বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ১০:১৯ অপরাহ্ন

নতুন শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞান

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ২০ মার্চ, ২০২৪

ইতিহাস বলে শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয় ভালো কিছু করার বাসনা থেকেই। সেই বিপ্লবের কয়েকটি প্রজন্ম পার হয়েছে নতুন নতুন প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে। বাংলাদেশে এখন ব্যাপক পরিসরে আলোচনা হচ্ছে “চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ” বা ৪ওজ নিয়ে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মূলত প্রযুক্তি নির্ভর তাই এর সার্বিক দিক বিবেচনায় আনতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে তাল মিলাতে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কতটুকু প্রস্তুত তা এখন উপলব্ধ করার বিষয়। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে তাল মিলাতে নতুন শিক্ষাক্রমের চাহিদা নিরূপণ ও বিশ্লেষণের কাজ শুরু হয়। একাধিক গবেষণা ও বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শক্রমে ২০২১ সালে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ তৈরি করা হয়। ২০২২ সালে ৬২ টি স্কুলে পাইলটিং অর্থাৎ পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয় এই শিক্ষাক্রম। এর ভিত্তিতে ২০২৩ সালে সারাদেশে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন পাঠ্যক্রম চালু করা হয়, এবং ২০২৪ সালে অষ্টম ও নবম শ্রেণী সহএর বিস্তরণ শুরু হয়। নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যপুস্তক গুলো সজ্জিত হয় নতুনভাবে। এখানে শিক্ষার্থীরা প্রতিটি শ্রেণীতে বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতা অর্জন করবে এবং সেই যোগ্যতা অনুসারে তাদের মূল্যায়ন করা হবে। নতুন কারিকুলামের স্লোগান হলো “শিখন হবে অভিজ্ঞতায় মূল্যায়ন হবে যোগ্যতায় ” এই কারিকুলাম এ বিজ্ঞান বিষয়ের জন্য রয়েছে দুটি বই। একটি অনুশীলনী অন্যটি অনুসন্ধানী বই। অনুশীলনী বইতে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে কাজ করবে এবং কাজ করতে গিয়ে যেখানে অনুসন্ধান প্রয়োজন সেখানে অনুসন্ধানী বই থেকে খুঁজে নেবে। অনুশীলনী বইয়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে কখন অনুসন্ধানের বইয়ের সাহায্য নিতে হবে। এখানে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই সমস্যার সমাধান করবে শিক্ষকেরা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বিজ্ঞান বইটি নানা ধরনের অভিজ্ঞতায় সাজানো হয়েছে, এখানে বলে রাখা ভালো, অধ্যায়ের পরিবর্তে অভিজ্ঞতা বলা হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রমে। নতুন কারিকুলামে বিজ্ঞান শিক্ষায় ব্যবহারিক দিককে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীরা ফেলনা জিনিস ও স্বল্পমূল্যের উপকরণ ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের প্রজেক্ট উপস্থাপন, অ্যাসাইনমেন্ট, বিতর্ক, গ্রুপ ওয়ার্ক, ও খেলাধুলার মাধ্যমে বিজ্ঞান চর্চা করবে। ফলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এতে বিজ্ঞান শিখন হবে আনন্দদায়ক ও ভীতিমুক্ত। বিজ্ঞান শিক্ষায় ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলাধুলার মাধ্যমে গতি, দূরত্ব, সরণ ও ত্বরণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করবে এবং “চলো নৌকা বানাই “অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষার্থীরা নৌকা বানাতে বানাতে বস্তুর ভেসে থাকা, ডুবে যাওয়া, বস্তুর ঘনত্ব সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে আত্মস্থ করতে পারবে। সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা “সূর্যালোকের রান্না” অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সূর্যালোক ব্যবহার করেও যে রান্না করা যায় তার একটি প্রজেক্ট তৈরি করবে। অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা “যাযাবর পাখির সন্ধান ” করতে করতে বিভিন্ন মহাদেশের অবস্থান নির্ণয় করতে পারবে। অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ চিহ্নিত করতে পারবে। এবং নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা “আমার বংশ লতিকা ” অভিজ্ঞতায় পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের মধ্যে বাহ্যিক ও আচরণিক যে মিল থাকে তার রহস্য উদঘাটন করবে। অর্থাৎ নতুন কারিকুলামে মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান শিক্ষার পরিধি বিস্তর। একজন বিজ্ঞান শিক্ষকের উপর গুরু দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে এই বিস্তর পরিধিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহজভাবে উপস্থাপন করার। সেজন্য প্রয়োজন একজন দক্ষ শিক্ষক যা তাঁর কাজের প্রতি রয়েছে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা এবং বিজ্ঞানের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। নয়তো নতুন শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞান শিখন এখানেই ব্যর্থ হয়ে যাবে। শিক্ষার মান উন্নত করতে প্রয়োজন মেধাবী শিক্ষক, মানসম্পন্ন বই, শিক্ষা উপকরণ, আধুনিক গ্রন্থাগার, আধুনিক ল্যাব, শিক্ষা সহায়ক পরিবেশ। পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যক্রম যেমন খেলাধুলা কবিতা বক্তৃতা বিতর্ক প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা নিতে শিক্ষার্থীদের আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি হাতে কলমে কাজ করার দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
সালমা জামান পপি
সহকারী শিক্ষক (বিজ্ঞান)
দেবিদ্বার মফিজ উদ্দিন আহমেদ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
দেবিদ্বার, কুমিল্লা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com