাউনে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। প্রতারক চক্রের দুই কারবারি আসিফ ও রহিম পলাতক থেকেই সমানে কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে কারবারি আসিফ সদর থানায় ধরা খেয়েও জামিনে থাকার কথা বলে সটকে পড়তে সক্ষম হয়েছে। ট্যুরিষ্ট পুলিশ ও ভুক্তভোগি পর্যটকরা জানিয়েছেন, প্রতারক সিন্ডিকেটভুক্ত কিছু বোরকা পরা নারী সমুদ্র সৈকতে ওঁৎপেতে থাকে। তারা কৌশলে পর্যটকদের সৈকত থেকে কটেজে নিয়ে যায়। আগে থেকেই কটেজে সিন্ডিকেটের কক্ষ ভাড়া নেয়া থাকে। কক্ষে আনার পর নারীদের সাথে জোরপূর্বক পর্যটকদের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। এরপর মোটা অংকের টাকা দাবি করা হয়। না দিলে ছবি ও ভিডিও ভাইরাল করবে বলে হুমকি দিয়ে সর্বস্ব লুটে নেয়। কক্সবাজার সাগর পাড়ের লাইট হাউজ এলাকার লোকজনের অভিযোগ, ওই এলাকার আমিরড্রীম, শিউলি, হিল টাউন, বেলাভুমি ও নাঈমা নামের ৫টি কটেজ ভাড়া নিয়ে প্রতারক সিন্ডিকেট পর্যটকদের নানা কৌশলে ধরে এনে সর্বস্ব হাতিয়ে নিচ্ছে। সিন্ডিকেটের ৫ জন মূল হোতার মধ্যে ইতিমধ্যে ট্যুরিষ্ট পুলিশ সিরাজ সওদাগর, লোকমান ও মো. শাহীন নামের ৩ জনকে প্রায় ৩ সপ্তাহ আগে গ্রেফতারের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। এখনো পর্যন্ত মকসুদ মিয়া আসিফ ও আবদুর রহিম নামের ২ জন পুলিশের গ্রেফতার এড়িয়ে এমন জঘন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শনিবার (২ মার্চ) দুপুরে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি) আপেল মাহমুদ জানান, অবৈধ কার্যকলাপ ও পর্যটকদের ব্ল্যাকমেইল করে সর্বস্ব লুটের অভিযোগে কক্সবাজার শহরের কলাতলীর সাইনবোর্ডহীন তিনটি কটেজ থেকে ২৫ জন নারী-পুরুষকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার (১ মার্চ) গভীর রাতে কলাতলী হোটেল-মোটেল জোনের লাইট হাউস এলাকার ওই তিনটি কটেজে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। আটকদের মধ্যে ১৬ জন পুরুষ ও ৯ জন নারী। তারা কক্সবাজারের মহেশখালী, ঈদগাঁও, সাতকানিয়া ও লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা। শনিবার বিকালে কক্সবাজার ট্যরিষ্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো আপেল মাহমুদ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান-‘ কক্সবাজার সাগর পাড়ে ‘পর্যটক শিকারি’তে নিয়োজিত সিন্ডিকেট নির্মুল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। সিন্ডিকেটের কয়েকজন হোতা ধরা পড়লেও এখনো যারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে তাদের শীঘ্রই পাকড়াও করা হবে।’ তিনি জানান, কয়েকজন ভুক্তভোগি পর্যটক লাইট হাউজ এলাকার ‘পর্যটক শিকারি’ সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে পুলিশের কাছে ঘটনার বিবরণ দেয়ার পরই অভিযান চালানো হচ্ছে। পুলিশ সুপার জানান, গেল মাসেও লাইট হাউজ এলাকার ৩ টি চিহ্নিত কটেজে অভিযান চালিয়ে সিন্ডিকেটের নারী-পুরুষ মিলে ৩৩ সদস্যকে আটক করা হয়েছিল। শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতেও আমীর ড্রীম, শিউলি ও হিলটাউন নামের ৩ টি কটেজে অভিযান চালিয়ে ২৫ জনকে আটক করা হয়। তিনি দুঃখ করে জানান, প্রতারক চক্রের কবলে পড়া পর্যটকরা লজ্জা শরমের ভয়ে সবকিছু দিয়েও রক্ষা পেতে বেশ বেগ পেতে হয়। এ কারণে প্রতারকচক্র নির্মুলে অভিযান অব্যাহত রাখার কথা জানান তিনি। আটক হওয়া প্রতারক পুরুষ সদস্য ও নারী সদস্যরা কক্সবাজারের মহেশখালী, ঈদগাঁও, সাতকানিয়া ও লক্ষীপুর জেলার বাসিন্দা। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।