শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৫ অপরাহ্ন

পলাশ ফুলে সেজেছে ধনবাড়ী সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস

জহিরুল ইসলাম মিলন (ধনবাড়ী) টাঙ্গাইল
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৫ মার্চ, ২০২৪

হলুদ গাঁদার ফুল, রাঙা পলাশ ফুল… এনে দে এনে দে, নইলে রাঁধব না বাঁধব না চুল’ চুল বাঁধতে খোপায় পলাশ ফুলের পরিপূরক যে আর কিছু নেই কবি নজরুলের ভাষায় তা স্পষ্ট। ফুলের প্রতি দুর্বলতা মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। আর ফুলটি যদি হয় পলাশ তবে তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ সবাই। পলাশ ফুল নিয়ে রয়েছে শত গান, কবিতা। শীতের শুষ্কতা ও রুক্ষতাকে কাটিয়ে সজীবতা ফিরিয়ে আনে ঋতুরাজ বসন্ত। পাতাশূন্য বৃক্ষরাজি ভরে যায় সবুজ পাতার ছোঁয়ায়। পলাশ ফুলের হাসি যেন গাছ ভর্তি আগুনের বহিঃপ্রকাশ। পলাশের এই আবেদন কাছে টানে সবাইকে। তেমনই পলাশের এই রক্তাভ সৌন্দর্যে সেজেছে ধনবাড়ী সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস। কলেজের ২ প্রবেশদ্বারের যেটি দিয়েই প্রবেশ করা হোক না কেন, চোখ চলে যায়। ৩ শতাব্দী ধরে চলা কলেজের প্রশাসন ভবনের পূর্ব পাশে মেইন ঘেটের কোল ঘেঁষেই বেড়ে উঠেছে ১টি আগুনরাঙা পলাশ ফুলের গাছ। চোখ জুড়ানো পলাশের হাসি যেন সবুজের বুকে এক টুকরো আগুনের স্ফুলিঙ্গ। পলাশের লাল রংয়ের বিচ্ছুরণ দৃষ্টি কাড়ে সকলের। যেই ফুলে মুগ্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কর্মচারি কিংবা দর্শনার্থীরাও। গাছের প্রতিটি ডাল ছেয়ে গেছে রক্তাভ পলাশে। চোখজুড়ে খেলা করে লালের আভা। গাছের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা ফুল যেন লালগালিচা। শহিদ মিনারের বেদীতে পড়ে ফুলের আস্তরণ। এই আস্তরণ মনে করিয়ে দেয় শহীদের রক্তের কথা। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সেই রক্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই হয়তো প্রতিদিন শত-সহস্র লাল পলাশ আত্মহুতি দেয় শহিদ মিনারে। গাছভরা পলাশের সৌন্দর্য একদিকে যেমন ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে তেমনি এ নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে। পলাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে নানা বয়সি দর্শনার্থী আসছেন ক্যাম্পাসে। ভিড় জমাচ্ছেন পলাশ গাছের নিচে। অনেকেই পড়ে থাকা পলাশ সংগ্রহ করে মনের খোরাক মিটাচ্ছেন। ফটোসেশনে মেতে উঠছেন তরুণ-তরুণীরা। আর এসব ছবিই ভেসে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওয়ালে। এ নিয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুলতান আহম্মেদ বলেন, রূপ নিয়েই প্রকৃতিতে আবির্ভাব ঘটে ঋতুরাজ বসন্তের। ধনবাড়ী সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসের পলাশ ফুলও সেটিই প্রকাশ করছে। গাছে গাছে আগুন ঝরা পলাশ ফুল জানান দিচ্ছে বসন্তের আগমন। যেন কলেজ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে বহুগুণ। সাহিত্যে পলাশকে কিংশুক বা অরণ্যের অগ্নিশিখা বলে উল্লেখ করে এই শিক্ষার্থী বলেন, পলাশ গাছের দিকে তাকালে মনে হয় যেন ভালোবাসার অগ্নিশিখা ফুটে উঠেছে। কবি-সাহিত্যিকরা পলাশ ফুল নিয়ে অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেছেন। তাই ফুলটি দেখলে যে কারো মন সাহিত্যে ডুবে যেতে বাধ্য। ঋতুরাজ বসন্তে প্রকৃতি যে প্রাণ ফিরে পেয়েছে সেটিকে নতুন রূপ দিয়েছে এটি। ধনবাড়ী উপজেলা প্রেসক্লাব এর সাধারণত সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মিলন পলাশের সাথে ভাষা আন্দোলনের আত্মিক সম্পর্ক উল্লেখ করে তিনি বলেন, রক্তাভ পলাশ দেখলেই ভাষা আন্দোলনের কথা মনে হয়। এর লাল রঙের মাঝেই এক রকম প্রতিবাদী বহিঃপ্রকাশ রয়েছে। প্রসঙ্গত, পলাশ বা ‘কিংশুক’-এর ইংরেজি নাম ‘ঋষধসব ড়ভ ঃযব ভড়ৎবংঃ’। এবং বৈজ্ঞানিক নাম ইঁঃবধ সড়হড়ংঢ়বৎধ (বুটিয়া মনোস্পার্মা)। গাছটির উচ্চতা গড়ে প্রায় ১২ থেকে ১৫ মিটার। থোকায় থোকায় ফুলে পূর্ণ থাকে শাখা-প্রশাখা। কুঁড়ি দেখতে অনেকটা বাঘের নখের মতো। গাছটির বাকল ধুসর রঙ বিশিষ্ট।
আঁকাবাঁকা শাখা-প্রশাখা ও কা-বিশিষ্ট পলাশের পাতা রেশমের মতোই সুক্ষ্ম। গাঢ় সবুজ পাতা ত্রিপতি দেখতে মান্দার পাতার মতো হলেও আকারে অনেক বড়। শীত মৌসুমে পাতা ঝরা গাছটি ফুল ফোটার সময় থাকে পাতা শূন্য। নরম শাখা-প্রশাখাবিশিষ্ট গাছটির ফুল শেষে ধরে ফল। পলাশের ফল দেখতে অনেকটা শিমের মতো। বীজ ও ডাল কাটিংয়ের মাধ্যমে পলাশের বংশ বিস্তার করা হয়। সুবাস না থাকলেও সৌন্দর্য ছড়াতে জুড়ি নেই পলাশের। আছে ঔষধি গুণাগুণও। পলাশের বিচি থেকে দেশীয় ভেষজ ঔষধ প্রস্তুত করা হয়। জনশ্রুতি আছে, পলাশ গাছের শেকড় থেকে মজবুত দঁড়ি তৈরি করা হতো এক সময়। আর এর পাতা দিয়ে তৈরি হতো থালা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com