মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আখাইকুরা ইউনিয়নস্থিত মিরপুর হোসাইনিয়া আরাবিয়া মাদরাসা ও শারজান বিবি মহিলা মাদরাসার মুহতামিম (প্রধান শিক্ষক) পদে রয়েছেন একই ব্যক্তি। শুধু তাই নয়, হজ্ব মৌসুমসহ বছরের ৬ মাস সৌদি আরবে ব্যবসা করেন মাওঃ আসাদ আল হোসাইন নামের ওই মুহতামিম। এ ধারাবাহিকতায় তিনি বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে- মিরপুর হোসাইনিয়া আরাবিয়া মাদরাসার মুহতামিম থাকা সত্তেও তিনি শারজান বিবি মহিলা মাদরাসার মুহতামিম পদে যোগ দেন। দু’টি মাদরাসারই তিনি বর্তমান মুহতামিম। মিরপুর হোসাইনিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে তিনি বেতন নেননা। কিন্তু, দাতাদের দানকৃত অর্থ নিজের হাতে রেখে এককভাবে তার ইচ্ছামতো ব্যয় করেন এবং উদ্ধৃত্ত টাকা মাদরাসার ব্যাংক হিসাবে জমা না রেখে ব্যক্তিগত ব্যয় নির্বাহ করেন। দাতাদের দেয়া অর্থ, মাদরাসার বিভিন্ন কাজ, ওয়াজ মাহফিল আয়োজন, ব্যয় ভাউচার, সৌদি আরব অবস্থান, ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম নিয়োগ ইত্যাদি কোনকিছুতেই তিনি মাদরাসার ব্যবস্থাপনা পরিষদের অনুমোদন নেননা। তার সুবিধা ও জরুরী প্রয়োজন ছাড়া মাদরাসার ব্যবস্থাপনা পরিষদের কোন সভা হতে দেননা। তার সুবিধা ও জরুরী প্রয়োজনে জরুরীসভা করলেও, মাদরাসার আয়-ব্যয়ের হিসাব দেননা। এভাবে তিনি অনুমানিক ১৫ লাখ টাকা আতœসাৎ করেছেন। আয়-ব্যয়ের হিসাব চাইলেই তিনি তার আতœীয়-স্বজন সহযোগে মারমুখী ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। এ কারণে একাধিকবার দাঙ্গা-হাঙ্গামাও হয়েছে। তার কাছ থেকে মাদরাসার আয়-ব্যয়ের হিসাব আদায়ে ব্যর্থ হয়ে মাদরাসার ব্যবস্থাপনা পরিষদের সাবেক সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) ফখরুজ্জামান মাদরাসা ত্যাগ করে বিপুল সংখ্যক লোকজনকে নিয়ে ওই মদিরাসার পাশেই আল-হেরা মিরপুর-পালপুর মাদরাসা নামে আরেকটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। মুহতামিমের বিরুদ্ধে নন জিআর ২৩/২০২৪ (সদর) মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারীর আদেশ হয়েছে। মৌলভীবাজার ১নং আমল গ্রহণকারী আদালতে ১৬৭/২৪ (সদর) মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। মুহতামিম আসাদ আল হোসাইনের এহেন স্বেচ্ছাচার-অনিয়ম-দূর্ণীতিকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে তিনটি গ্রুপ। এর মধ্যে মাদরাসার ব্যবস্থাপনা পরিষদেই রয়েছে দুটি গ্রুপ। তৃতীয়টি হচ্ছে মুহতামিম ও তার সহযোগী স্বজনদের গ্রুপ। মাদরাসার বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন পরিষদ গঠনকে কেন্দ্র করে এ তিনটি গ্রুপের মধ্যে অনাকাঙ্খিত ঘটনার আশংকা রয়েছে এবং তা ঘটে যেতে পারে যেকোন সময়।
মুহতামিম মাওঃ আসাদ আল হোসাইনের কাছে দীর্ঘদিন যাবৎ মাদরাসার আয়-ব্যয়ের হিসাব না দেয়া, একই সাথে ২টি মাদরাসার মুহতামিম পদে থাকা, বছরের ৬ মাস সৌদি আরবে অবস্থান করা ইত্যাদি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন- আমার বাবা এ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা। আমাকে সরিয়ে দিয়ে ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে কিছু কুচক্রী লোকজন আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ ছড়াচ্ছে। মাদরাসার ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতি মাওঃ আব্দুল মছব্বির, সহ-সভাপতি মসুদ খান ও মাওঃ জুবায়ের আহমদ, সহ-সম্পাদক বিলাল উদ্দিন, অর্থ সম্পাদক আব্দুর রকিব খান, সদস্য আব্দুল কাদির, আব্দুল ওয়াদুদ, আবুল খয়ের, শুরমান মিয়া, খছরুজ্জামান মাস্টার, মুজিবুর রহমান, ছালেহ আহমদ ও মাওঃ আশরাফ ফরাজী ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম (অভিযুক্ত মুহতামিমের নিয়োগকৃত) এর কাছে মুহতামিম মাওঃ আসাদ আল হোসাইনের এসব স্বেচ্ছাচার-অনিয়ম-দূর্ণীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংখ্যাগরিষ্টরাই এর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান- ১৯৫৫ সালের দিকে মোঃ ইউসুফ ও মোঃ ইসরাইলের উদ্দোগে মাওঃ ইলিয়াছ হোসাইনের বাংলোয় এ মাদরাসার সূচনা হয়। মাওঃ মোঃ ইউসুফ হোসাইন (ধন মিয়া/খলিফা সাহেব) ছিলেন প্রতিষ্ঠাকালীন মুহতামিম। পরবর্তীতে শেখ বদরুজ্জামান, নুর মিয়া, লাল মিয়া, আবদুল হাসিম গংরা মাদরাসা ও মসজিদের জন্য ভূমি দান করলে মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মসজিদ নির্মিত হয়। মুহতামিম আসাদ আল হোসাইনের দাবী মিথ্যা ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে তারা মুহতামিমের কাছ থেকে আয়-ব্যয়ের হিসাব ও আতœসাৎকৃত অর্থ উদ্ধারপূর্বক তাকে অপসারনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। মাদরাসার দাতা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ফারুক উদ্দিন ও নোমান আহমদ, যুক্তরাজ্য প্রবাসী আবু শাহজাহান, সোয়াইব মিয়া ও শিব্বির মিয়া একবাক্যে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তারাও মুহতামিমের দাবী মিথ্যা উল্লেখ করে প্রায় একই বক্তব্য দেন এবং এ অবস্থার অবসান ও দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি রক্ষায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।