রাজশাহীর পাইকারি কাঁচাবাজারে সব ধরনের সবজির দাম কমলেও তার প্রভাব পড়েনি খুচরা বাজারে। পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে আসতেই সবজির দাম বেড়ে যাচ্ছে দ্বিগুণ বা তিনগুণ।
বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারেই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে তাদের। আর ক্রেতারা বলছেন বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি সংস্থাগুলোর কঠোর মনিটরিং প্রয়োজন। রাজশাহীর খড়খড়ি পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খড়খড়ি বাজারে যে দামে সবজি মিলছে সেই দামের দ্বিগুণ বা তিনগুণ দামে মিলছে খুচরা বাজারে। খড়খড়ি থেকে রাজশাহী সাহেব বাজারের সর্বোচ্চ দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। মাত্র ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতেই এসব সবজির দাম বাড়ছে তিনগুণ পর্যন্ত। শুক্রবার (২২ মার্চ) খড়খড়ি পাইকারি বাজারে আট টাকা কেজি বেগুন বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এদিন খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে। পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। পাইকারি বাজারের ৪০ টাকার কাঁচামরিচ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। পাইকারি বাজারের ৩০ টাকার করলা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।
এদিকে কেজিতে দশ টাকা কমে শশা বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। লেবু বিক্রি হচ্ছে প্রতিহালি ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। মুগডাল ছাড়া কমেছে সব ধরনের ডালের দামও। কেজিতে ৩০ টাকা কমে খেসারি ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। মসুর ডাল কেজিতে দশ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি।
কেজিতে ১৫ টাকা কমে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ টাকায়। তবে গরু ও খাসির মাংস রয়েছে আগের দামেই ৭৫০ ও ১১০০ টাকা। রাজশাহী খড়খড়ি হাটে বেগুন বিক্রি করতে এসেছিলেন পবা উপজেলার চাষি হাফিজুল। তিনি বলেন, এক বিঘা বেগুন চাষ করতে ৩৫-৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। সেখানে বাজারে বেগুন বিক্রি করতে হচ্ছে কেজি প্রতি ৮-১০ টাকায়। আমার উৎপাদন খরচতো দূরের কথা, যে লেবার দিয়ে এগুলো বাজারে এনেছি সেটাইতো উঠবে না। তবে রাজশাহী খড়খড়ি হাটের পাইকারি ব্যবসায়ী মিনহাজুল ইসলাম বলেন, সব বেগুনতো আর ১০ টাকা না। কিছু বেগুন ১৩-১৪ টাকাতেও কিনতে হচ্ছে। গড়ে আমরা সেই বেগুন ১৮-২০ টাকা বিক্রি করছি।
অপরদিকে রাজশাহীর সাহেব বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মো. সিদ্দিক বলেন, যে দামে কিনেছি তার থেকে মাত্র ১-৩ টাকা লাভ করছি। পাইকারি আড়তেই দাম বেশি পড়ছে। এছাড়াও আনতে খরচ হচ্ছে। সব মিলে আমাদের কিছু করার থাকে না। পাইকারি বাজারে দাম কমলেই আমরা কমিয়ে দেবো।
রাজশাহী সাহেব বাজারের ক্রেতা মুস্তাকিম ইসলাম বলেন, পাইকারি আর খুচরা বাজারের যে তফাত এটি ব্যবসায়ীদের কারচুপি ছাড়া কিছুই না। সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। আমরা খবরেও দেখছি চাষিরা পণ্যের দাম পাচ্ছে না। কিন্তু বাস্তবেতো সেই দৃশ্য নেই। আমাদেরতো সেই বেগুন-লাউ ২৫-৩০ টাকাতেই কিনতে হচ্ছে। আমার চাই বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি সংস্থাগুলোর কঠোর মনিটরিং হোক। তাহলেই বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে। রাজশাহী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অদিপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ইব্রাহীম হোসেন বলেন, সবজির দাম হাওয়ায় বলা যাবে না। এটি সরেজমিনে দেখে তারপর বলতে হবে। রাজশাহী জেলা বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা আফ্রিন হোসেন বলেন, আমরাতো মনিটরিং করছি। তারপরও এখানে এতগুলো হাতবদল হয়, এরজন্য দামটি বেড়ে যাচ্ছে। যেমন ধরেন দুই দিন আগে আমরা বাঘায় গেছিলাম, সেখানে লাউ ১ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কৃষক দাম না পেয়ে লাউ বাজারে ফেলে চলে যাচ্ছে। এদিকে সাহেব বাজারে লাউ ভোরের দিকেই ২০-২৫ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। আমরা বাজারে সংযোগ করে দিয়েছি। কৃষকরা এখন সরাসরি সাহেব বাজারেই বিক্রি করতে পারবেন।