আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, বর্তমান সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দুর্নীতি। দুর্নীতি আমাদের সব অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বার বার দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলেছেন ও জিরো টলারেন্স ঘোষণা করছেন। কিন্তু এখনো আমরা দুর্নীতি দমন করতে পারেনি। দুর্নীতির অবাধ প্রবাহ থাকলে কখনো বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না, যেটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে এখন। গত মঙ্গলবার (২৫ জুন) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। এসময় সংসদে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
হানিফ বলেন, চাকরিতে নিয়োগের সময় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মীদের হলফনামা দিতে হবে, কিন্তু তারা হলফনামা দেন না। অথচ একজন রাজনীতিবিদকে হলফনামা দিতে হয়। এসময় তিনি প্রতি ৫ বছর অন্তর বা পদন্নোতির সময় হলফনাাম দেবার দাবি জানান। এ নিয়ম চালু করলে তাদের কী পরিমান আয় বা সম্পদ বাড়ছে তা জানা যাবে, দুর্নীতি কমবে।
তিনি বলেন, এবার কুরবানির ঈদে একটি গরু এক কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে। গরুটা কারা কিনলো, কেন কিনলো। যাদের অবৈধ আয় আছে, তারাই নিশ্চয়ই কিনেছে সেটা। আবার ১৫ লাখ টাকায় অবৈধ আয়ধারীরা ছাগলও কিনেছে। এসব অনেকাংশে দুর্নীতির অর্থ।
হানিফ বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন, তখন বলেছিলেন আমরা দুর্নীতি বরদাস্ত করবো না। সরকারি কর্মচারীদের দফায় দফায় বেতন বাড়ানো, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে, তার পরে কেন তারা দুর্নীতি করবেন? অথচ দুর্নীতির কথা উঠলে প্রথমেই আঙ্গুল তোলা হয় রাজনীতিবিদদের দিকে। অথচ একমাত্র মন্ত্রী ছাড়া কোনো সদস্যের নির্বাহী ক্ষমতা নেই, তাহলে তারা কীভাবে দুর্নীতি করবেন?
‘আবার অনেক সময় বড় বড় কর্মকর্তারা বড় ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত থাকলেও, তাদের সামান্য পরিমাণ শাস্তি হয়। অথচ নন ক্যাডার কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে, তাদের সরকারি চাকরিতে আর বহাল থাকতে পারে না। একজন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে মামলা হলে, তাদের গ্রেফতারে কোনো অনুমতি লাগে না। কিন্তু সরকারি কর্মীদের একই অভিযোগে মামলা হয়, তাহলে গ্রেফতার করতে উর্দ্ধতন কর্মকর্তার অনুমতি লাগে। এই সরকারি কর্মকর্তা আইন- ২০১৮ দুর্নীতি করতে উৎসাহিত করছে।’ আইনটি পূর্ণ বিবেচনার দাবি জানান হানিফ।
কালো টাকা সাদা করা প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, এই বিধান দেশে অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। আজকে আমরা দেখলাম, কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাবণা থাকায় বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল সমালোচনা করেছে। তাদের লজ্জা হওয়া উচিত।
‘বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ৩৩ লাখ টাকা দিয়ে কালো টাকা সাদা করেছিলেন। তাদের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান ৩১ লাখ টাকা দিয়ে কালো টাকা সাদা করেছিলেন। যে দলের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় কালো টাকা সাদা করেছিলেন, সে দলের পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে সমালোচনা করা কোনোভাবেই জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।’
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আমরা-আমি বৈধভাবে আয় করলে ট্যাক্স দিতে হবে ৩০ শতাংশ, কিন্তু অপ্রদর্শিত অর্থ মাত্র ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যেটা আমার কাছে কোনোভাবেই যৌক্তিক মনে হয় না। যদি এ সুযোগ দিতেই হয়, তাহলে ৩০ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে কালো টাকা সাদা করার দাবি জানান তিনি। দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সাধারণ গ্রাহকের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম এখন যথেষ্ট পরিমাণ সহনশীল পর্যায়ে আছে। সেসব ব্যক্তিগত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো আছে, সেগুলোর পূর্ণচুক্তি করা হোক। তাহলে বিদ্যুতের দাম অনেকাংশে কমতে বাধ্য।
প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আরও আলোচনায় অংশ নেন সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান, শফিকুল ইসলাম, আনার কলি পুতুল, মতিয়ার রহমান, সানোয়ারা বেগম, সৈয়দ এ কে একরামুজ্জমান, আব্দুল মোত্তালেব, শরিফুল ইসলাম, শামীম শাওনেওয়াজ প্রমুখ।