কোরআন নাজিলের মাসে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন করা অন্য মাসের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি সাওয়াব পাওয়ার উপায়। এটি শুধু পবিত্র রমজান মাসের বিশেষ বরকত। তাফসিরে উসমানীতে উল্লেখ আছে, শুধু কোরআন নয়,ইব্রাহিম (আ.)-এর সহিফা,তাওরাত, জাবুর,ইঞ্জিলসহ সমস্ত আসমানি কিতাব এ মাসেই অবতীর্ণ হয়েছে। নবীজি (সা.)-এর রমজানের আমল ছিল কোরআনকেন্দ্রিক। নবীজি (সা.) জিবরিল (আ.)-এর সাথে রমজানের প্রতি রাতে কোরআনুল কারিম দাওর অর্থাৎ একে অপরকে শুনাতেন। হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত জিবরীল (আ.) রমজানের প্রতি রাতে নবীজি (সা.)-এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং নবীজি (সা.) তাকে কোরআনুল কারিম শোনাতেন।’ (বুখারি : ১৯০২)। এসব ঘটনা থেকে রমজান মাসের মর্যাদা ও কোরআনের সঙ্গে এর গভীর সম্পর্ক ও বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
রমজান যেমন কোরআন নাজিলের মাস, তেমনি কোরআন তিলাওয়াতেরও মাস। কোরআন শেখা ও শেখানোর মাস। কোরআন শুদ্ধ করার মাস। কোরআন শোনা ও শোনানোর মাস। বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, রোজা ও কোরআন কেয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে প্রতিপালক!! আমি তাকে খাদ্য ও যৌনসম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি, (অর্থাৎ না ঘুমিয়ে সে তিলাওয়াত করেছে) অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। নবীজি (সা.) বলেন, অতঃপর তাদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’ (মুসনাদে আহমদ : ৬৬২৬; মুসতাদরাকে হাকিম : ২০৮০)
আল্লাহর নবীর সাহাবীরা রমাদ্বন মাসে গুরুত্বসহকারে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। তারা রমাদ্বনের রাতে ১০০ আয়াত বিশিষ্ট বা তার চেয়ে বড় সূরা দিয়ে নামাজ আদায় করতেন। এমনকি পবিত্র এই মাসে কেউ কেউ লাঠিতে ভর দিয়ে নামাজ দীর্ঘায়িত করতেন। হযরত উসমান ইবনে আফফান (রা.) এক রাতেই কুরআন খতম করতেন। (ফাজায়েলে কোরআন, আবু উবাইদ : ১/৩৫১)। আর এ কথা তো প্রসিদ্ধ যে, ইমাম মালেক (রহ.) রমাদ্বন মাসে হাদিস, ফিকাহ ও অন্যান্য বই বন্ধ করে দিতেন এবং শুধু কোরআন নিয়ে মগ্ন হতেন। একইভাবে ইমাম শাফেয়ী (রহ.) রমজানে ৬০ বার কোরআন খতম করতেন।
ইয়াহইয়া ইবনে নাসর বলেন, ‘ইমাম আবু হানিফা (রহ.) অনেক সময় রমজান মাসে ৬০ বার কোরআন খতম করতেন।’ (তারিখে বাগদাদ, খতিব বাগদাদি : ১৩/৩৫৭)। ইমাম বুখারি (রহ.) রমজান মাসে প্রতি রাতে একবার কোরআন খতম করতেন। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ১১/১৩৪) রমজান মাসে ইবাদতের প্রতিদান বহুগুণ বৃদ্ধি পায়, যা বিভিন্ন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। অতএব আমাদের প্রত্যেকের উচিত রমজান মাসে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা। অন্তত একবার হলেও কোরআন মজিদ খতম করা। কোরআন পড়তে না জানলে কোরআনের ভালো অভিজ্ঞ কোনও ওস্তাদের কাছে গিয়ে কোরআন শেখা। রমজান মাস কোরআন শেখার সুবর্ণ সুযোগ। একটু চেষ্টা করলেই এই গৌরব অর্জন করা যায়। আমরা রমজান মাস পার করি; কিন্তু কোরআন শেখার কোনও গুরুত্ব উপলব্ধি করি না। অথচ কোরআনের আলো ছাড়া আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া কখনও সম্ভব নয়। তাই পবিত্র রমজানে আমাদের অঙ্গীকার হোক বিশুদ্ধ কোরআন তিলাওয়াত শেখা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে বিশুদ্ধ কোরআন তিলাওয়াত শিখে কোরআন অনুযায়ী জীবন গড়ার তৌফিক দান করুন, আমীন।