যুক্তরাজ্যের পর এবার যুক্তরাষ্ট্রের আদালত থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসেঞ্জকে। গুপ্তচরবৃত্তি আইন লঙ্ঘনের জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর বুধবার মার্কিন প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ সাইপানের একটি আদালত তার মুক্তির রায় ঘোষণা করেছে। দোষ স্বীকার করে নেওয়ায় প্রায় ১৪ বছর পর মার্কিন আদালত থেকে তার মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এতে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের আদালত তাকে মুক্তি দিলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা হন। পরে মার্কিন আদালতে তিন ঘণ্টা শুনানির পর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। অ্যাসাঞ্জ যে মার্কিন আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করবেন, এ বিষয়টি গত মঙ্গলবারই নিশ্চিতভাবে জানা গিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তি দিয়েছে মার্কিন ওই আদালত। ওই চুক্তিতে বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁসের যে ফৌজদারি অভিযোগ অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, আদালতে তা স্বীকার করবেন পরে তাকে মুক্তি দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের নথি প্রকাশের জন্য অ্যাসাঞ্জকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল দেশটির আদালত। পরে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলে তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে যুক্তরাজ্যের দূতাবাসে প্রায় সাত বছর অবস্থান করেন। সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বৃটেনের পুলিশ। সেখানে পাঁচ বছর কারাভোগের পর মঙ্গলবার তিনি মুক্তি পান। বৃটেনের আদালতে মুক্তির পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের আদালত থেকেও তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে ইরাকে একটি মার্কিন হেলিকপ্টার গানশিপের আগুনে বেসামরিক নাগরিকদের নিহত হওয়ার ভিডিও-ও তিনি প্রকাশ করেছিলেন। নিহতদের মধ্যে রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ছিলেন। এই সমস্ত কারণেই তিনি আমেরিকার চক্ষুশূল এবং সুইডেন থেকে তাকে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। শেষমেশ লন্ডন পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণও করেন অ্যাসাঞ্জ। কিন্তু জামিন পাওয়ার পরেই উধাও হয়ে যান। দু’বছর আত্মগোপন করে থাকার পরে, অবশেষে ২০১২ সালে ইকুয়েডরের কাছে রাজনৈতিক পুনর্বাসন পান তিনি। পান কূটনৈতিক রক্ষাকবচও। অবশেষে ইকুয়েডরে তার নাগরিকত্বের মেয়াদ ফুরোয় এবং ২০১৯ সালে তাকে গ্রেফতার করে জেলে ভরে বৃটিশ পুলিশ। শুরু হয়, উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতার আমেরিকায় প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া। কিন্তু, লন্ডনের উচ্চ-নিরাপত্তা বেলমার্শ কারাগার থেকেই বৃটেনের আদালতে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করেন জুলিয়ান অ্যাসেঞ্জ। সেই থেকে একটানা ১৪ বছর ধরে টানাপড়েনের পরে আত্মসমর্পণ করে এবার জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ মার্কিন আদালত থেকেও মুক্তি পেলেন। এরপর তার নিজের দেশ অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।