শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০২ পূর্বাহ্ন

পিএসসির কোন চেয়ারম্যানের গাড়িচালক ছিলেন আবেদ আলী?

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই, ২০২৪

বিসিএসসহ ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় চরম বিতর্কের মুখে পড়েছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় এরইমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির পাঁচজন কর্মমকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে পিএসসিও। অভিযোগ প্রমাণ হলে তারা স্থায়ী বরখাস্ত হতে পারেন। ফৌজদারি অপরাধ আদালতে প্রমাণ হলে জেল-জরিমানাও গুনতে হতে পারে গ্রেফতারকৃতদের। তবে সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনায় পিএসসির চাকরিচ্যুত গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী ওরফে জীবন। প্রশ্নফাঁস করার কথা নিজেই গণমাধ্যমে স্বীকার করেছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে তার অঢেল সম্পদের তথ্য।
সিআইডি সূত্রও বলছে, ঢাকায় আবেদ আলীর দুটি বহুতল আবাসিক ভবন রয়েছে। নিজ জেলায় করেছেন আলিশান বাড়ি। রয়েছে দামি চারটি গাড়িও। সবমিলিয়ে অন্তত ৫০ কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়েছেন ঢাকায় একসময় কুলি ও চানাচুর বিক্রি করা আবেদ। প্রশ্ন উঠেছে- আবেদ আলী এত অর্থ-সম্পদ পেলেন কোথায়? নিজেকে পিএসসির চেয়ারম্যানের গাড়িচালক পরিচয় দেওয়ায় সবার ধারণা, প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বিপুল অর্থ হাতিয়েছেন তিনি। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—পিএসসির কোন চেয়ারম্যানের গাড়িচালক ছিলেন আলোচিত সৈয়দ আবেদ আলী? পিএসসি সূত্র বলছে, আবেদ আলী বিভিন্ন মেয়াদে পিএসসির তিনজন চেয়ারম্যানের গাড়ি চালিয়েছেন। ড. জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগমের মেয়াদে তিনি চেয়ারম্যানের গাড়িচালক হন। সাবেক চেয়ারম্যান এ টি আহমেদুল হক চৌধুরী ও ড. সা’দত হুসাইনের সময়েও তিনি চেয়ারম্যানের গাড়িচালক ছিলেন। ইকরাম আহমেদ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৈয়দ আবেদ আলী মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের মৃত আবদুর রহমান মীরের ছেলে। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পিএসসিতে গাড়িচালক হিসেবে যোগ দেন তিনি। আবেদ যখন চাকরিতে যোগ দেন, তখন পিএসসির চেয়ারম্যান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম এ ফয়েজ। তারপর পিএসসির চেয়ারম্যান নিয়োগ পান অধ্যাপক ড. মো. মুস্তফা চৌধুরী। ১৯৯৮ সালের ২৫ মার্চ থেকে ২০০২ সালের ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
২০০২ সালের ৯ মে পিএসসির চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক ড. জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগম। ২০০৭ সালের ৭ মে তিনি মেয়াদকাল পূর্ণ করেন। এরপর এ পদে যোগ দেন ড. সা’দত হুসাইন। তারপর পর্যায়ক্রমে পিএসসির চেয়ারম্যান হয়েছেন এ টি আহমেদুল হক চৌধুরী, ইকরাম আহমেদ, ড. মোহাম্মদ সাদিক ও মো. সোহরাব হোসাইন। পিএসসির প্রশাসন শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সৈয়দ আবেদ আলী বেশি আলোচনায় ছিলেন। তিনি সেসময় চেয়ারম্যানের গাড়িচালক ছিলেন। কর্মকর্তাদের ভাষ্য, মোট চার চেয়ারম্যানের গাড়ি চালিয়েছেন আবেদ আলী। তবে ইকরাম আহমেদ দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই অবশ্য তিনি প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ধরা পড়েন ও সাময়িক বরখাস্ত হন। তখন তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
