রাজধানীর কূটনীতিক এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল হককে খুব কাছ থেকে গুলি করেন আরেক কনস্টেবল মো. কাওসার আলী। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান মনিরুল। এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় আসামি কাওসারের সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শুনানিতে আসামিকে বিচারক প্রশ্ন করেন, আপনি পালিয়ে গেলেন না কেন? উত্তরে কাওসার বলেন, আমি তো ডিরেক্ট (সরাসরি) গুলি করেছি, পালাবো কেন? গত রোববার (৯ জুন) কাওসারকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাকিল আহাম্মদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে দশদিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মান্নাফ।
আদালতে দেখা যায়, কাওসারকে আদালতের কাঠগড়ায় রাখা হয়। এমতাবস্থায় এক সহপাঠী তাকে দেখতে আসেন। কাওসারকে তার বন্ধু প্রশ্ন করেন, বন্ধু এ কাজটা কেন করলি। মাথা ঠান্ডা রাখতে পারলি না। উত্তরে কিছু বলেনি কাওসার। এমন সময় শুনানির জন্য এ মামলায় ডাকেন গুলশান থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই শাহ আলম। শুনানির একপর্যায়ে বিচারক কাওসারকে বলেন, আপনি পালালেন না কেন? উত্তরে কাওসার বলেন, আমি তো সরাসরি গুলি করেছি, পালাবো কেন? এসময় বিচারক তার সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কাওসারের পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে ছিলেন না। কাঠগড়ায় থাকা অবস্থায় কাওসার এলোমেলো কথা বলতে থাকেন। অনেকে বলছিলেন, সে এখন মানসিকভাবে অসুস্থ।
রিমান্ড আবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আসামি মো. কাওসার আলীর সঙ্গে বারিধারা ডিপ্লোম্যাটিক জোনে অবস্থিত ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে রাত ১১টায় ডিউটিরত ছিলেন কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম। রাত পৌনে ১২টার দিকে তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আসামি উত্তেজিত হয়ে মনিরুলকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এসময় পথচারী মো. সাজ্জাদ হোসেনের হাতে একটি ও পেটে দুটি গুলি লাগে। বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। তাই মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আসামিকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে মামলার রহস্য উদঘাটনের সম্ভব রয়েছে।
কনস্টেবল মো. কাওসার আলীর বিরুদ্ধে করা হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৫ জুলাই দিন ধার্য করেছেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাকিল আহাম্মদ মামলার এজাহার গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এ দিন ধার্য করেন। এর আগে শনিবার (৮ জুন) রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর কূটনীতিক এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল হককে খুব কাছ থেকে গুলি করেন আরেক কনস্টেবল মো. কাওসার আলী। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান মনিরুল। মনিরুল কূটনীতিক এলাকায় সিকিউরিটি ডিভিশনে কর্মরত ছিলেন। এ ঘটনায় রোববার গুলশান থানায় মামলা করেন নিহত মনিরুল হকের ভাই মো. মাহবুবুল হক। এতে কনস্টেবল কাওসার আলীকে আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই আব্দুল মান্নাফ জাগো নিউজকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি কিছু বলেননি। তাকে সাতদিনের রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আদালত অনুমতি দিয়েছেন। আশা করছি, রিমান্ডে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। গুলশান থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের এসআই শাহ আলম বলেন, আসামি কাওসারকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে বিচারক সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কাওসারের সহপাঠী বলেন, আমি যতটুকু জানি কাওসারের মাথায় সমস্যা রয়েছে। তার সার্টিফিকেটও রয়েছে। তাকে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হলো, বুঝতে পারছি না।
নিহত মনিরুলের বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলায়। আর কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় আসামি কাওছারের বাড়ি।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মনিরুল ও কাওছার ফিলিস্তিন দূতাবাসের কাউন্টারে দায়িত্ব পালন করছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী একজন ছিলেন কক্ষের ভেতরে। আরেকজন বাইরে। কাওছার চাকরিতে মনিরুলের চেয়ে জ্যেষ্ঠ ছিলেন। তিনি চাইতেন মনিরুল তাঁকে সম্মান করুক। কিছুটা বেশি সময় বাইরে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করুক। কিন্তু মনিরুল সেই কথা শুনতেন না। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে মনিরুলকে গুলি করেন কাওছার।
মনিরুলকে গুলির ঘটনার দৃশ্য ধরা পড়েছে ওই এলাকার একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজে। এতে দেখা গেছে, দূতাবাসের ফুটপাতের রাস্তায় দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করছেন মনিরুল। সেখানে একটি কক্ষ থেকে অস্ত্র হাতে বেরিয়ে মনিরুলকে খুব কাছ থেকে গুলি করেন কাওছার। একপর্যায়ে রাস্তায় পড়ে যান মনিরুল। তখন আরও কাছে এসে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকেন। এর কিছুক্ষণ পর রাস্তায় পড়ে থাকা মনিরুলের অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে কক্ষের দিকে ফিরে যান কাওছার।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কাওছারের সঙ্গে থাকা অস্ত্রটি গুলিভর্তি ছিল। শুরু থেকেই তিনি অস্ত্রটির ‘ট্রিগার’ ধরে ছিলেন। এতে অনেকগুলো গুলি লাগে মনিরুলের বাঁ চোখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে। কাওছারের কাছ থেকে ২০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রিফাত রহমান শামীম প্রথম আলোকে বলেন, কাওছারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
মামলার বাদী মাহাবুবুল হক বলেন, ‘গুলি করে আমার ছোট ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমি আইনগতভাবে দায়ী ব্যক্তির শাস্তি চাই।’