টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি ইউনিয়নের মুশুদ্দি মধ্যপাড়া গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করেন ডায়াবেটিক ধান।
ডায়াবেটিস রোগীর কথা চিন্তা করে স্বল্পপরিমাণ কার্বোহাইড্রেটসম্পন্ন পুষ্টিকর ব্রি ধান-১০৫ নামের ‘ডায়াবেটিক ধান’ উদ্ভাবন করে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি), গাজীপুর। নতুন এই ধান চাষে আশানুরূপ ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। যার বাজারমূল্যও বেশি পাওয়া যাবে এবং এ ধান ভবিষ্যতে দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস কৃষিবিজ্ঞানীদের। এই জাতের ধান প্রথমবারের মতো প্রদর্শনী প্লট হিসেবে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি গ্রামের তিন কৃষক চাষ করেন। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্রি ধান-১০৫ অন্য জাতের ধানগাছের চেয়ে বৈশিষ্ট্যগতভাবে কিছুটা আলাদা। সবুজ ও খাড়া ডিগপাতা আর মাঝারি লম্বা ও চিকন ধানের দানা। এটি স্বল্পপরিমাণ কার্বোহাইড্রেটসম্পন্ন। যা ডায়াবেটিক রোগীর জন্য উপযোগী। দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণেও এই ধান কার্যকর ভূমিকা রাখবে। যার বীজ কৃষক নিজেরাই উৎপাদন ও সংরক্ষণ করতে পারবেন। ডায়াবেটিক ধান চাষ করা মুশুদ্দি গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, ৫০ শতক জমিতে কৃষি অফিসের পরামর্শে ব্রি ধান-১০৫ প্রদর্শনী প্লট হিসেবে আবাদ করেছি। এই ধানে রোগবালাই নেই বললেই চলে। একই খরচে অন্য জাতের চেয়ে ফলনও বেশি। বিঘাপ্রতি ২৮ মণ ধান পেয়েছি। একই গ্রামের আরেক কৃষক গোলাম মোস্তাফা ভুট্টু এর স্ত্রী তানজিনা আক্ত বলেন, নতুন এই জাতের ধানের ফলন খুবই ভালো। গড়ে বিঘাপ্রতি ২৯ মণ পেয়েছি। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এই ধান আমাদের থেকে থেকে সংগ্রহ করবে। তারা নিয়মিত আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুদুর রহমান বলেন, ধান চাষে এই অঞ্চল খুবই উপযোগী। নতুন জাতের এই ধান যারা চাষ করেছেন তাদের ক্ষেতে গিয়ে বিভিন্ন সময় পরামর্শ দিয়েছি। পর্যাপ্ত বীজ পেলে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আমেনা খাতুন বলেন, দেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এসব রোগীর কথা চিন্তা করে ব্রি ধান-১০৫ নামের ডায়াবেটিক ধান উদ্ভাবন করা হয়েছে। এটি বোরো মৌসুমের একটি কম জিআইসম্পন্ন, রোগবালাই ও পোকামাকড় আক্রমণরোধক ধান। গড় ফলন হেক্টরে ৭ দশমিক ৬ টন। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে অনুকূল পরিবেশে হেক্টরপ্রতি ৮ দশমিক ৫ টন পর্যন্ত ফলনও পাওয়া সম্ভব। এর জীবনকাল ১৪৮ দিন। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবীর বলেন, দেশে যেন কখনও খাদ্য ঘাটতি দেখা না দেয়। সেজন্য উচ্চ ফলনশীল নতুন নতুন ধানের জাত উদ্ভাবনে গবেষণায় জোর দেওয়া হয়েছে।