কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে শিকড়ের টানে ঢাকা ছাড়ছে ঘরমুখো মানুষ। সড়ক, রেল ও নৌপথে মানুষের ভিড় বাড়ছে। গতকাল শনিবার ঢাকার বাইরের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের বাড়তি চাপে যানজট ও যান চলাচলে ছিল ধীরগতি। এ ছাড়া বিভিন্ন রুটের সেতুর টোলপ্লাজা ঘিরেও চাপ থাকায় দীর্ঘ জটলা লাগে পরিবহনের। এদিন সকাল থেকেই ঢাকার রেলওয়ে স্টেশন, বাস টার্মিনাল ও লঞ্চ ঘাটে যাত্রীদের চাপ ছিল। বাস টার্মিনালগুলোতে টিকিট সংকট ও বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগও ছিল যাত্রীদের। এসব কারণে ঝক্কি নিয়েই ঢাকা ছাড়তে হয়েছে ঘরমুখো মানুষকে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট
বঙ্গবন্ধু সেতুতে রাতে একাধিকবার টোল আদায় কার্যক্রম বন্ধ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের চাপে ১৪ কিলোমিটার যানজট তৈরি হয়েছে। গতকাল শনিবার ভোর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাশ থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত যানজটের কারণে আটকা পড়েছে শতাধিক গাড়ি। এর আগে শুক্রবার (১৪ জুন) দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতুতে পরিবহনের চাপের কারণে টোল আদায় বন্ধ রাখে সেতু কর্তৃপক্ষ। এতে মহাসড়কের যানজট বেড়ে যায়। যানজটের কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ঈদে ঘরমুখো মানুষ ও চালকদের।
এ বিষয়ে এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মীর মো: সাজেদুর রহমান জানান, যানবাহনের চালকদের বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজট নিরসনে মহাসড়কে পুলিশ কাজ করছে। দ্রুত যান চলাচল স্বাভাবিক হবে।
পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় চাপ, এক্সপ্রেসওয়েতে যানজট
পদ্মা সেতু হওয়ার পর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য সড়ক পথের সবচেয়ে ব্যস্ত রুট এখন ঢাকা-মাওয়া। এক্সপ্রেসওয়ের কারণে যানজটহীন দ্রুতগতিতে যানবাহন ছুটে চললেও সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজায় এদিন গাড়ির দীর্ঘ চাপ ছিল। এতে টোল প্লাজা থেকে শ্রীনগর ছনবাড়ি এলাকা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়েতে অন্তত ৭ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানজট তৈরি হয়। দুপুরের পর যানজট কিছুটা কমলেও বিকাল ৩টায় এক্সপ্রেসওয়ের দোগাছি এলাকায় দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত ঘরমুখী যাত্রীদের গাড়ির জট ছিল। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, এই ঈদে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দক্ষিণমুখী যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বেড়েছে। এ ছাড়া রাতে সেতুর টোল প্লাজার ওজন স্কেলে কয়েকটি ট্রাক অপেক্ষমাণ ছিল। রাতের তুলনায় ভোরে ট্রাকের লেন আরও বড় হয়। ভোর থেকে ট্রাক, গণপরিবহন ও ছোট গাড়ির চাপ বাড়তে থাকে। সেতুর টোল প্লাজায় যানবাহনগুলোকে টোল দিতে অপেক্ষা করতে হয়। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা থেকে যানবাহনের সারি বাড়তে বাড়তে শ্রীনগরের ছনবাড়ি এলাকা পর্যন্ত চলে যায়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেড়েছে চাপ, যান চলাচলে ধীরগতি
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে। গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। বিশেষ করে মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে থেমে থেমে চলছে গাড়িগুলো। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। গতকাল সকালের দিকে গাড়ির চাপ কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বেড়েছে। জুমার নামাজের পর গাড়ির চাপ তীব্র আকার ধারণ করেছে। মহাসড়কের উভয় লেনে একই দৃশ্য দেখা গেছে। কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে শুরু করে পদুয়ার বাজার পর্যন্ত বেশ থেমে থেমে চলছে গাড়িগুলো। বেলা ১১টার দিকে চান্দিনা অংশে বেতন বোনাসের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে গার্মেন্টস শ্রমিকরা। ফলে ১০-১২ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে ঘণ্টা দুয়েক পর অবরোধ তুলে নিলে যানজট কমতে থাকে। দাউদকান্দি হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুল আলম বলেন, জুমার নামাজের পর মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেড়েছে। চান্দিনায় শ্রমিকদের অবরোধের ফলে সৃষ্ট জটলা না থাকলেও গাড়ি ধীরগতিতে চলেছে। হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, যান চলাচল স্বাভাবিক করতে পুলিশের সমন্বিত ইউনিট কাজ করছে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজট
পরিবহনের চাপ বাড়ায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এ সড়কটি দিয়ে সিলেট, ভৈরব, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, গাজীপুরসহ দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল করে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জ অংশের বরাবো, ভুলতাসহ বেশকয়েকটি স্থানে গরুর হাট বসানো হয়েছে। এতে যান চলাচলে বিঘœ ঘটেছে। ঈদযাত্রায় গত কয়েকদিন ধরেই ঢাকা-সিলেট, এশিয়ান বাইপাস ও রূপসী-কাঞ্চন সড়কে দীর্ঘ যানজট ছিল। গতকাল ছুটির দিনে এ দুই মহাসড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটার যানবাহনের ধীরগতি ছিল। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয় ঘরমুখো মানুষকে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান বাইপাস সড়কের রূপগঞ্জের অংশ পার হতেই কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে। হাইওয়ে পুলিশ জানায়, ঈদ যাত্রায় গাড়ির চাপ বেশি থাকায় ধীরগতি হয়েছে। তারপরও যেন নির্বিঘেœ গাড়ি চলাচল করতে পারে তারা সেই চেষ্টা করছে।