যা বলছেন সাবেক-বর্তমান চেয়ারম্যানরা: পিএসসির প্রশাসন শাখার কর্মকর্তাদের তথ্যের সত্যতা জানতে একে একে পিএসসির চার সাবেক চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। প্রথমেই যোগাযোগ করা হয় যে চেয়ারম্যানের মেয়াদকালে আবেদ আলী নিয়োগ পেয়েছিলেন, সেই অধ্যাপক ড. এস এম এ ফয়েজের সঙ্গে। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ উপাচার্য বলেন, গাড়িচালক পদে কে, কবে নিয়োগ পেয়েছিলেন, সেটা এতদিন পর মনে নেই। বলতেও পারবো না। তবে এ নামের কেউ আমার গাড়িচালক ছিলেন না, এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি।
তবে যার মেয়াদকালে আবেদ আলী চেয়ারম্যানের গাড়িচালক হন, সেই ড. জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তিনি পিএসসির নবম চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগমের পর পিএসসির চেয়ারম্যান হন ড. সা’দত হুসাইন। তিনি মারা গেছেন।।
পিএসসির দশম চেয়ারম্যান সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা এ টি আহমেদুল হক চৌধুরী। খোদ পিএসসি কর্মকর্তারা জানান, তার আমলেও আবেদ আলী চেয়ারম্যানের গাড়ি চালিয়েছেন। তবে আবেদকে ‘চেনেন না’ বলে দাবি করেছেন আহমেদুল হক চৌধুরী। আহমেদুল হক বলেন, আবেদ আলী নামে কেউ আমার সময়ে চেয়ারম্যানের গাড়িচালক ছিলেন না। আমি তার সম্পর্কে কিছুই জানি না, বলতেও পারছি না। তারপর ২০১৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর পিএসসির চেয়ারম্যান নিয়োগ পান ইকরাম আহমেদ। তিনি বলেন, যতদিন আমি পিএসসিতে ছিলাম, তখন আবেদ আলী নামে কেউ আমার গাড়িচালক ছিলেন না। ব্যক্তিগতভাবে আমি আবেদ আলীকে চিনি না। সেসময় প্রশ্নফাঁসের কোনো অভিযোগ ছিল কি না- জানতে চাইলে ইকরাম আহমেদ বলেন, পিএসসিতে আমার সময়ে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। কেউ অভিযোগও তুলতে পারেনি। দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, আমার মেয়াদকালে কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। তবে আবেদ আলীকে ‘চেনেন’ ও তাকে চাকরিচ্যুত করতে ‘অনেক বেগ পোহাতে’ হয়েছিল বলে জানিয়েছেন পিএসসির ১২তম চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক। পিএসসির সাবেক এই চেয়ারম্যান বর্তমানে সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি।
বর্তমানে মোহাম্মদ সাদিক যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যোগদানের পরই আমি আবেদ আলীর নানা অনিয়ম ও প্রভাবের কথা শুনেছিলাম। অনেক কর্মকর্তাও নাকি তার সঙ্গে সখ্য বজায় রেখে চলতেন। আবেদকে অপকর্মের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করার পর, তার অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করার জন্য যে কমিটি হয়েছিল, তাদেরও অনেক বেগ পোহাতে হয়েছিল।
মোহাম্মদ সাদিকের ভাষ্য, ‘ড. জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগম ও এ টি আহমেদুল হক চৌধুরী যখন পিএসসি চেয়ারম্যান ছিলেন, তখন আবেদ পিএসসির চেয়ারম্যানের গাড়িচালক ছিলেন। ইকরাম আহমদ যখন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন, তখন আবেদ ধরা পড়েন ও সাময়িক বরখাস্ত হন। পরে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
এদিকে, পিএসসির বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, তার (আবেদ আলী) ব্যাপারে আমি বলতে পারবো না। তিনি তো অপকর্মে জড়ানোর অনেক আগেই বরখাস্ত হয়েছেন। কার মেয়াদকালে আবেদ আলী চেয়ারম্যানের গাড়িচালক হয়েছিলেন, সেটাও আমার জানা নেই।- জাগো নিউজ




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com