আগামী ২৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত হবে অলিম্পিক গেমস। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই গেমসে সোমবার পর্যন্ত বাংলাদেশের তিন ক্রীড়াবিদ ইমরানুর রহমান, রবিউল ইসলাম টমাস এবং সাগর ইসলামের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে। এদের মধ্যে সাগর সরাসরি কোয়ালিফাই করেছেন কোটা প্লেসের টুর্নামেন্ট তৃতীয় হয়ে। গত মাসে তুরস্কের আন্তালিয়ায় তিনি রিকার্ভ এককে সেমিফাইনালে উঠেই প্রথমবারের মতো অলিম্পিকে খেলার ছাড়পত্র পান। বাকি দু’জন প্যারিস যাচ্ছেন ওয়াইল্ড কার্ড পেয়ে। এদের মধ্যে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ইমারুনের ওয়াইল্ড কার্ডের নিশ্চয়তা এসেছে সোমবার, তিনি ইংল্যান্ড থেকেই ফ্রান্স যাবেন। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) এখন দুই সাঁতারু রাফি, সোনিয়া এবং বক্সার সেলিম হোসেনের ওয়াইল্ড কার্ডের অপেক্ষায়। মঙ্গলবারের মধ্যেই তা নিশ্চিত হবে বলে প্রত্যাশা তাদের। দুই গলফারের জন্য ওয়াইল্ড কার্ড চাওয়া হলেও র্যাংকিংয়ে অবস্থান ভালো না হওয়ায় তাদের সম্ভাবনা কম রয়েছে। প্যারিসে ইমরানুর ১০০ মিটারে, রবিউল ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে এবং সাগর রিকার্ভ এককে লড়বেন।
সাঁতার এবং শ্যুটিংয়ে দু’জন করে ক্রীড়াবিদের ওয়াইল্ড কার্ডের আবেদন করা হয়েছিল। প্রথমে বলা হয়েছিল শ্যুটার শায়রা আরেফিন পাচ্ছেন ওয়াইল্ড কার্ড। পরে তার বদলে রবিউল কার্ড পান। কিন্তু অ্যাথলেটিক্সে কেন শুধু ইমরানুর ওয়াইল্ড কার্ড পাচ্ছেন? কেন কোনো নারী অ্যাথলেট যেতে পারছে না প্যারিসে যেতে। যেখানে ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে আবু আবদুল্লাহ ও নাজমুন্নাহার বিউটি, ২০১৬ রিও অলিম্পিকে মেজবাহ আহমেদ ও শিরিন আক্তার অংশ নেন। ২০০০ সালের সিডনি অলিম্পিকে অ্যাথলেট ছিলেন মাহাবুব আলম ও ফৌজিয়া হুদা জুঁই। ১৯৯৬-এর আটলান্টা অলিম্পিকে বিমল চন্দ্র তরফদার ১০০ মিটারে এবং নিলুফার ইয়াসমিন লং জাম্পে অংশ নেন। ২০০৪ অ্যাথেন্স অলিম্পিকের জন্যই বাংলাদেশের দুই অ্যাথলেট শামসুদ্দিন ও শামসুন্নাহার চুমকীর যাওয়ার কথা ছিল। পরে চুমকির গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ায় তাকে বাদ দেয়া হয়।
বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুর রকির মন্টু জানান, ‘২০২০ (২০২১ সালে অনুষ্ঠিত) টোকিও অলিম্পিক গেমস থেকেই বাংলাদেশের একজন অ্যাথলেটকে ওয়াইল্ড কার্ড দেয়া হচ্ছে। এবারো আমাদের কাছে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) একজন অ্যাথলেটের নাম চায়। তখন আমরা ইমরানুরে নাম পাঠাই।’
মন্টু যোগ করেন, ‘কেন দুই অ্যাথলেটের বদলে একজনকে ওয়াইল্ড কার্ড দিচ্ছে আইওসি তা আমার জানা নেই। তবে আন্তর্জাতিক অ্যামেচার অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন এখন বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের মতো ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়া দেশগুলোকে একজন অ্যাথলেট পাঠানোর খরচই দিচ্ছে। তা করোনার পর বিশ্বব্যাপী আর্থিক দূরবস্থার কারণে। এই আমি বলতে পারি। তবে অলিম্পিকে কেন একজনকে ওয়াইল্ড কার্ড দেয়া হচ্ছে তা জানা নেই।’ ১৯৮৪ সালের লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকে বাংলাদেশের একমাত্র অ্যাথলেট হিসেবে সাইদুর রহমান ডন অংশ নেন। ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে স্প্রিন্টার মোহন খান অ্যাথলেটিক্সে লাল-সবুজদের প্রতিনিধি ছিলেন। টোকিওতে ছিলেন জহির রায়হান। রেকর্ড চার অ্যাথলেট বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে ১৯৮৮ ও ১৯৯২ এর অলিম্পিকে। ১৯৮৮ এর সিউল অলিম্পিকে বাংলাদেশের মিলজার হোসেন ৪০০ ও ৮০০ মিটারে, শাহ আলম ২০০ মিটারে, শাহজালাল মোবিন ১০০ মিটারে এবং এদের সাথে ১০০ মিটার রিলেতে শাহানুদ্দিন চৌধুরী অংশ নেন। ১৯৯২ এর বার্সেলোনা অলিম্পিকে গোলাম আম্বিয়া, শাহানুদ্দিন চৌধুরী, শাহজালাল মোবিন ও মেহেদী হাসান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেবার আম্বিয়া ১০০ মিটারে, শাহানুদ্দিন ২০০ মিটারে এবং মেহেদী হাসান ৪০০ মিটারে দৌড়ান। ৪০০ মিটার রিলেতে এই তিন জনের সঙ্গী ছিলেন শাহজালাল মোবিন।