বর্তমানে নানা ধরনের ফ্লেভার্ড টি বা সুগন্ধী চা পান করেন অনেকেই। এসবের স্বাস্থ্য উপকারিতাও অনেক। ক্যামোমাইল, পেপারমিন্ট ও আদা চায়ের মতো ভেষজ চা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।
এসবে থাকা পুষ্টিগুণ হৃদরোগ, হজমের সমস্যা এমনকি ঘুমের গুণমান বজায় রাখতেও সাহায্য করে। চাইলে আপনিও পছন্দমতো পান করতে পারেন একাধিক পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ১০ ধরনের সুগন্ধি চা। এসব চা পানে শুধু প্রশান্তিই মিলবে না বরং সারবে নানা ধরনের রোগও।
ক্যামোমাইল চা: ক্যামোমাইল চা জনপ্রিয় এর শান্ত প্রভাবের জন্য। অনিদ্রার সমস্যায় যারা ভোগেন, তাদের জন্য এই চা হতে পারে দুর্দান্ত কার্যকরী। কারণ এই চা ঘুম সহায়ক। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এই চা প্রাপ্তবয়স্ক ও গর্ভবতী নারীদের ঘুমের গুণমান উন্নত করতে পারে।
ক্যামোমাইল চায়ে থাকে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও লিভার-সুরক্ষাকারী প্রভাব। অন্যান্য গবেষণায় আরও দেখা গেছে, এই চা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে ও প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিন্ড্রোম থেকেও মুক্তি দেয়।
পেপারমিন্ট চা:পেপারমিন্ট চা হজম সহায়ক। এতে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ক্যানসার, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ভাইরাল বৈশিষ্ট্য। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, পেপারমিন্ট বদহজম, বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা ও ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের অন্যান্য উপসর্গ উপশম করতে সাহায্য করে।
আদা চা: আদা চা পানে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বমি বমি ভাব দূর করতেও সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, আদা বমি বমি ভাব দূর করতে কার্যকরী, বিশেষ করে গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে। এছাড়া আদা পেটের আলসার প্রতিরোধ করতে, বদহজম উপশম করতে ও মাসিকের ব্যথা কমাতেও সাহায্য করতে পারে। আরও বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, আদায় থাকা পুষ্টিগুণ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও লিপিডের মাত্রা উন্নত করতে পারে।
গ্রিন টি: গ্রিন টি বা সবুজ চায়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। এ চা পান করলে শুধু ওজনই কমে না বরং শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়। সায়েন্স ডেইলিতে প্রকাশিত ওহিও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণার তথ্য অনুসারে দাবি করা হয়, গ্রিন টি স্থূলতার ঝুঁকি কমাতে পারে। এছাড়া শারীরিক বিভিন্ন প্রদাহ সারায় এই চা। মানব শরীরে এই চায়ের প্রভাব নিয়ে করা আরেক গবেষণা অনুসারে, গ্রিন টি খেলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রিন টি অন্ত্রের খারাপ ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়িয়ে তোলে। ফলে বিপাক হার বেড়ে যায়। এর ফলে ওজনও কমতে থাকে দ্রুত।
হিবিস্কাস চা:এই চায়ের রং দেখলেই মন জুড়িয়ে যায় সবার। এছাড়া এর গন্ধও দারুণ। হিবিস্কাস চায়ের স্বাস্থ্য উপকারিতাও অনেক। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, হিবিস্কাস শরীরের এলডিএল (খারাপ) কোলেস্টেরল কমাতে পারে, সঙ্গে রক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করে। এমনকি এই চা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতেও সাহায্য করে।
ইচিনেসিয়া চা: ইচিনেসিয়া চা সর্দি প্রতিরোধে দারুণ কার্যকরী। গবেষণায় দেখা গেছে, ইচিনেসিয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে রক্ষা করতে পারে। ফলে লক্ষণগুলোর তীব্রতা কমতে পারে।
রুইবোস চা:রুইবোস একটি ভেষজ চা, যা ঐতিহাসিকভাবে ওষুধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, রুইবোস চায়ে অ্যান্টি অ্যালার্জি প্রভাব আছে। এছাড়া এই চা পানে হাড়ের ক্ষতি এড়ানো যায়।
অস্টিওপরোসিসের মতো ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে এই চা নিয়মিত পান করতে পারেন। এছাড়া রুইবোস চা রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমাতে পারে।
সেজ টি: সেজ একজাতীয় উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম সালভিয়া অফিসিনালিস। সেজের টি’র ওষুধি গুণ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই চা আলঝাইমার রোগীদের জ্ঞানীয় কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।
একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি গবেষণায় সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের মানসিক কার্যকারিতা ও স্মৃতিশক্তির উন্নতিও পাওয়া গেছে যখন তারা বিভিন্ন ধরণের সেজের নির্যাস পান করেছেন। এছাড়া কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে ও হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও সাহায্য করে এই চা।
লেমন বাম টি: সুগন্ধিযুক্ত আরও এক ধরনের চা হলো লেমন বাম টি। এই চা পান করলে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও মানসিক অবনতির ঝুঁকি কমে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, লেবু বাম চায়ে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরে স্বাস্থ্যকর এনজাইম বাড়াতে সাহায্য করে, যা শরীরকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে।
রোজ হিপ চা: রোজ হিপ চায়ে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও উপকারী উদ্ভিদ যৌগ আছে। এতে আরও আছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য। বেশ কিছু পুরোনো গবেষণায় পাওয়া গেছে, রোজ হিপ পাউডার প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
শরীরের বিভিন্ন ব্যথা এমনকি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও অস্টিওআর্থ্রাইটিসের লক্ষণগুলো উন্নত করতে পারে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, এই চা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও উপকারী। সূত্র: হেলথলাইন