রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনও বেড়েছে। সেই সঙ্গে নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় স্রোত ও ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এতে দৌলতদিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাট এলাকায় ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে ৬ ও ৭নং ফেরিঘাটের অনেকটা এলাকা পদ্মা নদীতে বিলীন হয়েছে। নদীতে চলে গেছে কয়েকটি বসতবাড়ি ও দোকানপাট। বিআইডব্লিউটিএ প্রাথমিকভাবে কিছু বালুর বস্তা ফেললেও তা অপ্রতুল। এমতাবস্থায় শত শত বসতবাড়ি, ফসলিজমি ও দোকানপাট, স্কুল ও ফেরিঘাটমুখি পাকা সড়ক ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, দৌলতদিয়া ৬ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাটের মাঝামাঝি অংশে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেখানে বসবাসরত পরিবারগুলো তাদের ঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। ৬ নম্বর ঘাট দিয়ে স্থানীয় স্কুলে যাচ্ছে তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুমাইয়া। সুমাইয়া বলে, এখান দিয়ে স্কুলে যাওয়ার সময় অনেক ভয় লাগে। কখন যে নদীতে পড়ে যাই। আমরা ভাঙন রক্ষা চাই। স্থানীয় বাসিন্দা হাবিব শেখ বলেন, আর কত বলবো নদী শাসনের কথা। আমাগের মতো গরিব মানুষের কথা কিডা শোনে? সব যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। সরকার আমাগের দিকে তাকাইলো না। আমরা কিছু চাই না, শুধু নদী শাসন চাই। আমাগের চাল, ডাল কিছুই লাগবো না।
দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল বলেন, ছোট থেকে দেখে আসছি, দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের তিন ভাগের একভাগ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গোয়ালন্দের মানচিত্র থেকে দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের আটটি মৌজা এখন নেই। আমরা বার বার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বললেও কোনও কাজ হয়নি। প্রতিদিন অসহায় মানুষের কান্নাকাটি, আহাজারি, ঘর সরানো এগুলো দেখতে আর ভালো লাগে না। এত বলার পরও নদী শাসন হলো না। এ অসহায় মানুষের দায়ভার কে নেবে? আমি জনগণের পক্ষ থেকে আবারও বলছি, নদী শাসনের যে ব্যবস্থা সেটা যেন অতিসত্বর করা হয়, তাহলে দৌলতদিয়া ঘাট বেঁচে যাবে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, দৌলতদিয়ায় সাতটির মধ্যে ৩, ৪, ৬ ও ৭ নম্বর ঘাট সচল রয়েছে। বাকি ১, ২ ও ৫ নম্বর ঘাট কয়েক বছর ধরে ভাঙনের কারণে বন্ধ রয়েছে। এবার যে ভাঙন শুরু হয়েছে, এতে সবকটি ফেরিঘাট ভাঙন ঝুঁকিতে আছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ভাঙনের খবর শুনে গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৬ নম্বর ঘাটে ছুটে আসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র। এ সময় তিনি ভাঙন স্থানগুলো পরিদর্শন করেন।
ইউএনও বলেন, পদ্মায় পানি বাড়ার কারণেই এত ভাঙন দেখা দিয়েছি। আমি এখনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি। আপাতত ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলতে হবে। তাছাড়া এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে অনেক এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।