সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০২:২৬ অপরাহ্ন

দুর্বল ব্যাংক একীভূত করা নিয়ে উৎকণ্ঠা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে কড়াকড়ি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৪

দুর্বল ব্যাংকগুলোকে এখন রীতিমতো ভয় পাচ্ছে সবল বা ভালো ব্যাংকগুলো। শক্তিশালী অবস্থানে আছে এমন ব্যাংকের ওপর দুর্বল কোন ব্যাংককে চাপিয়ে দেওয়া হবে তা নিয়ে ব্যাংকপাড়ায় চলছে নানা গুঞ্জন, নানা আলোচনা। এরই মধ্যে হঠাৎ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) সাংবাদিকরা আগের নিয়মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারেননি। ওপরের নির্দেশে সাংবাদিক প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
মূলত রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে থাকা ব্যাংকের তালিকা প্রকাশ করার পর বিভিন্ন পক্ষের চাপ সহ্য করতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকের একীভূতকরণের বিষয়টি। বিশেষ করে ভালো ব্যাংকের পরিচালক-কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, যে প্রক্রিয়ায় এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংককে একীভূত করা হচ্ছে, তাতে ভালো ব্যাংকগুলোর ওপর খারাপ ব্যাংক চাপিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার জন্য দুর্বল ব্যাংকের তালিকা করেছে। দেশের ৫৪টি ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে ৩৪টি ব্যাংককে দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্য থেকে আগামী বছরের শুরুর দিকে ১০ ব্যাংককে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার কথা ভাবছে তারা। ৫৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১২টি ব্যাংক খুব নাজুক অবস্থায় আছে। তার মধ্যে ৯টি রেড জোনে চলে গেছে। ইয়েলো জোনে থাকা ২৯টি ব্যাংকের মধ্যে ৩টি ব্যাংক আবার রেড জোনের খুব কাছাকাছি অবস্থানে আছে। মাত্র ১৬টি ব্যাংক গ্রিন জোনে আছে। এর মধ্যে ৮টিই বিদেশি ব্যাংক। গ্রিন জোনে দেশীয় ব্যাংকের সংখ্যা মাত্র ৮টি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দুর্বল ব্যাংকগুলো চাইলে স্বেচ্ছায় একীভূত হতে পারবে। সেটি না হলে আগামী বছরের মার্চে নীতিমালা অনুযায়ী যারা দুর্বল তালিকায় পড়বে, তাদের একীভূত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রসঙ্গত, ইতোমধ্যে শরিয়াভিত্তিক এক্সিমের সঙ্গে সুদে লেনদেন করা পদ্মা ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকটি ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই করানোর ব্যাপারে আলোচনা শুরু হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, একীভূত করে ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্তটি ভালো। তবে ভালো কোনও ব্যাংকের ওপর চাপ প্রয়োগ করে দুর্বল ব্যাংককে চাপিয়ে দেওয়া উচিত হবে না। এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পদ্মা ব্যাংককে একীভূত করে নেওয়ার সিদ্ধান্তটি ভালো হলেও কোনও ব্যাংককে আরেকটি ব্যাংকের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড . সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকগুলোকে স্বেচ্ছায় একীভূত হওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। চাপ দিয়ে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে খারাপ ব্যাংক একীভূত করলে তার ফল ভালো নাও হতে পারে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘ব্যাংকস হেলথ ইনডেক্স (বিএইচআই) অ্যান্ড হিট ম্যাপ’শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, হাতে গোনা মাত্র ১৬টি ব্যাংক (৮টি দেশি ও ৮টি বিদেশি) ছাড়াও বাকি সব ব্যাংক সমস্যাগ্রস্ত।এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংকটে, অর্থাৎ রেড জোনে আছে– বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, ন্যাশনাল ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও এবি ব্যাংক। অপেক্ষাকৃত দুর্বল ইয়েলো জোনে আছে– রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকসহ ১৯টি বেসরকারি ব্যাংক এবং আটটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক আছে। এই তালিকার বেসরকারি ব্যাংকগুলো হলো—আইএফআইসি, মেঘনা, ওয়ান, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, এনআরবি, এনআরবি কমার্শিয়াল, মার্কেন্টাইল, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ডাচ-বাংলা, প্রিমিয়ার, ব্র্যাক, সাউথইস্ট, সিটি, ট্রাস্ট, এসবিএসি, মধুমতি, ঢাকা, উত্তরা ও পূবালী ব্যাংক। শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো হলো—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী, আল আরাফাহ, স্ট্যান্ডার্ড, ইউনিয়ন, এক্সিম ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।
আর নিরাপদ অবস্থানে থাকা গ্রিন জোনে আছে— প্রাইম, ইস্টার্ন, হাবিব, এনসিসি, মিডল্যান্ড, ব্যাংক আলফালাহ, ব্যাংক এশিয়া, সীমান্ত, যমুনা, শাহজালাল ইসলামী, উরি, এইচএসবিসি, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, সিটি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংককে এই বিশ্লেষণ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তথ্য-উপাত্তের অভাবে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটিজেনস ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।- বাংলা ট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com